শহিদুল ইসলাম হিরা, শেরপুর : ৮৪ তম জন্মদিনে প্রিয়জনদের হৃদয় নিংড়ানো ফুলেল শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত হলেন শেরপুরের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহবায়ক ভাষা সৈনিক মো. আব্দুর রশীদ। ২৫ জানুয়ারী শনিবার শহরের গৃদানারায়নপুরের নিজ বাসভবনে আয়োজিত জন্মদিনে ভাষা সৈনিকের রাজনৈতিক সহকর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, প্রতিবেশি ও পরিবারের সদস্যবৃন্দ তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ওইসময় তাকে শ্রদ্ধা জানাতে তার বাসভবনে ছুটে যান জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী জয়শ্রী নাগ লক্ষèী, মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ দে কৃষ্ণ, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি আমজাদ হোসেন, প্রবীণ সাংবাদিক সুশীল মালাকার, শিক্ষাবিদ ড. সুধাময় দাস, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামিউল ইসলাম আতাহার, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্য সচিব হারেজ আলী। এছাড়া তাকে মুঠোফোনে শুভেচ্ছা জানান জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধারসহ অনেকেই। পরে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে ভাষা সৈনিক আব্দুর রশীদ উৎসব মুখর পরিবেশে করতালির মধ্যে তার ৮৪তম জন্মদিনের কেক কাটেন।

ওইসময় ভাষা সৈনিক আব্দুর রশীদ নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ভাষার জন্যে সংগ্রাম করেছি। সেটা আজ আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। ঘাতক দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির রায় কার্যকর দেখে মানসিকভাবে তৃপ্তি পেযেছি। আরও যে সব যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকরের বাকি আছে, তাদের রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক- এই প্রত্যাশা করি।
উলেখ্য, আব্দুর রশীদ ১৯৩১ সালের ২৫ জানুয়ারি শেরপুর পৌর শহরের শেখহাটিতে এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া একাডেমীতে অধ্যয়নকালে ছাত্রাবস্থায় তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট,৬২’র শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যূত্থান, ৭০’র নির্বাচন,৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে অবদান রাখেন। এ ছাড়া স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন গনতান্ত্রিক, সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল আন্দোলন এবং শেরপুরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডেও অবদান রেখেছেন। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় তৎকালীন সরকার তাকে ষ্টেট প্রিজনার হিসেবে গ্রেফতার করলে তিনি ময়মনসিংহ জেলা কারাগারে এক মাস কারা ভোগ করেন।
১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হলে এর প্রতিবাদ করায় তৎকালীন জিয়াউর রহমান সরকার তাকে ময়মনসিংহ জেলা কারাগারে ৯ মাস কারারুদ্ধ করে রাখেন। আব্দুর রশীদ তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে , শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রফেসর মোজাফ্ফর আহমেদ, জেনারেল এমএজি ওসমানী ও বিপ্লবী রবি নিয়েগীসহ দেশবরেণ্য বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের সান্নিধ্যলাভ করেন এবং তাদের সঙ্গে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেন। শেরপুর সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর রশীদ দীর্ঘ দিন ধরে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর ও জামায়াত-শিবির এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। বিশেষ করে শেরপুরের কুখ্যাত আল বদর জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদাই প্রতিবাদী ভুমিকা পালন করেন এবং যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানকে সামাজিকভাবে বয়কট করে শেরপুরে এক অনন্য নজীর স্থাপন করেন। জীবনের শেষ প্রান্তে পৌছে তিনি শেরপুর জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
