মো:আমির হোসেন আমু,দেবিদ্বার(কুমিল্লা) : প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মাদকাসক্ত এক বখাটে যুবক মেধাবী এক স্কুল ছাত্রীকে জবাই করে হত্যার চেষ্টা করে জনতার ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে নিজেও গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। ঘটনাটি ঘটে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের ফতেহাবাদ গ্রামে। মারাত্মক আহত স্কুল ছাত্রী মাহমুদা আক্তার(১৪) ও মাদকাসক্ত বখাটে আবুল হোসেন(২২)কে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তী করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ফতেহাবাদ গ্রামের জমাদার বাড়িরর মোঃ মহসীন জমাদারের মেধাবী কণ্যা নবম শ্রেণীর ছাত্রী মহমুদা আক্তার(১৪) একই বাড়ির তার বান্ধবী মোঃ সলিমুল্যার মেয়ে মাহবুবা আক্তার(১৪)কে নিয়ে ফতেহাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবেশী মূন্সী বাড়ির’র আব্দুল হান্নান মূন্সীর ছেলে মাদকাসক্ত বখাটে মোঃ আবুল হোসেন(২২) পথ আগলে ধরে। আবুল হোসেন মাহমুদা আক্তারকে পথ আগলে প্রেমের প্রস্তাব দিলে তার জবাব না দেয়ায় একটি ধারালো ছুরি বের করে মাহমুদার চুলে মুঠি ধরে সড়কে ফেলে গলা ও ঘারের অংশ কেটে ফেলে।
এসময় তার বান্ধবী মাহবুবা ভয়ে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী বাড়িতে আশ্রয় নেয়। প্রত্যক্ষদর্শি, পথিক ও স্থানীয়রা বখাটে আবুল হোসেনকে ধরতে ধাওয়া করে। প্রায় এক কিলোমিটার দূরে তাকে ঘিরে রাখতে সক্ষম হলেও তার হাতে ছুরি থাকায় তাকে ধরতে কেউ সাহস পায়নি। এক পর্যায়ে আবুল হোসেন বলতে থাকে- ‘আমাকে যে ভালো বাসেনা তাকে আমি নিজ হাতে জবাই করে হত্যা করেছি, আমিও আর বেঁচে থাকতে চাই না, আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ি থাকবেনা… … …বলে নিজেই নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ছুরিকাঘাতে তার গলার একাংশসহ শ্বসনালী কেটে যায়। এ অবস্থাতেই সে মাটিতে বসে সেল ফোনের উপর কাগজ রেখে প্রেমপত্র লিখতে থাকে। তাকে ঘিরে উৎসুক শত শত নারী-পুরুষ উপস্থিত থাকলেও তারা কেউ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করেনি। পুলিশ ঘটনার প্রায় দেড় ঘন্টা পর আহত আবুল হোসেনকে উদ্ধার পূর্বক কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করে।

আহত ছাত্রীর বান্ধবী মাহবুবা আক্তার জানায়, আবুল হোসেন দৌড়ে এসে মাহমুদার সামনে দাড়ায়, এসময় বলতে শুনি “আমি তোমাকে পছন্দ করি, তুমি আমাকে পাত্তা দাওনা কেন ? তোমাকেও আর বাঁতে দেবনা আমিও বাঁচবনা” বলেই কোমর থেকে ছুরি বের করলে ভয়ে আমি দৌড়ে যেয়ে পার্শ্ববর্তী বাড়িতে আশ্রয় নেই।
ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী বাড়ির আমেনা বেগম বলেন, হঠাৎ মা’ মা’ চিৎকার শোনে তাকিয়ে দেখি মাহমুদার চুলের মুঠি ধরে রাস্তায় ফেলে ছুরি দিয়ে পোচাতে থাকে, চিৎকার শুরু করলে লোকজন এসে তাকে দৌড়ে ধরার চেষ্টা করে, তার ছুরি হাকিয়ে মারতে আসলে ভয়ে তাকে কেউ ধরতে সাহস করেনি।
ফতেহাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হুমায়ুন কবির সরকার বলেন, মাহমুদা আক্তার আমার স্কুলের মেধাবী ছাত্রী, ক্লাশের দ্বিতীয়, এ বছর অষ্টম শ্রেণীতে জিপিএ ৫+ পেয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তী হয়েছে।
আহত স্কুল ছাত্রির মা’ শিরিন আক্তার বলেন, আমার মেয়ে সকালে স্কুলে যাওয়ার কথা বলে, আমি যেতে না করেছি, সে জানায় আজ প্রথম ক্লাশ, প্রথম দিন অনুপস্থিত থাকবনা, তাই স্কুলে যেতে হবে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার এম এ সালাম, ইউপি সদস্য সাদেকুর রহমান, অবসর প্রাপ্ত নৌবাহিনীর কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জমাদার বলেন, মোঃ হোসেন একজন মাদক সেবী, বখাটে ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির ছেলে, কিছুদিন পূর্বে তার আপন কাকা ফটিক মূন্সীর পেট কেটে ফেলেছিল। সেই মামলারও আসামী সে, তার বাবা মোঃ হান্নান মূন্সী নারী নির্যাতন মামলায় কারাগারে আছে। মা’ উশৃংখল চলাফেরা করার কারনে এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন।
দেবিদ্বার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি প্রেম ঘটিত, ছেলেটি সন্ত্রাসী, বখাটে মাদকাসক্ত হওয়ায় এলাকার কেউ তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি, আমরা যখন তার গলায় গামছা বাঁতে যাই তখনো মৃত্যুর পথ যাত্রী মোঃ হোসেন বাঁধা দেয়, পুলিশের দায়িত্বে কুমেক হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য তার কোন স্বজন খুঁজে পাচ্ছিনা। এব্যাপারে এখনো থানায় মামলা হয়নি তবে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
