ইমরান হোসাইন, তানোর : রাজশাহীর তানোরে চলতি শিক্ষাবর্ষকে টার্গেট করে সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলার অধিকাংশ স্কুুলে অবৈধ নোট-গাইড তালিকাভুক্তির প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এসব অবৈধ নোট বই ক্রয় করতে শিক্ষার্থীদের হাতে স্লিপ ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে নিরুপাই শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কথা রাখতে নোট-গাইড ক্রয়ে ব্যস্ত হয়ে অভিভাবকদের তাগাদা দিচ্ছেন।
আর এই প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়ন করতে কথিত প্রকাশনী সংস্থার একশ্রেণীর প্রতিনিধি ও স্কুল শিক্ষকরা যোগসাজশ করে এসব অনুমোদনহীন নোট-গাইড বিক্রি করতে মাঠে নেমেছেন। এনিয়ে বেশ কয়েকদিন আগে উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির লোকজন সকল স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে গোপন বৈঠক করেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলার প্রাইমারী ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক সমিতির লোকজন বিভিন্ন প্রকাশনীর কাছ হতে মোটা অঙ্কের অর্থ ঘুষ নিয়ে তাদের আস্থাভাজন লাইব্রেরীর গোডাউনে নিষিদ্ধ নোট-গাইডসহ এনসিটিবির অনুমোদনবিহীন সহায়ক পাঠ্যপুস্তক মজুদ করা শুরু করেছেন। এরই অংশ হিসেবে নিষিদ্ধ বইয়ের স্যাম্পল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো শুরু হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে প্রাইমারী পর্যায়ে পুথী নিলয় প্রকাশনী ও মাধ্যমিক পর্যায়ে নবপুথী ঘর প্রকাশনীসহ অভিনব প্রকাশনী ছাড়াও জুথি প্রকাশনী। গত বছর এসব অনুমোদনহীন নোট-গাইড বিক্রি বন্ধ করতে স্থানীয় অভিভাবকরা বিরোধীতা করলেও উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এব্যাপারে বরাবর ছিলেন উদাসিন। একারণে চলতি বছরেও আনায়াসে এসব নোট-গাইড স্কুলে সরবরাহ শুরু হলেও সংশ্লিষ্টরা রয়েছেন উদাসিন।
এনিয়ে গুবিপাড়া গ্রামের অভিভাবক লুৎফর রহমান ও ইনসান আলী জানান, ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা বিকাশ ও যুগোপযোগি করে গড়ে তুলতে সরকার সৃজনশীলতা পাঠদান চালু করলেও মেধা ধ্বংসকারী নিষিদ্ধ নোট-গাইড পড়াতে ব্যাপক উৎসাহ দিচ্ছেন খোঁদ শিক্ষকরাই। এসব শিক্ষকরা এনসিটিবির বই ক্লাসে না পড়িয়ে একশ্রেণীর শিক্ষক প্রতিবছর এনসিটিবির অনুমোদহীন এসব বেশি দামের নিষিদ্ধ নোট বই ক্রয়ে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করায় অযথা অর্থদন্ড দিতে হচ্ছে প্রত্যেক অভিবাবক ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। তারা এসব অনুমোদনহীন নোট বই স্কুলে স্কুলে সরবরাহ বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পক্ষে মতামত জানিয়েছেন। এরপরও এব্যাপারে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। একারণে শুধু তারা নন বিভিন্ন এলাকার ক্ষুব্ধ সচেতন অভিবাবক মহল সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জুরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক সুত্র জানায়, প্রতিবছরের ন্যায় এবারো এখানকার বেশ কয়েকটি লাইব্রেরী ও বই ব্যবসায়ীরা নির্দ্বিধায় নিষিদ্ধ অভিনব, অনুপম, জুপিটার, পাঞ্জেরী, ইন্টারনেট, বর্ণমালা, লেকচার, গ্যালাক্সি গাইড, হাসান বুক ডিপো, পুথী ও জননীসহ বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বই বিক্রি করে চলেছেন। এসব লাইব্রেরীর মালিকরা নিষিদ্ধ নোটবইগুলোর স্যাম্পল এবারো উপজেলা সদর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের নির্ধারিত স্কুল ও এজেন্টেদের নিকট পাঠিয়ে দেয়া শুরু করেছেন। এতে করে একশ্রেণীর অসাধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষক সিন্ডিকেট লাইব্রেরী ও প্রকাশনার মাধ্যম হতে মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। ফলে, অভিবাবক ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন প্রতারিত।
এনিয়ে তানোর প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শফিকুল মাষ্টার জানান, টাকা নিয়ে নয়। ছাত্র-ছাত্রীদের বেধা বিকাশের জন্য খুব নামী দামী প্রকাশনীর নোট-গাইড ক্রয় করতে দুয়েকজন শিক্ষার্থীদেরকে বলা হয়। এসব নোট-গাইড পড়লে অনেক শিক্ষার্থী খুব সহজেই জ্ঞান অর্জন করতে পারে বলে তারা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে কিছু প্রকাশনীর উকালতি করেন বলে এড়িয়ে যান।
এব্যাপারে তানোর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, এবার তিনি সিলেবাস পেয়েই প্রত্যেক স্কুলে বই পাঠিয়েছেন। তবে, এখন পর্যন্ত এনসিটিবির অধিকাংশ বই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। নিষিদ্ধ বই উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব।
তবে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাজেদা ইয়াসমীনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি জানান, নিষিদ্ধ নোট-গাইড স্কুলে সরবরাহের ব্যাপারে শুধু শিক্ষকরা নয় যে কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
