কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের কেশবপুরে যৌতুকের দাবি পূরন করতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বামীর ঘর করা হলো না বাল্য বিয়ের শিকার হওয়া রেশমা খাতুনের। স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে রেশমা খাতুন গত ১ সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। এদিকে আসামীরা বেপরোয়া হয়ে বাদিকে আদালত থেকে মামলা তুলে নিতে একের পর এক হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে ওই গৃহবধূ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ বছর আগে উপজেলার আউলগাতি গ্রামের আব্দুর রউফ মোড়লের মেয়ে রেশমা খাতুন যখন ৩য় শ্রেণির ছাত্রী তখন সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের ঝিকরা গ্রামের শহিদুল ইসলাম খাঁর ছেলে তরিকুল ইসলামের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর ঘর সংসার করা কালে তাদের ঘরে ইমন (৩) নামের একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা ভাবনা করে আব্দুর রউফ মোড়ল নগদ ১ লাখ টাকা সোনাদানা সাংসারিক আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্রসহ প্রায় ২লাখ ৫০ হাজার টাকার মালামাল প্রদান করেন। এরপরও তার শ্বশুর শাশুড়ীর প্ররোচনায় যৌতুকলোভী তরিকুল ইসলাম আরও ১ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে রেশমা খাতুনকে বিভিন্ন সময়ে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করতে থাকে। স্বামীর শত নির্যাতন সহ্য করেও শিশুপুত্র ইমনের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে রেশমা খাতুন ঘর সংসার করতে থাকে। গত ১৩ জানুয়ারী সন্ধ্যায় তরিকুল ইসলাম ও তার মা বাবা রেশমা খাতুনের কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করে। এত টাকা তার দরিদ্র পিতার পক্ষে দেয়া সম্ভব না বলে জানালে এক পর্যায়ে রেশমা খাতুনকে তারা কাঠের চলা দিয়ে এলোপাতাড়ি ভাবে পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা জখম করে গলায় কাপড় ঁেপচিয়ে ঘরের আড়ায় ঝুঁলিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। মুমুর্ষ অবস্থায় এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করলেও যৌতুকের লালসা মেটাতে শিশুপুত্র ইমনকে কেড়ে নিয়ে এক বস্ত্রে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। খবর পেয়ে তার মা বাবা রেশমা খাতুনকে উদ্ধার করে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার অবস্থা আশঙ্কা জনক। এ ঘটনায় ১৪ জানুয়ারী রেশমা খাতুন বাদি হয়ে তার স্বামী তরিকুল ইসলাম, শ্বশুর শহিদুল ইসলাম খাঁ, শাশুড়ী নূরজাহান বেগমকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কেশবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। যার নং-১৩।
এলাকার মেম্বার সাগর খান মনা বলেন, মেয়েটির ওপর তারা প্রায় সময় নির্যাতন করত। বিষয়টি নিয়ে ইতোপূর্বে কয়েকবার শালিস করা হয়েছে। কিন্তু তরিকুলের পরিবার শালিস মানে না। তাই মেয়েটিকে আইনের আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আসামী ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। তারা পলাতক তাই আটক করা যাচ্ছে না।