স্টাফ রিপোর্টার : শেরপুর-১ (সদর) আসনে পরপর ৪ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক এবার প্রতিমন্ত্রী অথবা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় সংসদীয় হুইপ হচ্ছেন- এমন গুঞ্জন এখন শেরপুরের সচেতন মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। রবিবার নতুন সরকারের শপথ গ্রহণের প্রথম পর্বেই তিনি ডাক পেতে পারেন- এমন আভাস পাওয়া গেছে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে। একবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ও টানা ৪ বারের জননন্দিত সাংসদ হিসেবে এলাকাবাসী এবার তাকে কেবল ‘এমপি’ নয় ‘মন্ত্রী’ হিসেবেও দেখতে চায়।
সহজ সাধারন জীবন-যাপনের জন্য এলাকায় সংসদ সদস্য আতিকের আলাদা ইমেজ রয়েছে। কৃষকের সন্তান আতিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও এলাকার মানুষের টান ভুলেননি। এমপি হোস্টেলে থাকলেও সপ্তাহের দু’দিন নিয়ম করে তিনি শেরপুর অবস্থান করেন এবং এলাকায় এলাকায় ঘুরে ঘুরে মানুষের কথা, সমস্যার বিষয় দেখে-শুনে সমাধানের জন্য ঢাকায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীদের দ্বারে দ্বারে ধর্না দেন। এখনও সাধারনের মতোই বাজারে ঘুরে নিজ হাতে তিনি বাজার করেন। তার এমন সাধাসিধে চলাফেরার জন্য এলাকার মানুষ তাকে খুবই পছন্দ করেন এবং ‘নিজেদের পোলা’ বলে মনে করেন। শিক্ষায় অনগ্রসর শেরপুর এলাকার শিক্ষার উন্নয়নে তিনি বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন।
জেলা সদরের কামারিয়া ইউনিয়নের অজপাড়াগা বারঘরিয়া গ্রামের কৃষক নছিমদ্দিনের মেজো ছেলে আতিউর রহমান আতিক। জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে নির্বাচনের বেসরকারী ফলাফল গ্রহণের পর ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা জানিয়ে বলেন, ‘আতিক ভাই এবার আমরা আপনাকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই’। তিনি মুচকি হেসে বলেন, এলাকার মানুষ আমাকে সম্মান জানিয়ে, জননেত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে চতুর্থবারের মতো সংসদে পাঠিয়েছে, আমি এতেই খুশি। আমি সবসময় এলাকার উন্নয়নে, দেশের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই। জননেত্রী আমাকে যে দায়িত্ব দেবেন, আমি তা যথাযথভাবে পালন করবো। দোয়া করো, যেন আমি তোমাদের সবার জন্য শুভ সংবাদ আনতে পারি।
সাংসদ আতিকের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের পরদিন বেসরকারী ফলাফল গ্রহণের পর থেকেই তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। সূত্রমতে, ইতোমধ্যে তিনি দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করে এলাকার মানুষের অনুভূতির আলোকে দাবি জানিয়েছেন। সেইসাথে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দোয়া নিয়ে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ এডভোকেটের সাথে। সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি এলাকার মানুষের দাবি আর অনুভূতির বিষয়টি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, নির্বাচনকালীন সরকারের কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ সিনিয়র ও দায়িত্বশীল নেতাদের।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক আতিক স্কুলে পড়া অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। শেরপুর সরকারী কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই থেকে শুরু, আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পরে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৯০ সালে আতিক শেরপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় পার্টির সাবেক ফার্স্টলেডী বেগম রওশন এরশাদকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে তিনি চমক সৃষ্টি করেন। এরপর ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে যখন আওয়ামী লীগের নাজুক অবস্থা সেসময়ও নৌকার মাঝি হিসেবে শেরপুরবাসী তাকে সংসদে পাঠিয়েছে। ২০০৮ সালে চারদলীয় জোট প্রার্র্থী মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদন্ড ঘোষিত কামারুজ্জামানকে তৃতীয়বারের মতো পরাজিত সংসদ সদস্যের হ্যাটট্রিক করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক। এসময় শেরপুরবাসী অনেক আশায় বুক বেঁধেছিলেন ‘এবার বুঝি আমগর পোলারে শেখের বেটি মন্ত্রী বানাবো’। কিন্তু তা আর হয়নি। তাই এবারও ৫ জানুয়ারী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুরবাসী বিপুল ভোটে বিজয়ী করে আতিককে মন্ত্রী করার জোড়ালো দাবি তুলেছেন।
শেরপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানাচ্ছি, এমপি আতিক ভাইকে যেন এবার মন্ত্রী বানিয়ে শেরপুরবাসীকে সম্মান জানাতে ভুল করবেন না। শহরের নিউমার্কেট এলাকার চা বিক্রেতা নূরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ইবার আমরা আশা করতাছি, আতিক এমপি মন্ত্রী হবে। মন্ত্রী হয়ে এলাকার আরো উন্নয়ন করবে, দেশের খেদমত করবে।’ তাদের মতো একই সুরে কথা বলেন শহরের ভ্যানচালক, শ্রমজীবী থেকে শুরু করে পেশাজীবী সাধারন ভোটাররা।
