এস.এম.তারেক নেওয়াজ, হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) : কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নীলকুঠির জড়াজীর্ণ দালান-কোটার মাঝে আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। এ নীলকুঠি দেখতে প্রতিদিনই শিক্ষক,শিক্ষার্থী,সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ভীড় বাড়ছে। সরকারী উদ্যোগে এটি সংষ্কার করা হলে ইংরেজদের ঐতিহাসিক নীলকুঠি হতে পারে এ দেশে পর্যটকদের দর্শনীয় স্থানের একটি।বাড়তে পারে এ খাতে সরকারী রাজস্ব আয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, ব্রিটিশ নীলকর ওয়াইজ স্টিফেন্স ১৭৩০-১৭৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধিনে হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী চৌদার গ্রামে নীলকরদের কার্য্যালয় হিসেবে ব্যাবহারের জন্য সে সময় নীলকুঠি স্থাপন করেন। এ অঞ্চলে প্রাচিন ঢাকার আরমানিটোলার ইংরেজ আর্মোনিয়ান আরাতুনের দুই কন্যার তদারকিতে হোসেনপুরে নীলের আবাদ ব্যাপক ভাবে শুরু করেন। তৎকালিন সময়ে এ অঞ্চলে বাধ্যতামূলক ভাবে কৃষকদের ওপর নীল চাষ চাপিয়ে দেওয়া হতো ।তাদের এ নীলকর ব্যাবসায় সহায়তা করতেন ফ্রান্সের অদিবাসী মাইকেল প্যাটেল ও জমিদার এলেন বেথ হেনসন ।
জনশ্রæতি রয়েছে,সে সময়ে হোসেনপুরের উৎপাদিত নীলের গুণাগুন ভাল থাকায় ইংল্যান্ডের বিভিন্ন নামি-দামী কোম্পানীতে এসব নীল রপ্তানি করা হতো বিধায় হোসেনপুরে ব্রিটিশদের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা দৃষ্টিনন্দন নৌযানযোগে ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে নীল চাষ পরিদর্শনে আসতেন। এখানে প্রথম দিকে ইংরেজরা নীল চাষে লাভবান হলেও সময়ের পালাক্রমে নীলকর ব্যবস্যায় ধস নামতে শুরু করলে পরবর্তীতে তারা এ ব্যবসা গুটিয়ে অন্যত্র পাড়ি জমান। এরই ধারাবাহিকতায় ঐতিহাসিক এ নীলকুঠি দেখভালের দায়িত্ব পান স্থানীয় বাসিন্দা মরহুম উমেদ আলী।
ঐতিহাসিক নীলকুঠি দেখতে খুবই সুন্দর। বর্তমানে এটি আমেনা মঞ্জিল নামে পরিচিত। নীলকুঠির পূর্ব দিকে সে আমলের একটি বিশাল পুকুর রয়েছে। শুকনা মৌসুমে পানি সংকট নিরসন ও নীল চাষের সুবিধার্থে ওই বিশাল পুকুরটি খনন করা হয়েছিল। যা আজও এ অঞ্চলের মানুষ দৈনন্দিন কাজে ব্যাবহার করে উপকৃত হচ্ছে। হোসেনপুর উপজেলার সিদলা, পিতলগঞ্জ, হারেঞ্জা, চৌদার, রানীখামার, সাহেবেরচর সহ আশপাশের এলাকার মানুষের কাছে আজও ইংরেজ পাদ্রীসহ অন্যান্য খ্রিষ্টান নীলকরদের কিংবদন্তি কাহিনী কালের সাক্ষী হয়ে আছে। তাই স্থানীয় ইতিহাস গবেষকসহ সংশ্লিষ্টরা ঐতিহাসিক নীলকুঠি সংষ্কার করে এ অঞ্চলে একটি আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটন নগরী গড়ে তোলার দাবি জানান।