মোহাম্মদ জুবায়ের রহমান : আজ পহেলা ফাল্গুন; বসন্তের প্রথম দিন। পলাশ-শিমুল-কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে আগুনঝরা উচ্ছলতা। বনের নিভৃত কোণে, মেঠোপথের ধারে কারও দেখার অপেক্ষা না করেই ফুটেছে আরও কত নাম না-জানা ফুল। যৌবনের মৌ বনে তারুণ্যের গহীনে আবেগের ব্যকুলতা ছড়িয়ে প্রতিবছর বসন্ত আসে ভালোবাসার ডাক দিয়ে যায় কোকিলের মিষ্টি মধুর কুহুতানে। এবারের বসন্তে শিমুল-পলাশ-কৃষ্ণচূড়া ফুটবে ঠিকই, কোকিলের কুহুতানেও মুখরিত হবে নিসর্গ প্রকৃতির সবুজ অঙ্গন। প্রকৃতিতে বসন্তের রঙ লেগেছে, হাওয়ায় দুলছে তারুণ্য উদ্দিপ্ত মন। দিনপঞ্জির হিসাবে তার অভিষেক শুভ প্রভাতের নতুন সূর্যের আলোকছটায়।
‘বসন্ত’ মানেই ফুলের স্ফুরণ। চোখ-ধাঁধানো ফুলের সমাহার। ফুলের সৌন্দর্য দেখে রবীন্দ্রনাথ গেয়েছিলেন- ‘আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে…’। শুধু কি তাই, নজরুলও অশোক-কিংশুকে বিমোহিত হয়ে লিখেছিলেন- ‘এল খুলমাখা তূণ নিয়ে/খুনেরা ফাগুন…’।
নাগরিকরাও কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলছে ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত। তাইতো পুরো শহরকেই যেন ফুলে ফুলে ভরে তুলেছে নগরবাসী। কে বলবে দেখে এখন পাওয়া না পাওয়ার অনেক ধন্দে কাটে আমাদের দিনগুলি। হ্যাঁ, আজ সেই সব হিসেব নিকেশ বন্ধ করে বসন্ত বাতাসে গা ভাসিয়ে দিয়েছে নগর।
আগুনরাঙা এই ফাল্গুনে অশোক-পলাশ-শিমুলই রঙ ছড়ায় না, ছড়ায় ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের শহীদদের রক্ত-রঙিন স্মৃতির ওপরও। বায়ান্নর ৮ ফাল্গুনের তথা একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ার মিলেমিশে একাকার। তাই ফাগুন এলেই আগুন জ্বলে মনে; ফাগুন এলেই কোকিল ডাকে বনে। যখন বসন্ত জাগ্রত দ্বারে; তখন অশোক, রক্তকাঞ্চন, কনকলতা আর পলাশ-শিমুলের রঙ ছড়ানো দিনে কোকিলের ডাক উদাস করে দেয় আবেগবিহ্বল বাঙালির হৃদয়। ফুলের মঞ্জরিতে মালা গাঁথার দিন বসন্ত কেবল প্রকৃতিকেই রঙিন করেনি, রঙিন করেছে আবহমানকাল ধরে বাঙালি তরুণ-তরুণীর প্রাণও। তাই আজও মেয়েরা খোঁপায় গাঁদা-পলাশসহ নানা রকম ফুলের মালা গুঁজে বাসন্তী রঙ শাড়ি পরে আর ছেলেরা পাঞ্জাবি-পাজামা ও ফতুয়ায় শাশ্বত বাঙালি সাজের উৎসবের হাওয়ায় ভেসে বেড়াবেন শাহবাগ, চারুকলা, টিএসসি, অমর একুশে গ্রন্থমেলাসহ নগরীর এখান থেকে ওখানে- কোথাও হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা।
ফাল্গুনের প্রথম দিনে পুরো ঢাকা শহর সাজে ফাগুন সাজে। হলুদ, কমলা ও বাসন্তী রঙের ছোঁয়া সবার মধ্যে। যে যার মতো করে এই দিন ঘুরতে বের হন। তারুণ্যের ঢেউ জাগে বসন্তের অঙ্গনে। তরুণ তরুণীরা সাজবে বসন্তের সাজ। তরুণীরা বাসন্তী রংয়ের শাড়ি আর তরুণরা পরবে বাসন্তি রঙয়ের পাঞ্জাবী। নগরজুড়েও থাকে নানা আয়োজন। প্রতিবছরের মতো এ বছরও বসন্তকে বরণ করা হবে নানা আয়োজনে।
উনিশ বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও রাজধানীতে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষদ। জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষদের উদ্যাগে, পয়লা ফাগুনে সকাল সাতটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় যন্ত্রসংগীতের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে বসন্ত উৎসব। সকাল সাড়ে নয়টায় একটি শোভাযাত্রার পর শেষ হবে সকালের আয়োজন। দিনভর চলবে আড্ডা। বিকেল চারুকলার বকুলতলা, ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর ও বাহাদুর শাহপার্কে একযোগে চলবে অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে দলীয় সংগীত, আবৃত্তি ছাড়াও আদিবাসী শিল্পীদের বিশেষ পরিবেশনা থাকছে। বুলবুল ললিতকলা একাডেমিসহ (বাফা) বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন সকাল থেকেই আলাদা আয়োজনে মেতে উঠবে বসন্ত বরণে। এছাড়া শাহবাগ, টিএসসিতেও থাকছে নানা আয়োজন।