কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : শিল্পপতি জাকির হোসেন সরকারকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা না করার লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছেন উপজেলার বিএনপি নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারন ভোটাররা। উপজেলা নির্বাচনে কুষ্টিয়া সদর থেকে বিএনপির একক সমর্থন পেয়ে আনারস প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন তিনি। বছরের ৩৫০ দিন ঢাকায় অবস্থান করা জাকির সরকারকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে এলাকার লোকজন তাকে কতটা কাছে পাবে সেটা এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে সবার মাঝে। এ অবস্থায় বিএনপির একক প্রার্থী হওয়া জাকির হোসেন শেষতক তার চেয়ারম্যান হওয়ার মিশনে কতটা সফল হবেন তা এখন দেখার বিষয়।

কুষ্টিয়ায় বিএনপির রাজনীতিতে নানা বিতর্কের জন্ম দেয়া শিল্পপতি জাকির সরকারকে নিয়ে এখন বেকায়দায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। কয়েক মাস আগে কুষ্টিয়ায় পা রাখা সদর থানা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক জাকির হোসেন সরকার ইতিমধ্যে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। এমপি হওয়ার মিশন নিয়ে কুষ্টিয়ায় আসলেও উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন তিনি।
অধ্যক্ষ সোহরাব বিরোধী হিসেবে পরিচিত জাকির সরকার কুষ্টিয়ায় বিএনপির রাজনীতি করলেও চলাফেরা ভিন্ন মেরুতে। মিছিল মিটিংয়ে বিভিন্ন সোহরাব সমর্থকদের সঙ্গে তার হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে। প্রথম দিকে সোহরাব উদ্দিনকে এক প্রকার চ্যালেঞ্জ করেই সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন তোলেন জাকির সরকার। তবে জাকিরকে ঠেকাতে ভিতরে ভিতরে সোহরাব উদ্দিন চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে সদর থানা যুবদলের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বিপ্লবকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেন। মনোনয়ন তোলেন বিপ্লব। আর জামায়াতের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বর্তমান চেয়ারম্যান মোশাররফ হুসাইন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার ব্যাপারে অনড় থাকেন। তিন জনই চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের মাঠে আছেন।

সদর থানা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন ছাড়া প্রায় নেতাই জাকির বিরোধী হিসেবে পরিচিত। সোহরাব বিরোধী হওয়ায় এসব নেতারা জাকিরকে পছন্দ করেন না। জাকির মনোনয়ন তোলার পর তাকে একক প্রার্থী করার জন্য জেলা ও শহর বিএনপির কয়েকজন নেতার চাপ ছিল। শেষ পর্যন্ত নিরুƒপায় সদর থানা বিএনপির সভাপতি সদরের সাবেক এমপি অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন তার বাসায় বসে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করেন। তার আগে গোপন ভোট হয় প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য। জাকির হোসেন বেশি সমর্থন পান। তবে এর পিছনে ছিল টাকা। শহর বিএনপির সাধারন সম্পাদক কুতুবের মাধ্যমে টাকা দিয়ে নেতাদের ম্যানেজ করার অভিযোগ উঠে জাকিরের বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম বিপ্লবসহ যুবদলের অনেক নেতাই টাকা ছড়ানোর অভিযোগ আনেন তাদের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে নির্বাচনে মাঠে নেমে পড়েছেন জাকির সরকার। তবে নির্বাচনে তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করার ব্যাপারে বিএনপির বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর অনীহা রয়েছে। এছাড়া সাধারন মানুষের নিকট অনেকটাই অচেনা জাকির।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, জাকির হোসেন সরকারকে সবাই শিল্পপতি হিসেবে চেনেন। বিএনপির কমিটিতে পদ থাকলেও মাঠে-ময়দানে থাকেন না। বছরের ৩৫০ দিন তিনি ঢাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। শুনেছি জাকিরের দেশ ছাড়াও দেশের বাইরে ব্যবসা রয়েছে। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে জনগনের জন্য সময় দিতে পারবেন বলে মনে হয় না।
