অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) : বরিশালের বিভিন্ন উপজেলায় বইছে এখন নির্বাচনী হাওয়া। তৃতীয় দফা ঘোষিত তফসিলেও জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার নাম ঘোষণা না হলেও ঘনিয়ে আসা নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী, স্বদলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের আগ্রহ আর উচ্ছাসের কমতি নেই আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে। উপজেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের চায়ের দোকানও বাদ পড়ছেনা নির্বাচনী আলোচনা থেকে। আলোচনা আরও সরগরম হয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ গত দশদিন যাবৎ তার নিজ এলাকা আগৈলঝাড়ায় অবস্থান করার কারণে। কে কে হচ্ছেন প্রার্থী, কাকে দেয়া হবে দলীয় সমর্থন- এ নিয়ে প্রার্থীদের চেয়ে আগ্রহের কোন কমতি নেই সাধারণ ভোটারদের। দলের অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এলাকায় অবস্থান করায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর এখন আগৈলঝাড়াসহ আশেপাশের এলাকা। তৃতীয় দফায় ঘোষিত তফসিলেও আগৈলঝাড়া উপজেলার নাম না থাকায় প্রার্থীদের অনেককেই হা-পিত্যেষ করতে দেখা গেছে। ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পাশাপাশি নির্বাচনী মাঠ ও দলের একক টিকিট নিতে ব্যস্ত রয়েছে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের একমাত্র অভিভাবক হাসানাতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাকে সন্তুষ্ট করতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। এজন্য হাসানাত আবদুল্লাহর স্নেহধন্য ও আস্থাভাজন ব্যক্তিদের বেছে নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীর পক্ষে দলীয় টিকিট নিশ্চিত করার জন্য লবিস্টও নিয়োগ করেছেন একাধিক প্রার্থী। আবার অনেকেই নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে একাধিক ব্যক্তিকে ‘ড্যামি প্রার্থী’ বানিয়েছেন বলেও দলীয়সূত্রে জানা গেছে। নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীতা ঘোষণা করে অধিকাংশ মনোনয়নেচ্ছু ব্যক্তি বলেছেন- ‘দল সমর্থন দিলে নির্বাচন করব, অন্যথায় না।’ আবার ত্যাগী অনেক নেতা বলছেন, দল যদি জনবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত কোন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয় তাহলে তার প্রতিপক্ষ প্রার্থী হিসেবেও একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন।
আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতার কথা জানিয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তুজা খান, আওয়ামীলীগ নেতা ও গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থী রুস্তম সেরনিয়াবাত, গৈলা ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান ও দলের সাবেক আহবায়ক সদস্য মো. গিয়াস খান, দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা আ. রইচ সেরনিয়াবাত, আওয়ামী আইনজীবি পরিষদ সুপ্রিম কোর্ট শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদের সদস্য ও আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এ্যাড. রনজিৎ সমদ্দার, দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক, আগৈলঝাড়া ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমীর প্রধান শিক্ষক, বাকাল ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান যতীন্দ্র নাথ মিস্ত্রী, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক জসীম সরদার, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি কামরুজ্জামান সেরনিয়াবাত আজাদ, ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সোয়েব ইমতিয়াজ লিমন।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতার কথা জানিয়েছেন ছাত্রলীগের যুগ্ন সম্পাদক শহীদ পাইক, সাংগঠনিক সম্পাদক অনিমেষ মন্ডলসহ আরও অনেকে। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতার কথা জানিয়েছেন আওয়ামীলীগ নেত্রী ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান শেফালী রানী সরকার, উপজেলা মহিলা আ’লীগ আহবায়ক ও সাবেক ইউপি সদস্যা পিয়ারা ফারুক বক্তিয়ারসহ কয়েকজন। তবে তাদের পাশ কাটিয়ে অন্য কেউ দলীয় সমর্থন পেতেও পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (এরশাদ) সূত্রে জানা গেছে, দল থেকে উপজেলা নির্বাচনে পর্ণ প্যানেলে প্রার্থীতা প্রদান করা হবে। সে ক্ষেত্রে একক প্রার্থী নির্ধারণের জন্য আলোচনাও চলছে। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন দলের উপজেলা সভাপতি সিরাজুল হক মিয়া ও সম্পাদক সরদার হারুন রানা। ভাইস চেয়ারম্যান পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- উপজেলা সহ-সভাপতি কেএম শামসুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল কবিরাজ। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা জাহানারা বেগম।
বিএনপি থেকে প্রার্থীতার কথা জানিয়েছেন উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ও রাজিহার ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান এসএম আফজাল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও গৈলা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন লাল্টু। ভাইস চেয়ারম্যান পদে নাম শোনা যাচ্ছে গত নির্বাচনে বিজিত প্রার্থী জাসাস কেন্দ্রীয় যুগ্ন সম্পাদক চিত্রশিল্পী এফএম আনিস, মহিলা নেত্রী জাহেদা বেগমসহ আরও অনেকের।
আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের অভিমত, দলীয় একক প্রার্থী নির্ধারণে দলের নীতি নির্ধারকদের ভুল সিদ্ধান্তে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মত বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হতে পারে। পাশাপাশি প্রতিপক্ষ বিএনপি’র প্রার্থীদের কাছে পরাজয় বরণও অসম্ভব নয়।