রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের প্রথম প্রদক্ষেপ হিসেবে ইউপি পর্যায়ের তথ্যসেবা প্রদান কেন্দ্র চালু করা হয়। এরই অংশ হিসাবে “জনগনের দ্বোর গড়ায় তথ্যসেবা” এই শ্লোগান নিয়ে গত ২০১০ সাল থেকে সারা দেশের ন্যায় নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে তথ্যসেবা প্রদানের কার্যক্রম শুরু করা হয়। এই সব তথ্য সেবা কেন্দ্র হাতের নাগালে থাকায় সহসায় সকল বিষয়ের তথ্যের সেবা নিয়ে উপকৃত হচ্ছে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকা সহ হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। কোন তথ্য জানার জন্য এবং কোন তথ্যের সঙ্গে নিজেদেরকে কিভাবে সংশ্লি¬ষ্ট করতে হয় সে বিষয়ে সাধারণ জনগনের মাঝে সেবা দানকারীরা সার্বক্ষনিক নিজেদেরকে নিয়োজিত করে রেখেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন অফিস-আদালতের দুয়ারে গিয়ে আর ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় না এই সব সেবা কেন্দ্র থেকে সেবা নেওয়া গ্রাহকদেরকে।

এই বিষয়ে ১নং খট্টেশ্বর রাণীনগর ইউপি তথ্যসেবা কেন্দ্রের সেবা দানকারি আঃ আওয়াল, ২নং কামিশপুর ইউপি তথ্য সেবা দানকারি শরিফুল ইসলাম, ৭নং একডালা ইউপি তথ্যসেবা দানকারি ফিরোজ আহমেদ ও ৮নং ইউপি তথ্যসেবা দানকারি রুহল আমিনসহ অন্যান্য তথ্য সেবা কেন্দ্রের সেবা দানকারিরা জানান, তারা এই সব সেবা কেন্দ্র থেকে নতুন করে জন্ম নিবন্ধন কার্ড তৈরি, বিদেশে গমন করার জন্য সরকারি ভাবে রেজিস্ট্রেশন, বিদেশ গমন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য প্রদান, পাসর্পোট করার ফরম তৈরি, বিভিন্ন প্রকারের লাইন্সেস প্রদান, বিদেশে অবস্থানরত স্বজনদের সঙ্গে কথা বলা, বিভিন্ন সরকারি অফিস-আদালতে কিভাবে কোন সুবিধা নিতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি সহ সাধারণ মানুষদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়। এছাড়াও সরকার কর্তৃক প্রদানকৃত প্রজেক্টর দ্বারা এলাকার বিভিন্ন স্থানে ইউপি জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে গ্রামের মহিলাদের মধ্যে গন সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে বাল্যবিয়ে, ৫বছরের কম বয়সের ছেলে-মেয়েদের প্রাথমিক স্কুলে পাঠানো সহ বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক ছোট নাটিকা (বাইস্কোপ) প্রদর্শন করা হয়। বিভিন্ন কাজের খরচ হিসেবে সরকার কর্তৃক শুধু মাত্র নির্ধারিত মূল্য নিয়ে সেবা দান করা হয়। ১৮ বছরের উর্দ্ধে নতুন ভাবে জন্ম নিবন্ধন করার জন্য সরকারি খরচ হিসাবে ৫০ টাকা করে নেওয়া হয়।
সেবা দানকারিরা অভিযোগ করে বলেন যে, প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায় ইন্টানেটের গতি অনেক সময় খুবই কম থাকে এবং বিদ্যুতের দীর্ঘ লোডশেডিংয়ের কারণে অনেক সময় অনিচ্ছা সত্তে¡ও ঘন্টার পর ঘন্টা গ্রাহকদের বসে রাখতে হয়। তাই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষরা যদি আরও আধুনিক সরঞ্জাম আমাদেরকে প্রদান করে তাহলে এই সেবা প্রদান কাজ আরও জনগনের উপকারে আসত । তারা আরও অভিযোগ করে বলেন তারা এখনও পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোন সম্মানি ভাতা পান না । তাই তাদের জন্য যদি সরকারের পক্ষ থেকে ভাতার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে এই সেবা প্রদান কাজে আরও অনেকেই উৎসাহীত হবে।
তথ্য সেবা কেন্দ্র হতে সেবা নিতে আসা একডালা ইউপি’র চুনিয়াপাড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন (৩২) জানান, তিনি তার মেয়ের জন্য নতুন করে জন্ম নিবন্ধন করা সহ বিদেশে গমন সম্পর্কে অন্যান্য তথ্য জানার জন্য এসেছেন। তার মতে সাধারণ জনগন এই তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন বিষয়ে বিনা মূল্যে সেবা নিতে পারছে বলে তারা বিভিন্ন ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাচ্ছেন। তাই সরকারের এই প্রদক্ষেপ নিঃসন্দেহে ভালো।
১নং খট্টেশ্বর ইউপি’র সিম্বা গ্রামের তুষার বুলবুল (২৮) ও সাইদুল ইসলাম (৩০) জানান, তিনি প্রথমবার দালালদের হাতে পড়ে বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। কিন্তু এই ইউপি তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে বিদেশে যাওয়ার জন্য সরকারি ভাবে স্বল্প খরচে রেজিঃ করেছেন। এছাড়াও পাসপোর্ট করতে সুদুর রাজশাহী গিয়ে ফরম পূরন ও পাসপোর্ট করা অনেক সময় ও ব্যায় বহুল ছিল। কিন্তু হাতের নাগালে তথ্যসেবা কেন্দ্র থাকায় যথা সময়ে আমরা এ সেবা পাচ্ছি।
৮নং মিরাট ইউপি’র আতাইকুলা গ্রামের মছির উদ্দিন (৫২) বলেন আমার দুই ছেলে বিদেশ থাকে। আমরা অশিক্ষিত মানুষ বাবা কেমন করে মোবাইলে কথা বলতে হয় তা আমরা জানি না। ছেলেদের সঙ্গে কথা বলার জন্য এই সেবা কেন্দ্রে এলে আমি আমার ছেলেদের দেখতে পাই এবং তাদের সঙ্গে কথাও বলতে পারি।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম পাটওয়ারী বলেন, এই তথ্য সেবা দান কেন্দ্রকে কিভাবে আরও উন্নত করা যায় ও জনগণের আরও কাছে পেীছে দেওয়া যায় সে বিষয়ে সরকার জোড় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই সেবা দান কেন্দ্র থেকে একটি বাড়ি একটি কামার প্রজেক্টের সদস্য সহ জনগনের কাছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থের লেনদেন কার্যক্রম সহ আরও নতুন কিছু সুবিধা অচিরেই চালু করার পরিকল্পনা সরকারের আছে। এই সব নতুন কার্যক্রম গুলো চালু হলে প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার জনসাধারণরা হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পাবে এবং আরও বেশি উপকৃত হবেন বলে তিনি আশা করছেন। সেবা দানকারি কর্মীদের ভাতা দেওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন যেহেতু সরকার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা বাবদ প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক অর্থ বিনিয়োগ করছেন তাই এই মুহুর্ত্বে তাদের কে সরকারি ভাবে কোন ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা নেই কিন্তু এই সব কেন্দ্র থেকে সরকারি খরচ বাদে বিভিন্ন কাজ বাবদ যে অর্থ আয় হয় তা থেকেই তাদের জন্য এক সম্মানজনক ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।