জাকির সরকার ‘ সরকার ষ্টিল লিমিটেড’ এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর। ঢাকায় তার কর্পোরেট অফিস। বছরের বেশির ভাগ সময় তিনি ঢাকা ও দেশের বাইরে থাকেন। মাঝে মধ্যে পারিবারিক কাজে কুষ্টিয়া আসেন তিনি।
সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী এলাকার ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলেন, জাকির সরকার নামে একজন বিএনপির প্রার্থী হয়েছি বলে শুনেছি। তবে চেহারা দেখিনি কখনো। তাকে ভোট দিয়ে আমাদের লাভ কোথায়? ওই ব্যবসায়ী বলেন, জাকির না-কি কোটিপতি ব্যবসায়ী। ঢাকায় থাকেন। ভোটে জয়লাভের পর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
কুষ্টিয়া শহরের দুই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, সব সময় কুষ্টিয়াবাসীর পাশে থাকবেন এমন একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী আমাদের দরকার। যাকে ভোট দেয়ার পর আর খূঁজে পাওয়া যাবে না তাকে জয়ী করে লাভ কি? নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন নেতা বলেন, শিল্পপতি জাকির সরকারকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী করা ঠিক হয়নি। তিনি কোটি কোটি টাকার মানুষ। ভোট হলে তাকে আর পাওয়া যাবে না। মানুষ প্রয়োজনেও তাকে খুঁজে পাবে না। কোটিপতিরা কেন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবে এমন প্রশ্ন করেন তিনি।
বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন, জাকিরের থেকে জামায়াতের মোশাররফ হুসাইন ভাল প্রার্থী। কারন তিনি সব সময় কুষ্টিয়ায় থাকেন। তাকে ভোট দিলে সব সময় কাছে পাওয়া যাবে। তারা এও বলেন ডা.আমিনুল হক রতন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেও সে সবার উপকারে আসে। শহরের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ায় তাকেও কাছে পাওয়া যাবে সব সময়। তাকে ভোট দিলেও সবার উপকারে আসবে।
সদর থানা বিএনপির শীর্ষ এক নেতা বলেন, যুবদল নেতা জাহিদুল ইসলাম বিপ্লবই বিএনপির ফিট প্রার্থী ছিল। অতিথি নেতা জাকিরকে নির্বাচিত করে নেতা-কর্মীদের কোন লাভ হবে না।
জাকির সরকার কৌশলে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার পাকাপোক্ত করতে মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তবে তিনি বলেন, জাকির কোটিপতি মানুষ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীরা যদি কিছু টাকা পয়সা তার কাছ থেকে পায় তাহলে ক্ষতি কি।
এদিকে, জাকির সরকার যে কোন ভাবে জয়ী হতে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন। নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে টাকা ছড়াচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যে বিএনপির কয়েকজন নেতা কয়েক লক্ষ টাকা পেয়েছেন বলে দলে আলোচনা আছে। বিএনপি নেতা মনে করেন, জাকিরের প্রচুর টাকা আছে। আর নির্বাচনে জিততে টাকার বস্তা নিয়ে নেমেছেন তিনি। এদিকে এখনো বাগে না আসা আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম বিপ্লবকে চাপ দিচ্ছেন বিএনপি নেতারা। প্রচারনায় না নামতে তাকে বারন করা হয়েছে।
জাকিরের অনুগত একজন নেতা বলেন, বিপ্লবের সঙ্গে কথা চলছে। তিনি যাতে মাঠে না নামেন সে চেষ্টা চলছে। গত বুধবার রাতে সোহরাব উদ্দিনের বাসায় জাকির ও বিপ্লবের উপস্থিতিতে বসাবসি হয়েছে। তাবে সেখানে সমঝোতা হয়নি বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছে। এদিকে বিপ্লবের সমর্থন পেতে তাকে মোটা অঙ্কের অর্থ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিপ্লব বিষয়টি ভাবার জন্য কয়েকদিন সময় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে বারবার উদ্যোগ নিয়ে জামায়াতের সমর্থন পায়নি বিএনপি।
সদর থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক এসএম ওমর ফারুক বলেন,‘ জাকির হোসেন সরকার বড় ফার্মের মালিক। তার অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও এলাকাবাসীর পাশে থাকতে সমস্যা হবে বলে মনে করি না। আর জাকির নিজেও সব সময় এলাকায় থাকবে বলে প্রতিশ্র“তি দিয়েছে।
চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির হোসেন সরকারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, গত ৬ মাস ধরে কুষ্টিয়ায় অবস্থান করছি। নির্বাচিত হলেও কুষ্টিয়াবাসীর পাশে থাকব।
