ইমরান হোসাইন, তানোর : চলতি মৌসুমের শেষ সময়ে রাজশাহীর তানোরে আলু ক্ষেত অজানা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়েছে। দুয়েক দিন পরপর কৃষকরা কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আলু চাষিরা। এই রোগ গত প্রায় এক সপ্তা থেকে শুরু করে ক্রমন্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে সাবাড় হয়ে যাচ্ছে উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর আলুক্ষেত।

তানোর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানান, চলতি মৌসুমে পুরো উপজেলায় দুই হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে দেশী ও হাইব্রিত জাতের আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ জমিতে আলুর চাষাবাদ করা হয়েছে। এবার তানোরে পাঁচ-ছয় প্রজাতির উচ্চ ফলনশীল আলুর জমিতে বাম্পার ফলনের সম্ভবনা থাকলেও আলু গাছ পরিপক্ব হওয়ার আগেই দেখা দেয় নানা রোগ। এখন থেকে এক মাসের ব্যবধানে তিন দফায় শৈত্যপ্রবাহের পর সূর্য্যরে তাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় আলুর গাছের পাতা কালচে হয়ে ঝরে পড়ছে। শুধু গাছের ডাটা ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
এনিয়ে তানোর পৌর এলাকার চাঁদপুর গ্রামের আলু চাষি তৈয়ব আলী জানান, গত পাঁচ-সাত দিনের ব্যবধানে আলুর গাছের পাতা কালচে আস্তে আস্তে দুয়েক দিনের ব্যবধানে গাছ পাতা সব ঝড়ে পড়ছে। শুধু গাছের ডাটা ছাড়া কোন কিছুই থাকছে না। একই কথা জানিয়ে সরণজাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক খাঁন বলেন, তিনি চলতি মৌসুমে প্রায় দেড়শ বিঘা জমিতে আলুর প্রজেক্ট করেছেন। উচ্চ দামে বীজ ও সার ক্রয় করে নানা সমস্যার সংকটের মধ্য দিয়ে সেরে উঠতে না উঠতেই হঠাৎ করে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে আলুক্ষেতে অজানা ভাইরোগ দেখা দিয়েছে। এই ভাইরাস রোগ সম্পর্কে স্থানীয় কৃষি বিভাগ কোন ধারণা দিতে পারছেন না। তবে, তার সব জমিতে এরোগ দেখা না দিলেও কিছু জমিতে এই রোগ মহামারী আকার ধারণ করায় এবার লাভের তুলনায় ক্ষতির পরিমান বেশী হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
তানোর পৌর এলাকার জিওল গ্রামের আলু চাষি আলী হোসেন, কামাল শাহ জানান, রোগটি দেখা দেয়ার পরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনে রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ চাইলে তারা আলুর ক্ষেত পরিদর্শনের নামে আজ কাল করে কৃষকদের নিরাশ করে ফেলেছেন। এছাড়া বারবার এই ভাইরাস রোগ বিষয়ে অবহিত করলেও কৃষি কর্মকর্তারা কোন পরামর্শ না দিয়ে তাদের কিছু করার নেই বলে জানিয়ে দেন। তবে, কেবলমাত্র কীটনাশক ডিলাদের পরামর্শে আলু চাষিরা আলু ক্ষেতে কয়েক ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে আলু চাষিদের অভিযোগ।

এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসানুল কবীর কামালী বলেছেন, তিন দফায় শৈত্যপ্রবাহের ফলে হঠাৎ করে রোদের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আলুক্ষেতে ভাইরোগ দেখা দিয়েছে। তিনি ও তার কর্মচারীরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় কৃষকদের ডাকে সময় মত আলুর ক্ষেত পরিদর্শন করতে পারেন নি। তবে, মোবাইল ফোনে তার অধিনস্থ কর্মচারীকে আলুর মাঠ পরিদর্শনের জন্য বলে দিয়েছেন। তার গাফলতির কারণে কৃষকরা একটু ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি তার সাধ্যমত রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আলুচাষিদের পরামর্শ দেয়া হবে বলে জানান।
