আজহারুল হক, গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) : রাস্তার উপর চকচকে সাদা টয়োটা গাড়ি থেকে হাত বাড়িয়ে নাম ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বারসহ একটি কাগজ ধরে খোঁজ করছিল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে। ৯ ফেব্রুয়ারী রবিবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে তারা গফরগাঁওয়ে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর অভিজাত এলাকার বাসিন্ধা ও নামজাদা স্কুলের শিক্ষার্থী হয়েও তারা পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে গফরগাঁও উপজেলা থেকে। ফি বছর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরের শিক্ষার্থীদের মফস্বল কেন্দ্র থেকে নকল সূবিধাসহ পাশের নিশ্চয়তা দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ফরম ফিলাপ করিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে ২০১১ সালের ৩ ফেব্র“য়ারী একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় সংবাদ প্রকাশিত হলে বোর্ডসহ প্রশাসন নড়ে চড়ে বসে। এক বছর বাদ দিয়ে ২০১২ সালে আবার এসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপ করিয়ে পরীক্ষার সুযোগ করে দিয়ে রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মারুফ আহমেদ কামিয়ে নিলেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এ বছর আবারো তিনি ১০১ জন পরীক্ষার্থীর ফরম ফিলাপ করিয়ে কামিয়ে নেন প্রায় অর্ধকোটি টাকা। কিন্তু গতকাল রোববার থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা ৯৭ পরীক্ষার্থী প্রবেশ পত্র পায়নি। রাজধানী ঢাকার শাহাদাত পুরের নিটেল এঞ্জেল স্কুলের ছাত্র সাগর মাহমুদ, রিয়াজ আহমেদ, আরিফ, আপন, ইলিয়াস সরকার প্রান্ত, জুবায়ের আল কাদরি, মুগদা ষ্ট্যান্ডার্ড কিন্ডার গার্টেন স্কুলের সানোয়ার হোসেন, ইব্রাহিম খলিল, আশরাফুল ইসলাম, মুগদার ষ্ট্যান্ডার্ড টিউটোরিয়াল স্কুলের আখি আকতার, রানী, মুক্তাসহ পরীক্ষার্থীরা জানান, রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ঢাকা বোর্ডের জনৈক কর্মচারীর মাধ্যমে ফরম ফিলাপ করে আমরা ৯৭ জন এসএসসি পরীক্ষা দিতে গফরগাঁওয়ে এসেছি। কোন বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন জানতে চাইলে এসব পরীক্ষার্থীরা জানায়, আমরা জানিনা কোন বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিচ্ছি। তবে মারুফ স্যার বলতে পারবেন। পরীক্ষার্থীরা জানায়, ফরম ফিলাপ বাবদ মারুফ স্যার ২৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। আমরা কোন বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নেব জানতে চাইলে মারুফ স্যার বলেন, তোমাদের পরীক্ষা কেন্দ্র ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যায় আর কোন বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিবে তা পরীক্ষার আগের দিন সকালে তোমাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হবে। পৌর এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে আবাসিক বাসিন্ধা হয়েছে বাইরের এই ৯৭ জন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকগণ। গতকাল রোববার পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরেও প্রবেশ পত্র না পেয়ে এসব পরীক্ষার্থীরা প্রথমে থানা ঘেরাও করে। পরে পৌর এলাকায় মিছিল করে। প্রধান শিক্ষক মারুফের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এসব পরীক্ষার্থীর অনেককেই কান্নাকাটি করতে দেখা গেছে। পৌর শহরের ষোলহাসিয়ার একটি আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছেন এসএসসি পরীক্ষার্থী অথৈ, আখি, মিতু ও আকলিমা জানান, কোন বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছি তা জেনে কি হবে। পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে অথচ এখনো পর্যন্ত প্রবেশ পত্র পায়নি। এদিকে স্যারের মোবাইল ফোনও বন্ধ। এ বিষয়ে রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য জানা যায়নি। গফরগাঁও ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব নূরুল ইসলমা শিকদার বলেন, বিষয়টি অবশ্যই অনৈতিক। অভিযুক্ত বিদ্যালয় গুলোর ব্যাপারে আরো কঠোর হওয়া প্রয়োজন।