লিয়াকত হোছাইন লায়ন, ইসলামপুর : ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জে সেকেন্ডারী এডুকেশন কোয়ালিটি এন্ড এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট সেকায়েপ’র অতিরিক্ত ক্লাশ কর্মসূচীতে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ক্লাশ না হলেও প্রতি মাসে বিশ্বব্যাংকের লাখ লাখ টাকা তসরুপ হচ্ছে। স্থানীয় শিক্ষা অফিস ও বিশ্বব্যাংকের কোন নিয়ন্ত্রন না থাকায় সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা যা ইচ্ছে তাই করছেন। এতে প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্য ভেস্তে যাচ্ছে। জানা যায়, শিক্ষা বঞ্চিত ও নদনদী ভাঙন কবলিত ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ইংরেজী ও গণিত বিষয়ে অতিরিক্ত ক্লাশ পরিচালনার জন্য দুই উপজেলা ৮১ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদরাসাকে প্রকল্পের আওতায় এনে অতিরিক্ত ক্লাশে পাঠদান কর্মসূচী চাল করা হয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষাঅধিদপ্তরের সরাসরি ত্বতাবধানে ইসলামপুর উপজেলায় ৪১টি এবং দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ৩০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ও দাখিল মাদরাসায় অতিরিক্ত ক্লাশ চালু রয়েছে।
প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় গুলোতে যে কয়জন ইংরেজী ও গণিতে বিষয় ভিক্তিক শ্রেণি শিক্ষক রয়েছে তাদের প্রত্যেকেই ক্লাশ টির্চার এসটি নামে এবং প্রতি বিদ্যালয়ে প্রতিটি ক্লাশের জন্য একজন করে রির্সোস টির্চার আরটি নামে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিজন শিক্ষক মাসে সর্বোচ্চ ৪৫টি ক্লাশ করার নিয়ম রয়েছে। সকাল সাতটা থেকে বিদ্যালয়ের নিয়মিত ক্লাশ শুরুর পূব মূহুর্ত সর্বোচ্চ ১০টা পর্যন্ত অতিরিক্ত ক্লাশ চলার কথা রয়েছে। ইসলামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস গোলাম মোস্তফার নিকট তার উপজেলায় কতজন এসটি শিক্ষক রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমাদের নিকট এর কোন হিসাব নেই। অনুসন্ধানে জানায়, ইসলামপুরে ৮৯ জন আরটি ও ১৭১ জন এসটি এবং দেওয়ানগঞ্জে ৬৫ জন আরটি ও ১৩০ জন এসটি টিচারসহ দুই উপজেলায় তিন শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিজন এসটি একটি ক্লাশের জন্য ১৭৫ টাকা হারে প্রতিমাসে ৪৫টি ক্লাশের জন্য সাত হাজার ৮৭৫ টাকা, প্রধান শিক্ষক প্রতিমাসে এক হাজার ৫০০ টাকা সম্মানী এবং রির্সোস টির্চার আরটি প্রতিটি ক্লাশের জন্য ৫০০ টাকা হারে ২২ হাজার ৫০০ টাকা বেতন উত্তোলন করছেন। ঢেংগার গড় বজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রআন শিক্ষক ছামিউল হক ফারুকী জানান- একটি বিদ্যালয়ে প্রতিমাসে আরটি ও এসটি’র বেতন বাবদ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। সেই হিসাবে দুই উপজেলায় ৮১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রতিমাসে ৫২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে।
সূত্র জানা যায়, এসটি টির্চারের দায়ীত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং ক্লাসে উপস্থিত থাকা। আর রির্সোস টির্চারদের দায়ীত্ব হচ্ছে ক্লাশ পরিচালনা করা। প্রকল্পের নিমানুযায়ী শিক্ষকরা ক্লাশ গ্রহন করলেই টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। কিন্তু অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাশ না করে ভূয়া ক্লাশ দেখিয়ে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় ভাবে শিক্ষা অফিস ও দাতাদের কোন নিয়ন্ত্রন না থাকায় প্রকল্পের টাকা সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যৌথ ব্যাংক হিসাবে জমা হয়ে থাকে। এই সুযোগে প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকরা যোগশাজসে ক্লাশ না করেই ভূয়া ক্লাশ দেখিয়ে অগ্রণী ব্যাংক ইসলামপুর শাখা ও দেওয়ানগঞ্জ শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করে ভাগভাটোয়ারা করে নিচ্ছে।
সরেজমিনে,ইসলামপুরের ঢেংগারগড় বজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়, সিরাজাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, বাহাদুর পুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদরাসা, পচাবহলা জয়তুন নেছা উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্পের টাকা হরিলুটের মহাৎসব। ঢেংগারগড় বজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে গনিত ক্লাশের কয়েকজন ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক উপস্থিত থাকলেও ইংরেজী ক্লাশের কোন ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষককের দেখা মেলেনি। সিরাজাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের দেখা মেলেনি। ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে প্রাইভেট পড়াতে দেখা যায়। ওই শিক্ষক বলেন- আজ অতিরিক্ত ক্লাশ নেই। বাহাদুর পুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদরাসায় দুই ক্লাশে মাত্র ২২ জন শিক্ষার্থী ও একজন এসটি’র দেখা পেলেও সুপার ছিলেন না। অপর দিকে দেওয়ানগঞ্জের শাহাজাদ পুর উচ্চ বিদ্যায়য়ের গণিতের রির্সোস টিচার ১০ মাস ক্লাশ না নিয়েও যথারীতি বেতন নিয়েছেন। এছাড়া শাহাজাদ পুর দাখিল মাদরাসা, হাতীবান্ধা এবি উচ্চ বিদ্যালয়, মৌলুভীর চর উচ্চ বিদ্যালয়সহ অধিকাংশ বিদ্যালয় ও দাখিল মাদরাসার বিরুদ্ধে “সেকায়েপ” প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ থাকলেও দেখার কেউ নেই। যার যার মতে তৈরী নিয়মে চলছে সেকায়েপ’র ক্লাশ কর্মসূচী। যে কারণে বিশ্বব্যাংকের কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। ফলে বঞ্চিত হচ্ছে নদী ভাঙন কবলিত অঞ্চলের দরিদ্র শিক্ষার্থীরা।