ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সমাবেশে দু’দফা হামলা চালিয়েছে পুলিশ ও ছাত্রলীগ। এ সময় সমাবেশকারীদের লক্ষ্য করে গুলি, টিয়ারশেল ও ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়। এর মধ্যে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গুলিতে আহতদের মধ্যে ৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলো তাওহীদ রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষ, ছামিয়া তারিন, আইন বিভাগ প্রথম বর্ষ, রাজীব গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, শোভন, অমিত প্রমুখের পরিচয় জানা গেছে। এর মধ্যে তাওহীদের অবস্থা আশংকাজনক। এদিকে সাংবাদিকদের মধ্যে আহতরা হলেন শীর্ষ নিউজের প্রতিনিধি জাকির হোসেন তমাল, মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রতিনিধি গোলাম রাব্বানি, নিউএজের প্রতিনিধি নাজিম মৃধা, মানবকন্ঠের প্রতিনিধি বুলবুল আহম্মেদ শাহিন, আইএনবি’র প্রতিনিধি গোলাম রসুল রনি, জহিরুল ইসলাম রনি ও দ্বীপ রাজশাহীর একটি অন লাইনের প্রতিনিধি। রবিবার দুপুর পৌনে ১২টায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়।
জানা যায়, রাবির প্রক্টরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করার সময় ছাত্রলীগ পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। এসময় ছাত্রলীগ কর্মীরা সশস্ত্র অবস্থায় পুলিশ নিয়ে বিভিন্ন ভবনে তল্লাশি চালায়। মাদার বখশ ও শহীদ সোহরায়ার্দী হলের শিক্ষার্থীরা শ্লোগান দিলে পুলিশ তাদের উপরও টিয়ারশেল ও রাবাট বুলেট নিক্ষেপ করে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পুলিশ ও র্যাব ঘিরে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে সংঘর্ষের তথ্য সংগ্রহের সময় রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার প্রলয় চিচিমের নেতৃত্বে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালানো হয়। রাবিতে কর্মরত সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে তারা আল্টিমেটাম দিয়েছেন। বিকাল ৪টার মধ্য যাদের সহযোগিতায় এ হামলা হয়েছে তাদের প্রত্যরহার না করলে কঠোর কমসূচি দেওয়া হবে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার প্রলয় চিচিমকে ক্যাম্পাস চত্ত¡র থেকে এবং সহকারী প্রক্টর এলাম, সিরাজুল ও জুলফিকারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানান সাংবাদিকরা। এদিকে দ্বিতীয় দফা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর টিয়ারশেল ও গুলি ছুড়েছে পুলিশ। এ সময় আরো ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রোববার দুপুর পৌনে ২ টায় বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে এ হামলা চালায় পুলিশ। গুলিবিদ্ধদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়। এ সময় পুলিশ কোন সতর্কতা ছাড়াই ছাত্রদের লক্ষ্য করে উপর্যুপরি কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছোড়ে। উল্ল্খ্যে, বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্য কোর্স বন্ধের দাবিতে ১৯ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, প্রশাসন ভবন ঘেরাও, ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কয়েক দফা বৈঠকের পরেও কোন প্রকার সমঝোতায় না আসায় শিক্ষার্থীরা শনিবার থেকে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দেয়।