তাপস চন্দ্র সরকার : সাদা মনের মানুষ ও কুমিলার কৃত্বি সন্তান ডা: মানবেন্দ্র নাথ সরকার ওরফে ডা: যুগল ব্রহ্মচারী (৫৮) মুরাদনগর তথা বৃহত্তর কুমিলা জেলার একজন খ্যাতিমান মহৎচিকিৎসক। তাঁর মত একজন কীর্তিমান চিকিৎসকের জন্ম এ কুমিলা’র মাটিতে। তিনি তিন যুগেরও বেশি সময় জুড়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিচরণ, তিনি কেবল একজন চিকিৎসকই নন, সামাজিক ব্যক্তিত্বও বটে। তিনি বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ মুরাদনগর উপজেলা শাখার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এই কর্মযোগী কুমিলা’র মুরাদনগর উপজেলার মোচাগড়া গ্রামে এক সভ্রান্ত পরিবারে ১৯৫৫সনের ১০ জানুয়ারী জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা স্বর্গীয় সুধীর রঞ্জন সরকার ও মা স্বর্গীয়া রেনু প্রভা সরকার এর ঘর আলোকিত করে এই কীর্তিমান মহান চিকিৎসক এ ধরাধামে আর্বিভূত হয়েছেন। তাঁর পিতা ছিলেন বিদেশী সংস্থা’র একজন কর্মকর্তা এবং মা ছিলেন একজন গৃহিনী। ডা. মানবেন্দ্র নাথ সরকার @ যুগল ব্রহ্মচারী ৪র্থ শ্রেনীতে লেখা-পড়া করাকালীন সময়ে ৯ বৎসর বয়সে তাঁর মাতা মারা যান এবং ১৯৭১সালে তাঁর পিতা স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ হারান। দু’ভাই-পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর অপর ভাই চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা আছেন। তিনি ১৯৭০ইং সনে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এস.এস.সি পাশ করেন এবং চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ থেকে ১৯৭২ইং সনে বিজ্ঞান বিভাগে এইচ.এস.সি পাশ করেন।
ডা: মানবেন্দ্র নাথ সরকার ওরফে ডা: যুগল ব্রহ্মচারী ছাত্রজীবন থেকেই অত্যন্ত কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে ১৯৭৮সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি এম.বি.বি.এস ডিগ্রী অর্জন করার পর কিছু দিন সরকারী চাকুরী করার পর ওই চাকুরী ছেড়ে দিয়ে চিকিৎসক হিসেবে বিদেশী ফার্মে ২/৩বৎসর চাকুরী করেন। পরবর্তীতে এ মহা মানব তাঁর গুরুদেব শ্রী শ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরম হংস দেব এর মুখনিশ্রিত বাণী “তোমার জীবন সবার তরে, একা তোরি নয়। সবার তরে জীবন ধরে হও, আনন্দ ময়।।” -এই বাণীটি বুকে লালন করে ১৯৮৪ইং সনে কুমিলা জেলার মুরাদনগর উপজেলার রহিমপুর অযাচক আশ্রমের সেবক হিসেবে যোগদান করেন এবং মানব সেবার ব্রত নিয়ে এ ফ্রি চিকিৎসাসহ বিনামুল্যে ঔষধ সরবরাহ করে মুরাদনগর উপজেলা তথা বৃহত্তর কুমিলা জেলার শত শত গরীব-দুঃখী, অসহায় মানুষের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।
তাঁর হাতে ছোঁয়ায় বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ করে সুন্দর জীবন যাপন করিতেছেন জেলার হাজারো মানুষ। এ চিকিৎসক দীর্ঘ তিন যুগের উর্দ্ধকালীন সময় ধরে অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সহিত এভাবেই মানব সেবা করছেন প্রতিনিয়ত। দিন দিনই সফল চিকিৎসক হিসেবে তাঁর সুনাম ও খ্যাতি কুমিলা তথা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি প্রথমে ২/= টাকায় রেজিষ্ট্রেশন করে রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে ৫/= টাকা এবং বর্তমানে ১০/= টাকায় বৃদ্ধি করা হয়।
এছাড়াও অযাচক আশ্রমে ২৫জন পাহাড়ি অনাথ ছেলেকে লেখা-পড়া, খাওয়া-দাওয়াসহ যাবতীয় অর্থ বহন করেন এ মহা মানব। এ যেন আরেক মানব সেবা। মুরাদনগর উপজেলার গরীব ও বেকার ছেলে-মেয়েদের কর্মস্থান হিসেবে ধুপ-কাঠি ও মোমবাতি তৈরী’র কারখানাও চালু করেছেন তিনি। এ কারখানায় প্রায় ৩৫জন গরীব ও বেকার ছেলে-মেয়ে কাজ করেছে প্রতিদিন। ওই আশ্রমে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা প্রার্থনা, সপ্তাহে ১দিন সমবেত প্রার্থনা এবং মাসিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও বিপুল উৎসাহউদ্দীপনার মধ্যদিয়ে বাৎসরিক উৎসবও অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ওই বাৎসরিক উৎসবে হাজারো ভক্তশ্রোতা ও পূর্ণার্থীর সমাগম ঘটে। এছাড়াও ওই বাৎসরিক উৎসবানুষ্ঠানে সকল ধর্মের শত শত মানুষ অংশ গ্রহণ করে।
গেলো কয়েক বছর আগে তাঁর কর্মের স্বীকৃতি ও জনকল্যাণে তাঁর অতুলনীয় অবদানের জন্য তাঁকে দেশের বে-সরকারী চ্যানেল ইটিভি ও প্রথম আলো “সাদা মনের মানুষ” হিসেবে ভূষিত করেন।
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞা সমৃদ্ধ, সিদ্ধহস্ত, অপ্রতিদ্বন্ধী সর্বজন প্রশংসিত ডা: যুগল ব্রহ্মচারী। মানব সেবার ব্রত নিয়ে নিজেকে উৎসর্গ করার প্রয়াস এ চিকিৎসকের। তিনি (ডা: যুগল ব্রহ্মচারী) হলেন চিকিৎসা জগতে একজন সফল চিকিৎসক। প্রত্যেহ সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত একটানা রোগী দেখেন এ মহা মানব।
ডা: মানবেন্দ্র নাথ সরকার ওরফে ডা: যুগল ব্রহ্মচারী বলেন- মানুষকে ভালোবাসলেই মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন- আমার জন্য আর্শিবাদ করবেন যেন সর্বদা মানব সেবায় নিজকে নিয়োজিত রাখতে পারি।
লেখক পরিচিতি: সংগঠক ও সংবাদকর্মী।
ই-মেইল : tapash.sarker10@gmail.com