ইয়ানুর রহমান : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়ার নিজের জন্মদিন ৫টি ও স্বামী জিয়াউর রহমানের জন্মদিন ১৯ জানুয়ারি হলেও এবার পালন করা হয়েছে ১৮ জানুয়ারি। তিনি নিজের ও স্বামীর জন্মদিনের মতো ৫ জানুয়ারির নির্বাচনও পাল্টাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সফল হননি। তবে তিনি হরতাল, অবরোধ দিয়ে মানুষ হত্যা ও গাছ কেটে সফল হয়েছেন।

২৩ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার বিকালে যশোরের অভয়নগরের শংকরপাশা হাইস্কুল মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া জামায়াতের আমীর হয়ে গেছে। এই জামায়াত ইসলাম ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা বিরোধী ও মানবতা বিরোধী কার্যক্রম করেছে। নিরীহ জনগণকে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট করেছে। সেই জামায়াতকে জিয়াউর রহমান এদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। আর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় গিয়ে জামায়াতের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছিল। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী নিজে ম্যাট্রিক পাস করতে পারেননি। তাই দেশের ছেলেমেয়েরা যাতে শিক্ষিত হতে না পারে সেজন্য তিনি পরীক্ষার সময় হরতাল অবরোধ দেন। কিন্তু এরপরেও প্রতিবারের মতো এবারও বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে বিএনপি নেত্রীকে ফোন করা হলেও তিনি আসেননি। হরতাল প্রত্যাহার করেননি।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী রেজা রাজুর সভাপতিত্বে সভায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন এদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতানায় পরিচালিত হবে। দেশের মানুষ কোন মারামারি, হানাহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ চায়না। তিনি বলেন, ‘উনার গোপালগঞ্জের উপর খুব রাগ। কারণ এ গোপালগঞ্জেই জন্ম নিয়েছিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান, যার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছিল।’ প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রীর উদ্দেশ্য ব্যঙ্গ করে বলেন ‘গোলাপী রে গোলাপী- নির্বাচনের ট্রেন তুই এবার মিস করলি’।
শেখ হাসিনা তার সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, বন্ধ হওয়া মংলা বন্দর, বন্ধ হওয়া ট্রেন ও বিমানবন্দর চালু করা হয়েছে। এছাড়া কৃষকরা এখন সময়মত সার পান, ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নেন। তিনি বলেন ক্ষমতায় এসে তিনি ১০ হাজার মেগাওয়ার্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছেন। আগামীতে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হবে।

সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার ও অভয়নগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বাবুল।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, যশোর জেলা পরিষদ প্রশাসক শাহ হাদীউজ্জান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হোসেন এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য এসএম কামাল হোসেন, যশোর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতান, যশোর-৩ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহম্মেদ, যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়, যশোর -১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর -২ আসনের সংসদ সদস্য সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটো, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এসএম কামরুজ্জামান চুন্নু, শহিদুল ইসলাম মিলন, সাধারন সম্পাদক শাহিন চাকলাদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলী রায়হান, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক আব্দুল মজিদ, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সহ সম্পাদক অসীত বরণ বিশ্বাস, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান মিঠু, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি জয়দেব নন্দী, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল প্রমুখ। এরআগে তিনি ক্ষতিগ্রস্থ মালোপাড়া পরিদর্শনে যান। সেখানে ৫১ পরিবারের মাঝে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার চেক বিতরণ করেন। বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন দেশের মানুষের শান্তি প্রতিষ্ঠায় যা যা করার দরকার করবেন। মালোপাড়ার ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশ্য বলেন ‘এই মাটি আপনাদের। তাই নিজেদের অধিকার নিয়েই বসবাস করতে হবে।’ জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমানের পরিচালনায় এসময় বক্তব্য রাখেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর দাস রতন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে শিল্পশহর অভয়নগরের নওয়াপাড়াসহ আশপাশের এলাকা উৎসবের শহরে পরিণত হয়। খুলনা বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা সকাল থেকে ঢাক ঢোল ও বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। মিছিল শ্লোগানে মুখরিত করে তোলেন সমাবেশস্থল। প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে।
