আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি : বরিশালের আগৈলঝাড়া-উজিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বিলাঞ্চল খ্যাত কয়েকটি গ্রাম বছরের ছয়মাসই ধানের জমি ডুবে থাকে পানিতে। শুধুমাত্র বোরোধানের ওপর নির্ভরশীল ওই এলাকার হাজার-হাজার কৃষক পরিবার। অন্য কোন কাজ না থাকায় ওই এলাকার লোকজনের ১২মাসই অভাব নিত্যসঙ্গী। গত দু’বছর পূর্বে গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে বিকল্প আয়ের চিন্তা করেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা করেন ‘উত্তর সাতলা-পটিবাড়ি যৌথ মৎস্য প্রকল্প’। বর্ষাকালে ছয়মাস জমিতে মাছ চাষ করে মাত্র দু’বছরের ব্যবধানে ওই প্রকল্পের দু’হাজার পরিবারের ভাগ্য বদলে গেছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে স্থানীয় অসহায় ও দু:স্থ শতাধিক পরিবারের সদস্যরা। এখন আর তাদের কোন অভাব-অনটন নেই। বছরের ছয়মাস জমিতে ধান চাষ ও বাকি সময় মাছ চাষের লাভের অর্থ দিয়েই সুখে স্বচ্ছন্দে বসবাস করছেন।
সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও গ্রামের সুবিধাভোগীদের সাথে আলাপকরে জানা গেছে, অর্থকষ্টে দারিদ্রপীরিত উত্তর সাতলা গ্রামের জনগন মাত্র দু’বছর পূর্বেও শুধুমাত্র এক ফসলী বোরো ধান চাষের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। কৃষকের শ্রমের বিনিময়ে জমিতে উৎপাদিত ইরি-বোরো ধান দিয়েই কোনমতে তাদের পুরো বছর পার করতে হয়েছে। ফলে অভাব ছিল তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। স্থানীয় সুবিধাভোগী আগৈলঝাড়া উপজেলার আস্কর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রিয়লাল মন্ডল জানান, গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দুঃখ-দুদর্শা লাঘবের জন্য গত দু’বছর পূর্বে সাতলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা আ. খালেক আজাদের প্রচেষ্টায় গ্রামবাসীদের নিয়ে এক বৈঠকে গ্রামের সর্বস্তরের জনগণের মতামতের ভিত্তিতে একফসলী জমিতে বর্ষাকালে মাছ চাষের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর উত্তর সাতলা ও পটিবাড়ি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৫শ’ একর জমির প্রায় দু’হাজার মালিকদের নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা হয় ‘উত্তর সাতলা-পটিবাড়ি যৌথ মৎস্য প্রকল্প’। ২৫ সদস্য বিশিষ্ট ওই প্রকল্পের সভাপতি নির্বাচিত হন আ. খালেক আজাদ। সুবিধাভোগী হরষিত বৈদ্য জানান, মাত্র দু’বছরের ব্যবধানে বছরের ছয়মাস ধানের জমিতে মাছ চাষ করে তাদের পুরো এলাকার দরিদ্র পরিবারগুলো আজ স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। সুবিধাভোগী হেমায়েত উদ্দিন, আনন্দ বালা, সুমেন হালদার, হোসেন মিয়া, সুভাষ বৈরাগী, সাত্তার পাইকসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী প্রতিবিঘা জমির মালিক এই প্রকল্পের একজন শেয়ার হবেন। সেমতে ১৮শ’ শেয়ার মালিক প্রতিবছর প্রতি শেয়ারের অনুকূলে একহাজার টাকা করে প্রকল্পের ম্যানেজারের কাছে জমা দিয়ে থাকেন। ওই টাকা দিয়ে জমিতে বৈশাখ মাসে মাছ চাষের শুরুতে পোনা ক্রয়সহ অন্যান্য খরচ করা হয়। এরপর কার্তিক মাসে মাছ ধরে বিক্রির পর পুরো টাকা শেয়ার মালিকদের মাঝে সমহারে বন্টন করা হয়। গ্রামের ভূমিহীনদের প্রকল্পের শেয়ার হিসেবে রাখা হয়েছে বলেও তারা উলেখ করেন। সুবিধাভোগী ও কৃষক নিকুঞ্জ বাইন, হরেন সমদ্দার, অনিল বেপারী জানান, ধানের জমিতে মাছ চাষ করায় গত দু’বছর ধরে তাদের জমিতে উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও জমিতে পূর্বের ন্যায় এখন আর আগাছা জন্মাচ্ছেনা। যেকারণে জমি চাষের খরচ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। মাছ চাষের পূর্বে প্রতিবিঘা জমির আগাছা পরিস্কারের জন্য প্রায় চারহাজার টাকা খরচ হত। এখন আর কৃষকদের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হয়না। বর্তমানে জমিতে বোরো চাষাবাদ চলছে।
এব্যাপারে প্রকল্পের সভাপতি আ. খালেক আজাদ জানান, কৃষকদের জমিতে বোরো ধান ও মাছ চাষের সুবিধার্থে পটিবাড়ি এলাকার খালের মধ্যকার কালভার্ট দিয়ে পানি ওঠানামা করানো হয়। তিনি আরো জানান, চলতি মৌসুমে মাছ চাষের জন্য সর্বমোট ৪২ লক্ষ টাকা ব্যয় করে প্রায় কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে। উপার্জিত লভ্যাংশ জমি, ডোবা ও পুকুরের মালিক থেকে শুরু করে প্রকল্পের নিয়োগপ্রাপ্তদের মাঝে সমবন্টন করে দেয়া হয়েছে। প্রকল্প সভাপতি খালেক আজাদ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মাত্র দু’বছরের মধ্যে গ্রামের দারিদ্র মানুষদের স্বাবলম্বী হওয়াকে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেনা পাশ্ববর্তী এলাকার কতিপয় কুচক্রী মহল। ফলে ওই মহলটি এ প্রকল্পকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।
