ads

শনিবার , ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

হতাশাগ্রস্থ অসহায় আরজুর অবশেষে ঠাই পেল আগৈলঝাড়ার এক দরিদ্র পরিবারে

রফিকুল ইসলাম আধার , সম্পাদক
ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৪ ৩:৩৭ অপরাহ্ণ

Agailjhara Photo- 31-01-14= 1অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) : দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে লঞ্চ থেকে লাফিয়ে মেঘনা নদীতে আত্মহত্যা করতে গিয়ে বেঁচে যাওয়া ভোলার মেয়ে আরজুর চিকিৎসা শেষে ঠাই হল আগৈলঝাড়ার আশ্রয়ন প্রকল্পের আরেক হত দরিদ্র বাসিন্দার কাছে। দারিদ্রতার কারণে পরিবারের স্বজনরাও মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে রয়েছে আরজু। কোথায় মিলবে তার ঠাই ?

Shamol Bangla Ads

গত কয়েকদিন মাতৃ¯েœহে আদর যতœ আর চিকিৎসায় আরজু কিছুটা সুস্থ হলেও আর্থিক অনটনের সংসারে আরজুকে নিয়ে হতাশার মধ্যে রয়েছে আশ্রয়দাতা কল্পনা বেগম। গত বৃহস্পতিবার রাতে চাঁদপুরের মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া মেয়ের কোন স্বজন বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে তাকে দেখতে বা নিতে আসেনি। তাই নিরুপায় হয়ে তার অসুস্থাবস্থায় মাতৃ¯েœহে পরিচর্যাকারী আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট-গোপালসেন আশ্রায়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আরশেদ মৃধার স্ত্রী কল্পনা বেগমের কাছে পুনরায় ঠাই নিতে হল তাকে। সাংবাদিকদের জানাল তার নাম আরজু। বয়স ১৭-১৮ বছর। বাবার নাম ফারুক ফরাজী। ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার হাজারীগঞ্জে তার বাড়ি। নুরুননাহার, মহিউদ্দিন, আঁখি, লাকী, লাইজু, আরজু, আর রুপাকে নিয়ে তারা ৬ ভাই বোন। এদর মধ্যে আরজু পঞ্চম। সকল বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বছর তিনেক আগে মা মনোয়ারা বেগম হার্ট এ্যাটাকে মারা যায়। বাবা ফারুক চট্টগ্রামে দিন মজুরের কাজ করছে। জায়গা জমি কিছুই নেই। আরজু হাজারীগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসায় ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। মা মারা যাবার পর সংসারের অভাব অনটনের কারণে আর পড়াশুনা হয়নি। যদিও মা থাকতেই অনটনের কারণে তার বড়বোন আঁখির সাথে ঢাকার খিলক্ষেত বস্তিতে থাকত। দুলাভাই মন্নান পেশায় একজন স্কুল ভ্যানচালক। আঁখির অভাবের সংসারে তার বাচ্চা দেখাশুনা করলেও একসময় বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়ায় আরজু। স্বজনদের নিত্য কটাক্ষ ও অবজ্ঞায় জর্জরিত হয়ে বাচার জন্য একপর্যায়ে সে মহাখালীর জেমিনি গার্মেন্টেসে চাকুরি নেয়। গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পরে। বোনের সংসারে টাকা দিতে না পারায় তার সংসারে থাকা-খাওয়া দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। পেটের ক্ষুধার জোগান দিতে না পারায়, বোন ও দুলাভাইয়ের নিত্যদিনের গালমন্দ চরম পর্যায়ে পৌঁছে তার জীবনে। অন্য আর কোন উপায় না থাকায় এবং নিজের ভাই মহিউদ্দিনের আর্থিক সঙ্গতি না থাকার কারণে সংসার ও পৃথিবী থেকে নিজেকে চিরদিনের জন্য আড়াল করতে সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যার। সেই অনুসারে গত ২৬ জানুয়ারি রোববার সকালে দশটায় ১শ’ টাকা হাতে নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে আরজু। সদরঘাটে এসে উঠে পরে একটি লঞ্চে।
