শ্যামলবাংলা ডেস্ক : শুরু হলো বিশ্ব ইজতেমা। এতে অংশ নিতে লাখো মুসল্লি সমবেত হয়েছেন টঙ্গীর তুরাগ তীরে। মুসল্লীরা শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আমবয়ান শোনেন। পরে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তালিম নেন। ইসলামের নানা নিয়ম-কানুন শিখে প্রতিজ্ঞা করেন সত্য, ন্যায় ও দ্বীনের পথে নিজেদের পরিচালিত করার। তবলিগবন্দি মুসল্লিদের পাশাপাশি আশপাশের লাখ লাখ মানুষ নিজেদের পুণ্যের অধিকারী করতে জুমার নামাজে শরিক হন। তারা অতীতের ভুল-ত্রুটির জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চান।

এবারও ২ পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত ২৬ জানুয়রী রবিবার অনুষ্ঠিত হবে। আর দ্বিতীয় পর্ব আগামী ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
শুক্রবার সকালে শীতের দাপটকে হার মানিয়ে শামিয়ানার নিচে ইবাদতে মশগুল ছিলেন মুসল্লিরা। বেলা গড়ালে পাল্টাতে থাকে ইজতেমা ময়দানের চিত্র। আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ স্রোতের মতো এসে মিশতে থাকেন ইজতেমা ময়দানে। বাস, ট্রেন ও লঞ্চে করে এসে সমবেত হতে থাকেন ইজতেমায়। তাদের হাতে জায়নামাজ, মাথায় টুপি, পরনে পাঞ্জাবি। মুখে আল্লাহু, আল্লাহু জিকির। উদ্দেশ্য জুমার নামাজে অংশ নেওয়া। একপর্যায়ে ময়দান ছাড়িয়ে মুসল্লির ভিড় ঠেকে ময়দান সংলগ্ন মহাসড়কে। এতে জুমার নামাজ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগেই বন্ধ হয়ে যায় মহাসড়ক। এ অবস্থায় কয়েক কিলোমিটার হেঁটে ইজতেমাস্থলে পৌঁছতে হয় হাজার হাজার মুসল্লিকে। তাদের মতে, জুমার নামাজে দেশের সবচেয়ে বড় জামাত হয় ইজতেমায়। তাই অনেক কষ্ট সয়ে তারা এ জামাতে অংশ নিতে ছুটে এসেছেন।
দুপুর পৌনে ২টায় নামাজ শুরু হয়ে ২টায় শেষ হয়। অনেকে বাসের ছাদেও নামাজ আদায় করেন। আশপাশের বাড়ির ছাদেও নামাজ পড়েন মুসল্লিরা। জুমার নামাজের পরপরই শুরু হয় বয়ান। গতকাল বয়ান পরিচালনা করেন মাওলানা মোহাম্মদ হোসেন। জুমার নামাজে ইমামতি করেন কাকরাইল জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা যুবায়ের।
ইবাদতে মশগুল মুসল্লিরা
তবলিগ জামাতের মুরুব্বি গিয়াস উদ্দিন জানালেন, ইজতেমার প্রথম পর্বে ৩২ জেলার কয়েক লাখ মুসল্লি মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ইবাদত-বন্দেগি করছেন। এসেছেন শতাধিক দেশের বিদেশি মুসল্লিও। তিনি জানান, তবলিগবন্দি মুসল্লিরা ফজরের নামাজের পর থেকে বয়ানে শুনেছেন। এ বয়ানে ছয় উসুলের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনা করা হয়েছে। বয়ানে ইসলাম ধর্ম, এর তরিকা ও বিধি-বিধান নিয়ে আলোচনা হয়।

আরেকজন মুরুব্বি জানালেন, বয়ানের পর তালিম হয়ে থাকে। তালিম শেষে চিল্লায় যেতে আগ্রহীদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়। যারা চিল্লায় যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে নাম লেখান, তাদের পাঠানো হয় মূল মঞ্চের পাশে তাসখিলের কামরায়। ইজতেমা শেষে সেখান থেকে ছোট ছোট দলে ভাগ করে তাদের দেশ-বিদেশে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে চিল্লায় পাঠানো হবে।
গতকাল ইজতেমা ময়দানের প্যান্ডেলের ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে বয়ান, তালিম আর নামাজের ফাঁকে ফাঁকে জিকিরে মশগুল ছিলেন মুসল্লিরা। তারা ‘আল্লাহু আল্লাহু, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ইত্যাদি ধ্বনিতে জিকির করছেন। ইবাদতের ফাঁকে তবলিগ জামাতে আসা মুসল্লিদের একটি অংশ খাওয়ার আয়োজন করে থাকেন। মুসল্লিদের জন্য এই কষ্টকেও তারা ইবাদত হিসেবে দেখেন। তাদের প্রত্যেকের চেষ্টা সুস্বাদু খাবার তৈরি করা।
জনস্রোত ইজতেমা ময়দানমুখী
জুমার জামাতে শরিক হতে টঙ্গীসহ ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও সাভার এলাকার লাখো মুসল্লি চারদিক থেকে বাঁধভাঙা স্রোতের মতো ছুটে আসেন ইজতেমা ময়দানের দিকে। সকাল থেকে হেঁটে এবং যানবাহনে মুসল্লিদের ইজতেমায় আসতে দেখা যায়। জুমার আগেই ১শ ৬০ একর এলাকাজুড়ে নির্মিত বিশাল প্যান্ডেল পূর্ণ হয়ে যায়। আজ শনিবার ইজতেমা ময়দানে যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। তবে ইজতেমামুখী জনস্রোতের চাপ আজ কিছুটা কম থাকবে। আগামীকাল রোববার আখেরি মোনাজাতে মানুষের ঢল নামবে। আশা করা হচ্ছে, এবার দুই পর্বের ইজতেমায় ৫০ লাখের বেশি মুসল্লি অংশ নেবেন।
বিদেশি ক্যাম্পের একজন জিম্মাদার জানান, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কুয়েত, কাতার, আমেরিকা, কানাডা, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০ হাজার বিদেশি মেহমান ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা
ইজতেমা ময়দান ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান, পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। হেলিকপ্টারে ও নৌপথে নিরাপত্তাকর্মীরা সক্রিয় রয়েছেন। তবলিগ জামাতের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলেও ইজতেমা আয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। হোটেলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ২৪টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা শুরু হয়েছে। চার হাজারের বেশি টয়লেট ব্যবহার উপযোগী রাখা হয়েছে। মেরামত ও সংস্কার করা হয়েছে গোসল ও ওজুখানা। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সেবা দেওয়া হচ্ছে। মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইজতেমার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় তারা সন্তুষ্ট।
দু’জনের মৃত্যু
ইবাদত-বন্দেগিরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল ওমর আলী (৪৮) ও আবদুল মজিদ প্রামাণিক নামে দু’জন মুসল্লি মারা যান। তাদের মধ্যে ওমর আলীর বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জে। অপরজনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে। জুমার নামাজের পর তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ইজতেমা ময়দানে।
