শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া (খুলনা) : বাবা-মার দেয়া নাম আহম্মদ। ধর্মীয় অর্থে নামটির তাৎপর্য অনেক। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে ছোটবেলা থেকেই কিছু উৎসুক মানুষ তার নামের আগে খেপা লাগিয়ে আনন্দ পেতো। এখন কেউ বলে খেপা আহম্মদ, আবার কেউ বলে পাগলা আহম্মদ। ডুমুরিয়া উপজেলার খলশী গ্রামের সত্তরোর্ধ পাগলপ্রায় এই মানুষটি আসলে সরল প্রকৃতির। আহাম্মদের আয়-উপার্জনের অন্য কেউ না থাকায় সত্তরোর্ধ বয়সেও তাকে কাঠ কেটে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে। মাথা গুজার ঠায় না থাকায় রাত্রিযাপন করছে অন্যের বাড়ির বারান্দায়। হতদরিদ্র ছন্নছাড়া এই মানুষটির ভাগ্যে জুটেনি আজও কোন সরকারী সাহায্য সহযোগিতা। আর কত বয়স হলে, কত দিন দরিদ্র হলে সরকারী সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়া যায়- এটাই এখন প্রশ্ন। ছোটবেলা থেকেই তার সামনে কেউ কোনো কথা অতিরঞ্জিত করে বা লাম্বাকথা বললে তিনি উত্তেজিত হয়ে হাতের লাঠি দিয়ে তাকে তাড়া করেন। তাছাড়া স্বাধীনতাবিরোধী বা আওয়ামী লীগ বিরোধী কোনো কথা তার কানে গেলেই তার প্রতি বিরুপ মনোভাব প্রকাশ করেন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতিদরিদ্র বাবা-মা’র সন্তান নিরক্ষর আহম্মদ আলী ফকির ছোটবেলা থেকেই খেপাটে প্রকৃতির। স্বাধীনতার আগপর্যন্ত খলশী গ্রামে তাদের বাড়িঘর ছিলো। পরে সবকিছু হারিয়ে এর-তার বাড়ির বারান্দায় রাত যাপন করেন। তার কোনো সংসারও নেই। প্রতিদিন কুড়াল দিয়ে পরের বাড়িতে সারাদিন কাঠ কেটে যা আয় করে, তা দিয়ে খাবার কিনে খায়। এমন প্রকৃতির আহম্মদকে ইচ্ছাকৃত উত্তেজিত করে ডুমুরিয়া বাজারের অনেকেই এক প্রকার বিকৃত আনন্দ পায়। বর্তমানে তিনি ডুমুরিয়া বাজারে প্রয়াত চেয়ারম্যান ও কৃষক নেতা শেখ আবদুল মজিদের বাড়িতে রাত কাঁটান। সম্প্রতি দেশের সবখানেই এলাকার কিছু উঠতি নেতা বা সম্ভব্য ভোটপ্রার্থী প্যানাপোস্টার দিয়ে এলাকাবাসীর কাছে দোয়া চাচ্ছে বা শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। ওইসব প্রচার পাগলকে বিদ্রæপ করতে ডুমুরিয়া বাজারের কিছু ব্যতিক্রমি যুবক এই আহম্মদ পাগলার হাতে লাঠি নিয়ে তাড়া করা ছবি দিয়ে ‘আহম্মদ ভক্ত বাহিনী’র নামে কয়েকটি প্যানাপোস্টারও টানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে হারুর-আর-রশীদ খান বলেন, খেপাটে মানুষটাকে খেপিয়ে ডুমুরিয়া বাজারের অনেকেই আনন্দ পায়। কিন্তু তারমতো একজন বৃদ্ধের পেটে খাবার আছে কী না, তার খবর কেউ নেয় না। সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গাজী মোহাম্মদ রফি বলেন, সরকারের এতো এতো সহয়তা কর্মসূচি থাকলেও আহম্মদ ভাই’র মতো এমন একজন ছিন্নমূল মানুষ যে আজও কোনো সরকারি ভাতা বা বয়স্কভাতা পায় না জেনে খুব খারাপ লাগছে। সমাজসেবি মোশারফ হোসেন বলেন, আর কত বয়স হলি চেয়ারম্যান-মেম্বররা আহম্মদরে ভাতা দেবে তা বুঝি নে। তাছাড়া এলাকার মেম্বররা তারে ভোটারও করেনি।কোনো সরকারি ভাতা পান কী না জানতে চাইলে আহম্মদ আলী ফকির বলেন, ‘আমি বাপু পরের বাড়ি কাঁঠ ফাঁড়ে খাই। আমি কারো ধার ধারি নে। কেউ অন্যায় করলি তা আমি সহ্য করবো না। কিন্তুক আমারে কেউ কোনো ভাতা-ঠাতা দে না।’
ডুমুরিয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা মোশারফ হোসেন বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এখনও কোনো কার্ড পাইনি। এবার কার্ড পেলে প্রথমেই আহম্মদ ভাইকে দেওয়া হবে। ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী আবদুল হাদী বলেন, এ বিষয়টা আমার জানা ছিলো না। তবে এবার যাতে পায় তার ব্যবস্থা আমি করবো।