রেদওয়ানুল হক আবীর/শহিদুল ইসলাম হিরা, শেরপুর : প্রথম দফায় ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী শেরপুরের ৫ উপজেলার কোনটিতেই নির্বাচন না থাকলেও থেমে নেই সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তৎপরতা। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় দফায় সদ্য ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ক্ষমতার জৌলুসতায় তুলনামূলকভাবে অনেকটা বেশি তৎপর হলেও বসে নেই বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। তারা প্রতিদিনই দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে দেখা-সাক্ষাত, তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এবং শহর থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইউনিয়নে, হাট-বাজারে গণসংযোগ করছেন। বিশেষ করে ৫ টি উপজেলাতেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভিড় বেশি থাকায় তারা নিজেদের পক্ষে সমর্থন আদায়ে বিশেষ তয়-তদবিরসহ শেষ পর্যায়ের জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
শেরপুর সদর : ঐতিহ্যবাহী একটি প্রাচীন পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকা শেরপুর-১ (সদর) এর পুরো এলাকা নিয়েই সদর উপজেলা। ৯১ এর প্রথম নির্বাচনে জাপা প্রার্থী শাহ আব্দুর রহিম চৌধুরী ওরফে সুরুজ চৌধুরী, দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতিউর রহমান আতিক ও তৃতীয় নির্বাচনে এ উপজেলায় জাপা প্রার্থী মোঃ ইলিয়াস উদ্দিন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তৃতীয় নির্বাচনে জাপা প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিনের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছানোয়ার হোসেন ছানু। এবারের নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বাস-কোচ মালিক সমিতির সভাপতি ছানোয়ার হোসেন ছানু জোরালো প্রার্থী। তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক তৃণমূলের ভোটের মাধ্যমে একক প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় দলের আরও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে শামিল হতে চাচ্ছেন শেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি গোলাম মোঃ কিবরিয়া লিটন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন মিনাল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা ইউপি ফোরামের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের সভাপতি, ইউপি চেয়ারম্যান হাবীবুর রহমান হাবীব ও জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহবায়ক প্রভাষক ফাতেমাতুজ্জোহরা শ্যামলী। বিএনপি থেকে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের খুব একটা তৎপরতা না থাকলেও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব এডভোকেট মোঃ সিরাজুল ইসলাম, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, শেরপুর সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি শহীদুল ইসলাম, দৈনিক তথ্যধারার মালিক-সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম এটম, গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আব্দুল্লাহ আবু ও জেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক, জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমকে মুরাদুজ্জামানের মধ্য থেকেই শেষ পর্যন্ত কেউ প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারেন। আর জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ ইলিয়াস উদ্দিনই এখন পর্যন্ত একক প্রার্থী থাকলেও এ উপজেলায় জামায়াতের কোন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম এখনও আলোচনায় উঠে আসেনি।
নালিতাবাড়ী : একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নালিতাবাড়ী উপজেলা। প্রথম নির্বাচনে জাপা প্রার্থী অধ্যাপক আব্দুস সালাম (পরবর্তীতে উপ-নির্বাচনে তার আপন ভাতিজা একেএম বেলায়েত হোসেন খসরু), দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যক্ষ আবু তাহের ও তৃতীয় নির্বাচনে এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তৃতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদিউজ্জামান বাদশার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন অধ্যাপক আব্দুস সালাম। সদ্য সমাপ্ত দশম সংসদ নির্বাচনে বদিউজ্জামান বাদশা দলের প্রার্থী বেগম মতিয়া চৌধুরীর বিপরীতে প্রার্থী হওয়ায় কয়েকদিন আগে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তিনি আর লড়ছেন না- এমনটাই শোনা যাচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক পৌরপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম উকিল ও সাধারণ সম্পাদক মকছেদুর রহমান লেবুর নাম বেশ জোরেসোরেই শোনা যাচ্ছে এবং তারা মাঠ পর্যায়ে বেশ তোড়জোড়ও চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে দলের বিবদমান বাদশা বলয় থেকে সাবেক এমএনএ আব্দুল হাকিমের পুত্র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরকার গোলাম ফারুকও প্রার্থী হতে পারেন-এমন মৃদু গুঞ্জন রয়েছে। বিএনপি থেকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী, ইউপি চেয়ারম্যান মুখলেসুর রহমান রিপন ও প্রভাষক মোঃ আব্দুল্লাহর নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। এছাড়া জাপা থেকে প্রয়াত অধ্যাপক আব্দুস সালামের পুত্র শওকত সাঈদ সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৎপরতা শুরু করলেও এ উপজেলায় জামায়াতের কোন প্রার্থীর গন্ধ পাওয়া যায়নি।
