ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী : বাড়ীতে থেকেও হামলার ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে বাঘা উপজেলার সংখ্যালগু হিন্দু স¤প্রদায়। এদের নিরাপত্তায় এলাকায় টহল দিচ্ছে বিজিবি-পুলিশ।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন ও আগের দিন উপজেলার তুলশিপুর, হরিপুর ও আড়পাড়া এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের সাথে আওয়ামীলীগের নাশকতার ঘটনায় চলে দু’পক্ষের পাল্টা-পাল্টি আক্রমন। বাড়ির আঙ্গিনায় আগুন, ককটেল বিস্ফোরন, মারপিট ও গাছপালা কেটে ফেলাসহ গরু ছাগল নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিছিন্ন এ ঘটনার পর থেকে উপজেলার হিন্দু স¤প্রদায়সহ আতংক ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের গ্রামগুলোতেও। আওয়ামীলীগের পক্ষ হতে ৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে উপজেলার হরিপুর, তুলশিপুর ও গঙ্গারামপুর ও আড়পাড়াসহ কয়েকটি গ্রাম।
সরেজমিন এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থী আলহাজ্ব শাহরিয়ার আলম এমপির বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেয়, একই দলের সাবেক এমপি আলহাজ্ব রাহেনুল হক রায়হান। ভারত থেকে আসা রিফুজি অধ্যাষিত গঙ্গারামপুর ও তুলশিপুর এলাকার বিএনপির কতিপয় লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারনা চালায়। এ নিয়ে হিংসায় জ্বলে উঠে সরকার দলীয় প্রার্থীর লোকজন। তারা যাতে ভোট কেন্দ্রে আসতে না পারে, এর কৌশল হিসাবে ভোটের আগের দিন বিএনপি সমর্থিত ফরজ নামের এক লোকের একটি গরু নিয়ে যায় আওয়ামী অধ্যাষিত হরিপুর ও তুলশিপুরের লোকজন। পরে আওয়ামী লীগের একটি ছাগল নিয়ে যায়,বিএনপি সমর্থিতরা। এ ঘটনার সুত্র ধরে নির্বাচনের দিন নাশকতার ঘটনা ঘটে। তবে তারেক রহমানের ভিডিও বার্তার পর, ভোল পাল্টিয়ে নির্বাচন প্রতিরোধে রাস্তায় ব্যারিকেট ও বাড়ির আঙ্গিনায় খড় কুটায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে আতংক সৃষ্টি করে বিএনপি সমর্থীতরা। সোয়া ১২ টায় তুলশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কে বা কাহারা একটি ককটেল বিষ্ফোরনের ঘটনা ঘটায়। কেন্দ্র ঠেকাতে সেখানে জড়ো হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। ভোট কেন্দ্র থেকে তিন কিঃ মিটার দুরে একটি বিলের মধ্যে অবস্থান নেয় তুলশিপুর ও গঙ্গরামপুর এলাকার বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ৫/৭ শত লোক।
ককটেল বিষ্ফোরনের ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করে মনিগ্রাম ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাউসার আলী ও সেক্রেটারি বাবুল হোসেন জানান, বিএনপি নেতা নজরুল মেম্বর, গোলাম, রফিকুল ফজের আলীর নের্তৃত্বে ৫ /৭ শতাধিক লোক নাশকতার সৃষ্টি করে আওয়ামী সমর্র্থিত হরিপুর গ্রামে আক্রমন চালিয়ে জাকির, জিলু, তুলশিপুর গ্রামের আজিবার ও বাকড়া গ্রামের জালালকে মারপিট করে গুরুতর জখম করে। এলাকায় তান্ডব চালিয়ে ১৭ জনের ৪২৩ টি আম গাছ, ৯ জনের ৪৭৭ টি মেহগিনি গাছ কেটে ফেলে এবং ৪টি গরুসহ ৬৯ টি ছাগল নিয়ে যায়। তাদের অভিযোগ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন ভোট কেন্দ্রের আশে পাশে থাকলেও গ্রামের ভেতরে আসেনি কেউ।
এদিকে ককটেল বিষ্ফোরনের ঘটনায় বিএনপি জড়িত নয়- দাবি করে বিএনপি নেতা মনিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আকবর আলী জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনকে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাঁধা প্রদান করে সরকার দলীয় প্রার্থীর লোকজন। পরে ককটেল বিষ্ফোরনের ঘটানো ঘটিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে দোষারুপ করলে অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে। অপ্রীতিকর ঘটনার প্রকৃত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার দাবি করেন, উপজেলা,বিএনপির সভাপতি নুরুজ্জামান খান মানিক দাবি করেন
মনিগ্রাম ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মুক্তার হোসেন জানান, নির্বাচনের পরদিন সন্ধ্যার আগে বিএনপি সমর্থীত ১৬ জনের ৪১৯ টি আমগাছ কেটে ফেলেছে আওয়ামীলীগের লোকজন। তিনিসহ অন্যরা জানান, সোমবার বিকেলে নব নির্বাচিত এমপি হরিপুর এলাকায় স্থানীয় আ’লীগের লোকজনের সাথে সমাবেশ করাকালিন সময়ে ওই গাছগুলো কেটে ফেলা হয়। এ সময় আ’লীগ নেতা বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলী,মাসুদ রানা তিলু,সাবেক মেম্বর জিন্নাত আলীসহ দলীয় নের্তৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে, নাশকতার বিরুদ্ধে দলীয় লোকজনকে সোচ্চার হওয়ার আহŸান জানিয়ে প্রশাসনকে আসামীদের গ্রেফতারের জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হয় ।
অন্যদিকে বাউসা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি এখলাস আহমেদ জানান, নির্বাচিনের দিন আড়পাড়া গ্রামের স্থানীয় আ’লীগ নেতা আফতাব মন্ডল,ফারুক ও জিলুর নের্তৃত্বে শতাধিক লোকজন ওই গ্রামের সাত্তার নামের বিএনপির এক কর্মীকে মারপিট করে তার ঘর-বাড়ী পুড়িয়ে দিয়েছে এবং বাড়ী থেকে নগদ ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকাসহ টিভি,ল্যাপটপসহ বাড়ীর আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে। ওই গ্রামের আ’লীগ নেতা ফারুক জানান,ভোটের আগের দিন রাতে অরুনের বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিএনপির লোকজন। পরের দিন সাত্তারের ছেলে পরিতোষ নামের এক সংখ্যালঘুকে মারপিট করলে সাত্তারের বাড়ীতে হামলা চালায় আ’লীগ সমর্থীত লোকজন।
গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মুসলমান ধর্মীয় আওয়ামী লোকদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও হামলার শঙ্কায় রয়েছে সংখ্যালঘু হিন্দু স¤প্রদায়।
বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল খায়ের জানান,কেন্দ্রে নাশকতার ঘটনা এড়াতে কেন্দ্র ঠেকাতে ব্যস্ত ছিল আইন র্শঙ্খলা বাহিনীর লোকজন। এ সুযোগে হরিপুর গ্রামে তান্ডব চালিয়েছে তারা। বিছিন্ন ঘটনায় আ’লীগের দায়েরকৃত ৬ টি মামলায় অজ্ঞাতসহ আসামী রয়েছে ৩০০ জন। ভোটের দিন বিছিন্ন ঘটনা ঘটলেও বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আইন র্শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সংখ্যালঘুদের বিশেষ নিরাপত্তার জন্য এলাকায় বিজিবি- পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযান চালানোর পর আতœগোপন করেছে মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।