মেহের আমজাদ, মেহেরপুর : মেহেরপুরে চলছে পুলিশি শাসন। পুলিশ তাদের ইচ্ছামত পক্ষপাতিত্বভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গ্রেফতার বাণিজ্য, ক্রস ফায়ারের নামে পরিকল্পিত হত্যা, সাধারণ মানুষকে হয়রানি সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে পুলিশ। মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভিকটিমদের সাথে কথা বলে বিএনপির নাগরিক তদন্ত কমিটি শনিবার বিকেলে মেহেরপুর কমিউনিটি সেন্টারে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এমন বক্তব্য তুলে ধরেন। তারা বলেন, ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। গ্রেফতার বাণিজ্য, দমন পিড়নের ভয়ে অনেক এলাকায় পুরুষ মানুষ বাড়িতে থাকতে পারছে না। সাধারণ মানুষ পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছে না। নির্যাতিতরা পুলিশের কাছে নালিশ বা অভিযোগ করলে উল্টো তাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। ক্রস ফায়ারের নামে অর্থ বাণিজ্য করা হচ্ছে। মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার ঘটনা তদন্তে বিএনপির গঠিত নাগরিক তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, মেহেরপুরে নির্যাতিত মানুষের সাথে কথা বলে আমরা জেনেছি, মেহেরপুরে চলছে পুলিশি শাসন। সেখানে পুলিশের যা ইচ্ছা তাই করছে। সাধারণ মানুষের কোন নিরাপত্তা নেই। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল সহ নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা একেবারেই নাজুক। ভুক্তভোগীরা প্রভাবশালী এবং পুলিশের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। কেউ কোনো সত্য কথা বলে ফেললেই বিপদ। এমনটিই আশংকা তাদের। তিনি আরও বলেন সেখানে গণমাধ্যম কর্মীরাও নিরাপদ নয়। এক পুলিশ কর্মকর্তার বিশেষ অভিযানের ছবি তোলায় দুই সাংবাদিককে তার লোক দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। অনেক দেন দরবার করে ছাড়া পান তারা। স্বাধীন দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন আচরণ চলতে পারে না। খুনের শিকার মানুষেরা বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী। সন্ত্রাসের অভিযোগ তাদের নামে নেই। প্রায় সবাই নিরীহ। এই রাজনৈতিক হত্যাকান্ড বন্ধ হওয়া দরকার বলে অভিমত দিয়ে তিনি বলেন, না হলে পরিণতি বিপজ্জনক হতে পারে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নেতা-কর্মীদের ভূমিকা রাখতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি বলেন, এ দেশ স্বাধীন দেশ। দেশের মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাবে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করবে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, নির্যাতিতদের পক্ষে ন্যয় ভিত্তিক কাজ করবে- এমনটিই আশা সকলের। মুজিবনগর তথা মেহেরপুর স্বাধীনতার সুতিকাগার। এ জেলার মানুষের মধ্যে সৌহার্দ সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। রুহুল আমিন আরও বলেন, অনেক জায়গায় নিরাপত্তার অভাবে সংবাদ কর্মীরা যেতে পারছে না। সঠিক সংবাদ তুলে ধরতে পারছে না। ফলে সত্য খবর চাপা পড়ছে। সাগর-রুনি হত্যার কোন আসামীকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। নিপাপদ সাংবাদিকতা করতে না পারায় আসল ঘটনা উঠে আসছে না। বেশ কয়েকটি মিডিয়া বন্ধ করে দেয়ায় অনেকে বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দেশে এখন একনায়কতন্ত্র শাসন চলছে। প্রগতিশীল উদার গণতান্ত্রিক দেশে এমন শাসন কারো কাম্য নয়। বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড চলতে থাকলে আদালতের দরকার কী? রাষ্ট্রীয় ভাবে এমন সন্ত্রাস যেন আর না হয় এমন দাবী করেন তিনি। তিনি অবিলম্বে আমার দেশ, দৈনিক ইনকিলাব, দিগন্ত টিভি, ইসলামি টিভিসহ বন্ধ সব মিডিয়া খুলে দেয়া এবং নির্যাতনের শিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ বিনাবিচারে আটক সব সাংবাদিককে মুক্তি দিয়ে ভিন্নমত প্রকাশের পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানান। তিনি বলেন, সরকার নৈতিকভাবে দুর্বল। তাই এই সরকারের আমলে দেশে শান্তি আসতে পারে না। তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয় প্রেস কাবের যুগ্ম সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী মেহেরপুরের রশিকপুর গ্রামের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, সেখানকার নির্যতিতদের দেখে জাপানের হিরোশিমা নাগাসাকির কথা মনে পড়ছে। কারো হাত-পা কাটা, কারো হাত-পা ভাঙ্গা। অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। নির্যাতিতরা জানতে চেয়েছেন, পুলিশ কি মানুষ হত্যার জন্য- নাকি মানুষের নিরাপত্তা বিধানের জন্য? এই রাষ্ট্র কার জন্য, রাষ্ট্রের কি দায়িত্ব নেই, সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে? দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনপূর্ব ও পরবর্তী সময়ে সহিংসতা, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে গত ২২ জানুয়ারি পেশাজীবীদের সমন¦য়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর জন্য পৃথক চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তদন্ত কমিটিতে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সহঃ সম্পাদক রফিকুল হক তালুকদার রাজা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা: সিরাজউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়েদুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক সঞ্জিব চৌধুরী, শাহীন হাসনাত, এ্যাড. পারভেজ হোসেন, এ্যাড. আমজাদ হোসেন পলাশ।
