চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : ঢাকার বাসাবাড়িতে আটকে রেখে শিশু গৃহপরিচাকাকে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগে চুয়াডাঙ্গার ডা. রত্না ও স্বামী প্রকৌশলী রেজাউলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নৈশকোচ যোগে ঢাকায় সটকে পড়ার আগমুহূর্তে চুয়াডাঙ্গা থেকে সদর থানা পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে। ১১ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার রত্না ও রেজাউলকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার প্রফেসর শমসের আলীর মেয়ে ডা. জান্নাতুল বাকী জান্নাত রত্না ঢাকার ধানমন্ডিতে ভাড়ার বাসায় বসবাস করেন। বছরখানেক আগে তার শিশুসন্তানকে দেখভালের জন্য গৃহপরিচারিকা খোঁজ করেন। সেই সময় চুয়াডাঙ্গা বিএডিসির শ্রমিক শহিদুল ইসলামের মেয়ে আসমাউল হুসনার (৯) সন্ধান পান। সেই সুবাদে দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে সুখের কথা বলে শিশু আসমাউল হুসনাকে ঢাকায় নিয়ে যান ডা. রত্না। রাজধানীর পশ্চিম ধানমন্ডির ই/১৪ নং রোডের ৭-৩ ফ্লাটের ৪/বি বাসায় কদিন যেতে না যেতেই আসমাউল হুসনার ওপর শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। কারণে অকারণে মারধরের পাশাপাশি খামচে রক্তাক্ত করা হতো তাকে। শরীরে ছ্যাঁকা দেয়া হতো গরম খুন্তি বা চামচের। এরই মধ্যে প্রায় এক বছর কেটে যায়। কিন্তু মেয়ের সাথে কোনো রকম যোগাযোগ করতে পারেন না আসমাউল হুসনার পিতা-মাতা। এরই মধ্যে সে অসুস্থ হয়ে মানুষিক ভারসাম্য হারানোর উপক্রম হয়। এ পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে তাকে চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে তার পিতা-মাতার হাতে তুলে দেয়া হয়। কিন্তু মেয়ের চেহারা আর সারা শরীরজুড়ে নির্যাতনের চিহ্ন দেখে হতবাক হয়ে যান তারা। সকালে নির্যাতনের খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। আসমাউল হুসনাদের বাসায় ভিড় জমান সাংবাদিকসহ অনেকেই। পরে সেখানে চুয়াডাঙ্গার মানবাধিকার সংস্থার কর্মীরা উপস্থিত হন। নির্যাতিত শিশু আসমাউল হুসনাকে নিয়ে থানায় নিয়ে মামলার প্রক্রিয়া করেন তারা। পরে আসমাউল হুসনার মা শিল্পী বেগম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। শিশু গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের ঘটনা সচেতন মহলে চাউর হলে ডা. রত্নার পিতা শমসের আলীকে আটক করে পুলিশ। এ খবর শুনে ডা. রত্না বুধবার রাতে পিতাকে ছাড়াতে থানায় আসেন। এ সময় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিছুক্ষণ পর চুয়াডাঙ্গার একটি নৈশকোচ কাউন্টার থেকে গ্রেফতার করা হয় ডা. রত্নার স্বামী ফ্লোরা লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিমকে।
শিশু আসমাউল হুসনা ওরফে আসমা তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে জানায়, সকালে দুটো রুটি দিয়ে বাসায় বন্দী রেখে ডা. রত্না ও স্বামী রেজাউল বাইরে চলে যেতেন। ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যেতো। খিদে সহ্য করতে না পেরে নিজে হাতে একটু ভাত বেড়ে খেতো আসমাউল হুসনা। এ কারণে চুরির অপবাদ দিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হতো তাকে। ডা. রত্না রেগে গিয়ে কোনো কোনো সময় খুন্তি গরম করে গায়ে ঠেসে ধরতেন। কোনো কোনো দিন দিতেন গরম চামচের ছ্যাঁকা। চিমটিয়ে খামচিয়ে সারা গা রক্তাক্ত করে দিয়েছেন কখনো কখনো। কাজ করে করে ক্লান্ত শিশু আসমা অসময়ে ঘুমিয়ে পড়লে তার চোখে আঙুল দিয়ে খোঁচা মারতেন ডা. রতœা। বাড়িতে মা-বাবার সাথে কথা বলতে দেয়া হতো না তার। এমনকি তাদের সাথে কোনো রকম যোগাযোগ করতে দেয়া হতো না। সর্বশেষ দিন পনের আগে ভাত চুরি করে খাওয়ার অপবাদ দিয়ে রুটি ছ্যাঁকা তপ্ত পাত্র আসমার নিতস্ব^দেশের (পাছা) দু পাশে ঠেসে ধরেন ডা. রত্না। এতে ঝলসে চামড়া উঠে যায়। তার চিৎকার বা আর্তনাদ চার দেয়ালের বাইরে যায় না। তবে দিনদিন অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে সে। অবস্থা বেগতিক বুঝে আসমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন ডা. রত্না। শেষমেশ গত মঙ্গলবার আসমাকে চুয়াডাঙ্গায় ফিরিয়ে এনে স্বামীসহ গ্রেফতার হলেন ডা. রত্না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শিশু আসমার শরীরের ক্ষত না দেখলে বিশ্বাস করানো যাবে না, ডা. রত্না কী নির্মম নির্যাতন করেছেন। এ বীভৎস নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন দেখলে যে কারো চোখে পানি আসবে।