ইমরান হোসাইন, তানোর : জন্ম লগ্ন থেকেই পঙ্গুত্বের কারণে এখন নিজের অবুঝ মেয়েদেরকে ভরসা করে দিন চলে আকবর আলীর। ছোট বেলায় মায়ের কোলে অভিশাপের জীবন বেড়ে উঠে। এরপর স্ত্রীর উপর ভর করে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন চলে তার। এখন তার স্ত্রী মালেকা বিবি ৩ কন্যা ও ১ পুত্রের মাতা হয়ে বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। একারণে ১২ বছরের কন্যা খাদিজাকে স্কুলে না পাঠিয়ে তার উপর ভরসা করে জীবন চলে তার। ইচ্ছা ছিল ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পড়ানোর। কিন্তু সামর্থ্য না থাকার কারণে তার ইচ্ছা পূরণ তো দূরের কথা ছেলে-মেয়ের দুবেলা দুমুঠো খাবার ঝোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এভাবেই কথাগুলো বলতে বলতে আবেগে ফেটে পড়েন আকবর আলী।
নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার মজিদপুর গ্রামে জন্ম হয় আকবর আলীর। পিতার-মাতার অভাবী সংসারে অভিশাপের জীবন নিয়ে বেড়ে উঠার পর সংসার চালাতে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন তিনি। তার চলমান ভিক্ষা করা জীবন চলে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। এভাবে বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে শুরু হয় তার ভিক্ষাবৃত্তি।
এমনই সময়ে গত ২৮ জানুয়ারী তানোর উপজেলা পরিষদ চত্বরে দেখা মেলে আকবর আলীর ভিক্ষাবৃত্তি করা জীবন। এনিয়ে তিনি জানান, তিন কন্যার পরে ৮ মাস আগে ১টি পুত্র সন্তান হয় আকবর আলীর স্ত্রীর। একারণে তার স্ত্রী মানুষের বাড়ীতে কাজ করে ওই ছেলের বিভিন্ন খরচ জোগাতে বাড়িতে থাকেন। আকবর আলী তার তিন মেয়ের খাবার জোগাড় করতে গ্রামের মানুষের উপহার দেয়া ভ্যানগাড়ীতে চড়ে ভিক্ষা করতে বেড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন পাড়া মহলায়।

ওই ভ্যানগাড়ীতে বসে থাকা পিতাকে নিয়ে ভ্যান চালান ১২ বছরের বড় মেয়ে খাদিজা। সঙ্গে থাকা ৭ থেকে ৫ বছরের দুই মেয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পিতার পঙ্গুত্ব জীবন দেখিয়ে ভিক্ষা চান। এভাবে ভিক্ষা চাইতে চাইতে ঠান্ডায় কাতর হয়ে তানোর উপজেলা চত্বরে গিয়ে উপস্থিত মানুষের মধ্যে শীতের কম্বল নেয়ার কথা জানান। উপস্থিত মানুষের মধ্যে থাকা এপ্রতিবেদক উপজেলা প্রকল্প বাস্তিবায়ন অফিসারে সরনাপন্ন হয়ে কম্বল পাইয়ে দিতে সহায়তা করেন। এপ্রতিবেকদের মাধ্যমে এমন একটি কম্বল পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে আকবর আলী তার দুঃখ-দূর্দশার জীবন কাহিনী নিয়ে এভাবেই বর্ণনা করে ক্ষোভে ও আবেগে ফেটে পড়েন।
বিচিত্র দুনিয়ায় আকবর আলীর মেয়েদের মত জীবন আবেগ বাড়িয়ে দেয়। এই বয়সের মেয়েরা স্কুলের পাঠশালায় পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধূলায় হাসি-খুশি থাকার কথা। কিন্তু আকবর আলীর এসব নিদারুন মেয়েরা নিরুপাই হয়ে পঙ্গু পিতা আকবর আলীকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পড়েছেন। এসব নিষ্ঠুর নিদারুন মেয়েদের পাশে সমাজের বিত্তবান চরিত্রের মানুষ কি দাঁড়াবেন এমনই প্রশ্ন জাগে আকবর আলীর হৃদয়ে।
