মজনু, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : একের পর এক দূর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় নির্ঘূম রাত কাটছে রূপগঞ্জবাসীর। ডাকাত তাড়াতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন ১০ গ্রামের মানুষ। কয়েক হাজার মানুষের বসবাস করা এই গ্রাম গুলোতে প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন বাড়িতে হানা দিচ্ছে ডাকাত রূপী হায়েনারা। লুটে নিচ্ছে ধন সম্পদ, বাধা দিলেই চালাচ্ছে নির্যাতন। আর এর প্রতিবাদ করতে গ্রামবাসীরা নিজেরাই তৈরী করেছেন প্রতিরোধী। থানা পুলিশকে একাধিক বার অভিযোগ করলেও কোনপ্রকার প্রতিকার মেলেনি এখনও। যেন দেখার কেউ নেই। ঘটনার পেয়ে তারাব পৌরসভার ১০ টি গ্রামে প্রতিটি ঘর থেকেই পালা করে প্রতিদিন রাতে ৩০ জন করে যুবকরা দিচ্ছেন পাহারা। তারাব পৌরসভার মাসাব, দক্ষিণ মাসাব, তেতলাব, কান্দাপাড়া, ঐরাব, নাগেরবাগ, বৌবাজার, শান্তিবাগ, উত্তর মাসাব ও মদিনাবাগ গ্রামের লোকজন নিজেদের উদ্যোগেই করেছেন এ পাহারার ব্যবস্থা। প্রতিদিন রাত ১০টার পর থেকে ১০ জন করে ৪০ জনের ৪টি গ্রæপ টর্চ লাইট, লাঠি-সোটা ও দেশিয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে গ্রাম গুলোতে পাহারা দিচ্ছেন। গত ১ মাসে দশটি গ্রামের প্রায় ২০টি বাড়িতে একের পর এক ডাকাতরা হামলে পড়ে। অনেকের বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সা লুট করে নেয়ার পর গৃহকর্তা ও বাড়ির লোকজন বাধা দিলে ১০/১৫ জনের সশস্ত্র ডাকাত দল তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে প্রায় ২০/২৫ জন লোক ডাকাতদের হামলায় আহত হয়। একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটতে থাকলে এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় মৌখিক ও লিখিত ভাবে থানায় অভিযোগ করলেও রূপগঞ্জ থানা পুলিশ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণ দেখিয়ে তাদের অভিযোগ গুলো আমলে না নেওয়ার ফলে গত ১ মাসে এ দশ টি গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। পরে বাধ্য হয়ে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে এই দশটি গ্রামের লোকজন একত্রিত হয়ে ডাকাতি রোধে রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করে। আর এতেই বন্ধ হয়ে যায় ডাকাতি। ১০ জনের ৪টি দল ১০টি গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে রাত ১০টার পর থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত পাহারা দেন। প্রচন্ড শীত আর কুয়াশাকে উপেক্ষা করে ঐ সব গ্রামের যুবকরা এ পাহারার কাজে নিয়োজিত আছে। ডাকাতের কবলে পড়া উত্তর মাসাব গ্রামের আব্দুল হামিদ জানান, ডিসেম্বরের ২৩ তারিখে ১৪/১৫ জনের একটি ডাকাত দল বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় ধারালো অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রাত ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে তার ঘরের দরজা ভেঙ্গে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। গৃহকর্তা বাধা দিতে গেলে সশস্ত্র ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে ঘরের সবাইকে জিম্মি করে ঘর থেকে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা পয়সা সহ মূল্যবান জিনিস পত্র লুটে নেয়। ২০-২৫ বছর বয়সী এই ডাকাত দল প্রায় প্রতিদিনই এভাবেই বিভিন্ন গ্রামে হানা দিচ্ছে। পর পর কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা গুলোর খুঁজ নিয়ে জানা যায় প্রায় একই বয়সের এই ডাকাত দলরা বিভিন্ন এলাকায় এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। ডাকাতের কবলে পড়া লোকজন জানান, যানবাহন ও চলাচলের অনুপযোগী এসব এলাকা গুলোতে রাতে পুলিশ টিমের কোন গাড়ি না ঢুকায় ও বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন বাড়ি হওয়ায় কোন বাড়িতে ডাকাতি করে অনায়াশেই তারা পালিয়ে যাচ্ছে। ডাকাত দল গুলো গোলাকান্দাইল এলাকার নাগের বাগ থেকে এসে এ গ্রাম গুলোতে ডাকাতরি ঘটনা ঘটাচ্ছে। একের পর এক এসব ঘটনার পরে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী এই ব্যবস্থা নিয়েছে। ফলে গত ১৫ দিনে এই ১০টি গ্রামের কোন বাড়িতে সংগঠিত হয়নি ডাকাতি। নিম্ন আয়ের ও শ্রমিক শ্রেনীর লোকজন রাত জেগে এ পাহারার ফলে প্রায়ই বন্ধ করতে হচ্ছে শিল্প কারখানার ডিউটি। ফলে তাদের সংসারে দৈনন্দিন খরচ মেটাতে খিমশিম খাচ্ছে। অনেক শ্রমিককেই কর্মক্ষেত্রে না যাওয়ার কারনে চাকরিচুত্য হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ফলে জানমাল ও সম্পদ রক্ষার জন্য চাকরি হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে থাকার উপক্রম হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি প্রতিদিন ফাঁড়ি, র্যাব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন পালা করে ঐ এলাকায় টহল দিলে রোধ হবে ডাকাতি, স্বস্তি পাবে লোকজন।