ইমরান হোসাইন, তানোর (রাজশাহী) : ১৯৯১ সালের মাঝামাঝি সময়ের কথা। পারিবারিক অর্থ অনটনের অভাবে উচ্চতর ডিগ্রির আশা থাকলেও অষ্টম শ্রেণী পাসের পর আর পড়াশুনা হয়নি। একেবারে উপায়হীন হয়ে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক তানোর সদর শাখায় মাষ্টারোল (অনিয়মত) হিসেবে ঝাড়–দার পদে চাকরি নেন। ওই সময়ে প্রতিদিন ৯০ টাকা হারে তিনি চাকুরি করতেন। পরে বৃদ্ধি পেয়ে ১৩৫ টাকা হিসাবে প্রতিদিন মাইনে পান তিনি। দীর্ঘ ২৪ বছর পরও তার বেতন-ভাতা আর বাড়েনি এমনকি সেই মাষ্টারোলের চাকুরি স্থায়ীও হয়নি। হ্যাঁ এই রকমই এক মাষ্টারোলের কর্মচারী নাজিমুদ্দিন বাবু। তার বাড়ি তানোর পৌর সদরের তানোর কুঠিপাড়া গ্রামে। এই ব্যক্তি দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক তানোর সদর শাখায় মাষ্টারোলের চাকুরি করে চলেছেন। প্রায় ৪৫ বছর বয়স্ক এই ব্যক্তি এখনো জানেন না তিনি কবে নাগাদ তার কর্মস্থলে স্থায়ী হবেন। তবে, স্থায়ী চাকুরির আশায় তিনি এখনো বুক বেঁধে আছেন। বর্তমানে স্ত্রী ও দুই পুত্রসহ বৃদ্ধ বাবা মাকে নিয়ে এই অল্প বেতনে অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তিনি।
![Shamol Bangla Ads](https://shamolbangla24.com/wp-content/uploads/2024/01/Ad-1-scaled.jpg)
নাজিমুদ্দিন বাবু জানান, তাঁর জীবনে উচ্চ শিক্ষার আগ্রহ থাকলেও পারিবারিক অর্থের অভাবে তিনি আষ্টম শ্রেণীর বেশি পড়াশুনা করতে পারেননি। ১৯৯১ সালে তানোর সদর কৃষি ব্যাংকে ঝাড়–দার পদে তিনি মাষ্টাররোলে (অনিয়মিত) হিসেবে চাকরি শুরু করেন। সেই সময় ব্যাংক ম্যানেজার থেকে সকলেই আশ্বাস দিয়েছিল তার চাকুরিটি স্থায়ী হবে। আর ওই আশ্বাসে বিভর হয়ে সেই সময় থেকে তিনি সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রতিদিন ১৩৫ টাকা মজুরি নিয়ে মাষ্টাররোলে (অনিয়মিত) চাকুরি করছেন। তার চাকুরির শুরু থেকে মাসের পর মাস আর বছরের পর বছর পেরিয়ে দুই যুগ অতিবাহিত হলেও তার চাকুরি আর স্থায়ী হয়নি। এইভাবে অপেক্ষা করতে করতে তার ২৪টি বছর কেটে গেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার সেই চাকুরি স্থায়ী হয়নি।
বর্তমানে নাজিমুদ্দিন বাবু’র দুই ছেলে। অর্থের অভাবে বড় ছেলে জনিকে পড়ালেখা করাতে পারেননি। ছোট ছেলে রনি তানোর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণীতে পড়ালেখা করছে। বাবু’র এসব ছেলের পাশাপাশি তার বৃদ্ধ বাবা-মা ও স্ত্রীসহ ৬ সদস্যের পরিবারে একমাত্র আয়ের উৎস বাবু নিজে। তার একার পক্ষে এত বড় সংসার চালানো এখন অভিশাপ ছাড়া তার পরিবারের কাছে আর কিছু নয়। ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিদিন ১৩৫ টাকা পেলেও সেই সময় সংসার চলে যেত কিন্তু এখন এই আধুনিক বাজারে ১৩৫ টাকা দিয়ে আর কুলায় না। ৬ সদস্যের পরিবারে এখন অভাব তার নিত্যদিনের সঙ্গি। ছেলের পড়াশুনা, ভরন পোষণ যোগাতে প্রতিদিনের ১৩৫ টাকা আয়ে আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না নাজিমুদ্দিন বাবু।
পরিশেষে বাবু এ প্রতিবেদককে জানান, তার চাকুরি স্থায়ীর জন্য ২৪ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন। আর কত অপেক্ষা করবেন। বর্তমানে এই সময়ে তিনি খুবই অভাব অনটনের মধ্যে রয়েছেন। চাকুরিটি স্থায়ী হলে তার পরিবারে কিছুটা হলেও অভাব অনটন ঘুচাতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, তার ছেলে পড়াশুনা করে। তার খরচ চালানো এছাড়া খাওয়া দাওয়া, পোশাক সব মিলিয়ে এক অমানবিক জীবন-যাপন করছেন তিনি। পরিশেষে তিনি এসব অভাব অনাটন থেকে রক্ষা পেতে বাবু তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট চাকুরি স্থায়ী করণের জোর দাবি জানিয়েছেন।
![](https://shamolbangla24.com/wp-content/uploads/2023/11/final01.gif)