ইমরান হোসাইন, তানোর : গত বোরো মৌসুমে বিদ্যুৎ চালিত বিএমডিএ’র গভীর নলকূপের প্রতিঘন্টা পানির দাম ছিল ১০০ টাকা। এবারে বৃদ্ধি করে নেয়া হচ্ছে ১১৫ টাকা। তবে, অগভীর নলকূপের মালিকরা ইচ্ছে মত সেচের দাম আদায় করে থাকেন। এক্ষেত্রে কৃষকের কোন কিছু বলার অবকাশ নেই। শুধু পানির দাম এছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্য ছিল ৬৮.৫০ টাকা। চলতি মৌসুমে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ২০ পয়সা বৃদ্ধি পেলেও হরতাল অবরোধের দোহাই দিয়ে আদায় করা হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা।

এভাবে বিদ্যুৎ জ্বালনি ও তেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সার, কীটনাশক, পানির সেচসহ শ্রমিক মুজুরি বৃদ্ধির পেলেও চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্থের শঙ্কায় কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার বোরো চাষিরা। গত বারের চেয়ে এবারে ইরি-বোরো চাষে কৃষি উপকরণের দাম দ্বিগুন হয়েছে। ধানের দাম বর্তমান বাজারের চেয়ে বৃদ্ধি করা না হলে কৃষকের উৎপাদিত খরচ উঠবে না বলে সঙ্কটে ভুগছেন চাষিরা।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছেন, চলতি মৌসুমে পুরো উপজেলায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বোরো ধান রোপন করা শুরু হয়েছে। এবার বোরো বীজের চারা আশানুরুপ হওয়ায় কৃষকরা ইতিমধ্যে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম বোরো ধান রোপণ শুরু করেছেন। বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান কেন্দ্র তানোর উপজেলার ২২ হাজার হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে সেচ সঙ্কটের কারণে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে না। গত আমন আবাদে উৎপাদন খরচ না উঠার কারনে কৃষকরা এবার পৌষের প্রচন্ড হাড়কাপানো শীতের মধ্যেও আগাম বোরো ধান রোপণ শুরু করেছেন। এঅঞ্চলের শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষ বোরো আবাদের উপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর মাঘ মাসের প্রথম সপ্তা থেকে চাষিরা বোরো ধান রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে, এবছর পৌষের মাঝামাঝি সময় থেকে চাষিরা বোরো জমিতে বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল ধান রোপণ শুরু করেছেন।
এনিয়ে উপজেলার জিওল গ্রামের কৃষক মহসিন আলী রেজা ও গোল্লাপাড়া গ্রামের আদর্শ কৃষক নূর মোহাম্মদ জানান, চলতি মৌসুমে বিদ্যুৎ চালিত পাম্প মেশিনের সেচের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। শুধু সেচের মূল্য বৃদ্ধি নয় ৬৮.৫০ টাকা মূল্যের জ্বালানী তেলের দাম অবরোধের অজুহাতে ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এভাবে বিদ্যুৎ জ্বালনি ও তেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সার, কীটনাশকসহ শ্রমিক মুজুরি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে স্থানীয় কৃষি অফিসের যোগসাজসে ডিলারদের কারসাজিতে সার সঙ্কট চলছে অনায়াসে। এভাবে নানান প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্থের শঙ্কা মাথায় নিয়ে তারা কোমর বেঁধে বোরো চাষে মাঠে নেমেছেন। বাবা দাদার পুরনো পেশা হিসাবে বিভিন্ন ফসলের চাষ করে থাকেন তারা। একারণে এতসব সঙ্কার মধ্যেও পৌষের হাড় কাপানো শীতে বোরো চাষ শুরু করেছেন। এই কষ্টার্জিত বোরো ধানের দাম বর্তমান বাজারের চেয়ে বৃদ্ধি করা না হলে তাদের উৎপাদিত খরচ উঠবে না বলে সঙ্কটে ভুগছেন।
এবিষয়ে তানোর আসমা ফিলিং স্টশনের ম্যানেজার খাইরুল ইসলাম জানান, হরতাল অবরোধের কারণে গাড়ি প্রতি ভাড়া অস্ভাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদেরকে তেলের দাম বেশি নিতে হচ্ছে। এতে তার কিছু করার নেই।
এনিয়ে তানোর বিএমডিএ’র সহকারি প্রকৌশলী সৈয়দ জিল্লুর বারী বলেছেন, গত মৌসুমে বিদ্যুতের মূল্য কম ছিল। এবারে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সামান্য পরিমানে সেচ খরচ বেড়েছে। এনিয়ে তিনি তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথাও বলেছেন। কর্তৃপক্ষ কৃষকের কথা বিবেচনা করে সেচ খরচ কমাতে পারেন। এনিয়ে তার কোন কিছু করার নেই বলে জানান।
এনিয়ে তানোর উপজেলা কৃষি অফিসার ডক্টর হাসানুল কবীর কামালী বলেছেন, এবারে গত বারের তুলনায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে, সার ও সেচের মূল্য বৃদ্ধি ব্যাপারে তাদের কিছু করার থাকে না। বিভিন্ন কারণে এসবের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। আসলে কৃষকের সমস্যা কেউ দেখে না বলে কৃষককে এত কষ্ট পোহাতে হয়। অপরদিকে, বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং যদি দেখা দেয় তাহলে সেচ সঙ্কটেরর কারণে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। #