নকলা : একটি পৌরসভা ও ৯ টি ইউনিয়ন নিয়ে নকলা উপজেলা গঠিত। প্রথম নির্বাচনে জাপা প্রার্থী মাহবুব আলী চৌধুরী ওরফে মনির চৌধুরী, দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান ও তৃতীয় নির্বাচনে এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহ মোঃ বুরহান উদ্দিন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তৃতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শাহ মোঃ বুরহান উদ্দিনের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান। এবারের নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ মোঃ বুরহান উদ্দিনই আওয়ামী লীগের জোরালো প্রার্থী। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গোলাম রব্বানী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক এমপি ডা. নাদেরুজ্জামানের পুত্র ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন খান মুকুল, শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমির হামজা, প্রভাষক মাহবুবুর রহমান বিদ্যুৎ ও সাবেক ছাত্রনেতা মনির হোসেন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৎপর রয়েছেন। বিএনপি থেকে জাহিদ হোসেন বাদশা, মোবাশ্বের আলী চৌধুরী টোটন, জাতীয় পার্টি থেকে অধ্যাপক আবুল কাশেম ও কমর উদ্দিন চন্দনের নাম সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। এ উপজেলাতেও জামায়াতের কোন সম্ভাব্য প্রার্থী নেই।
ঝিনাইগাতী : দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সীমান্তবর্তী এ উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৭ ফেব্র“য়ারী। যে কারণে ৭ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা অন্যান্য উপজেলার চেয়ে বেশি। এ উপজেলায় প্রথম নির্বাচনে জাপা প্রার্থী আব্দুল ওয়াহেদ, দ্বিতীয় নির্বাচনে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জমশেদ আলী ও তৃতীয় নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আমিনুল ইসলাম বাদশা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তৃতীয় নির্বাচনে আমিনুল ইসলাম বাদশার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আলহাজ্ব এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাঈম। এবারের নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাঈম দলের জোরালো প্রার্থী। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ও দলের মনোনয়ন না পেয়ে বারবার বিদ্রোহী প্রার্থী আমিরুজ্জামান লেবুর নাম দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। বিএনপি থেকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে দুদকের মামলায় কারাগারে আটক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা এবারও প্রার্থী হচ্ছেন- এটা অনেকটাই নিশ্চিত। তবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম, সারোয়ার বাহাদুর লাল ও উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নানের নাম দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। এ উপজেলায় জাপা ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এখনও কারও নাম উঠে আসেনি।
শ্রীবরদী : একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত শ্রীবরদী উপজেলা। এ উপজেলার প্রথম নির্বাচনে জাপা প্রার্থী আব্দুল ওয়াদুদ, দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আশরাফ হোসেন খোকা ও তৃতীয় নির্বাচনে জাপা প্রার্থী খোরশেদ আলম ফরসা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তৃতীয় নির্বাচনে জাপা প্রার্থী খোরশেদ আলম ফরসার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন আশরাফ হোসেন খোকা। এবারের নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ হোসেন খোকা জোরালো প্রার্থী। তবে দলের সিনিয়র নেতা ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার আলী মাষ্টার, তরুণ নেতা এডভোকেট তারিকুল ইসলাম ভাসানী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এডিএম শহীদুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৎপর রয়েছেন। এ উপজেলায় বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৎপর রয়েছেন দলের সিনিয়র নেতা ও ৪ বারের ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সুরুজ্জামান, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম দুলাল, শহর বিএনপির সভাপতি জামাল উদ্দিন জামাল ও উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন দুলাল। জাপা থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ফরসা ও সাবেক প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদের পুত্র সারোয়ার জাহান খোকন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৎপর রয়েছেন। এ উপজেলায় জামায়াত থেকে প্রার্থী হতে উপজেলা আমির নুরুজ্জামান বাদলের তৎপরতা অনেকটাই এগিয়ে।