নির্দিষ্ট সময় ছেড়ে দেয় লঞ্চ। রাত সাড়ে ন’টা থেকে পৌনে দশটা। চাঁদপুর ঘাটে ভিড়তে আর মাত্র দশ-পনের মিনিট বাকী। এরই মধ্যে হুলারহাট ও খেপুপাড়াগামী দুটি লঞ্চ ওভারটেক করেছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাটগামী পূবালী লঞ্চ-২কে। নিজেকে দারিদ্রতার হাত থেকে চিরতরে বাঁচাতে আত্মহত্যার জন্য লাফিয়ে পরে ভয়ঙ্কর মেঘনার প্রমত্তা বুকে। এরপর উদ্ধারকারী লঞ্চ পুর্বালী-২ এর স্টাফরা জানান, প্রচন্ড শব্দের মধ্যেও লঞ্চের সারেং ভোলার আবুল কালাম শুনতে পেলেন মেঘনা নদীতে একটি মেয়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তচিৎকার করছে। লঞ্চের সার্চলাইট ঘুরিয়ে নদীতে একজন মেয়েকে ভাসতে দেখে লঞ্চ ঘোরালেন তিনি। নদীর প্রবল ¯্রােতে প্রথমবার তলিয়ে গেলেন ওই মেয়ে। হাল ছাড়লেন না কালাম। তার সাথে যোগ দিলেন লঞ্চের সুপারভাইজার বাবুগঞ্জের সজল আহম্মেদসহ অন্যান্য কয়েকজন যাত্রী। অন্যান্যদের সহায়তায় লঞ্চে তুলে আনা হল আরজুকে। এরই মধ্যে জ্ঞান হারিয়েছে সে। লঞ্চে শুরু হল তার সেবাশুস্রষা। কিন্তু কিছুতেই সারারাতেও জ্ঞান ফেরেনি।
সোমবার বেলা ১০টায় বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট ঘাটে লঞ্চটি পৌঁছালে স্থানীয় পুরুষ মহিলারা ছুটে আসেন লঞ্চঘাটে। স্থানীয় পয়সারহাট-গোপালসেন আশ্রায়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আরশেদ মৃধার স্ত্রী কল্পনা বেগম ও স্থানীয় আব্দুল লতিফের স্ত্রী রাবেয়া মাতৃ¯েœহে সেবা শুরু করেন। সংবাদকর্মীদের পরামর্শে উদ্ধার হওয়া আরজুকে নিয়ে লঞ্চের সুপারভাইজার সজল প্রথমে আগৈলঝাড়া উপজেলা হাসপাতালে যান। হাসপাতালের চিকিৎসকরা উট্কো ঝামেলা মনে করে আরজুকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে সন্ধ্যার পরই জ্ঞান ফেলে আরজুর। তার দেয়া তথ্যমতে, বোন আঁখির সাথে সংবাদকর্মীসহ লঞ্চের স্টাফরা ফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করলেও বোন আরজুকে দেখতে আসেনি আঁখি। এমনকি তার খোঁজখবরও নেয়নি। পরিবারের কোন লোক তাকে নিতে না আসায় অভিমান ও ক্ষোভে আরশেদ মৃধার স্ত্রী কল্পনা বেগমের সাথে আবার চলে আসে আগৈলঝাড়ায় তার আশ্রায়ণ প্রকল্পের বাসায়। বৃহস্পতিবার রাতে আগৈলঝাড়া থানায় বসে আরজু জানায়, সে আর পরিবারের কোন স্বজনের কাছে ফিরতে চাইছেনা। জীবন থেকে দারিদ্রতার অভিশাপকে দূর করতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া আরজু বেঁচে গিয়েও ঠাঁই হল সেই দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত কল্পনা বেগমের কাছে। আরজুর ওষুধ-পথ্যসহ সুস্থতার জন্য বর্তমানে দরকার যে অর্থের তা চালানোর সামর্থ্য নেই আশ্রয়দাতা কল্পনার।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

error: কপি হবে না!