জসীম উদ্দিন তালুকদার, বিলাইছড়ি (রাঙ্গামাটি) : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ রাঙ্গামাটি পার্বত্য আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী ও পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার পরাজিত হওয়ায় এ নিয়ে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন স্থানে চলছে ব্যাপক আলোচনা। এখন হারের নেপথ্যে বিভিন্ন হিসেব কষছেন পাহাড়ের সাধারণ জনগণ।
৫ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে দীপংকর তালুকদার জয়ী হয়েছিলেন ৩ বার। ২০০১ সালে তিনি তৎকালীন বিএনপি’র মণিস্বপন দেওয়ান ও এবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জনসংহতি সমিতির (সন্তু লারমা) সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদারের সঙ্গে ভোট যুদ্ধে ১৮ হাজার ৮৫২ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। পার্বত্য চট্রগ্রামের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখা আওয়ামীলীগের এই প্রভাবশালী নেতা কেন এবার পরাজিত হলেন? এখন এ প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে।
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা অভিলাষ তঞ্চঙ্গ্যা দীপংকর তালুকদারের হারের ব্যাপারে বলেন, জুরাছড়ি উপজেলার অধিকাংশ কেন্দ্র , বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ও তারাছড়িসহ বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ঊষাতন তালুকদারের হাতি প্রতীকের সমর্থকেরা বাধা ও হুমকি দেয়ায় পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি হুমকির কারণে নির্বাচনের ২/১ দিন আগে আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীরা পদত্যাগ পএ জমা দিতে বাধ্য হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ভোট কেন্দ্রে হাতি প্রতীকের এজেন্টকে দেখিয়ে ভোটারদের ভোট দিতে হয়েছিল। রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্যের এসব অভিযোগের ব্যাপারে জেএসএস নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শুভ মঙ্গল চাকমার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচনে হেরে যাওযায় আওয়ামীলীগ কর্মীরা অজুহাত দেখিয়ে এসব ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন লোকজনের সাথে দীপংকর তালুকদারের খারাপ আচরণ ও দলীয় লোকদের সুবিধা দেয়ায় দলীয় প্রভাবে সাধারণ লোকজন অতীষ্ট ও অসন্তুষ্ট ছিল। তাই জনগণ পরিবর্তন চাওয়ায় এবার দীপংকর তালুকদারের পরাজয় হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নূরুল ইসলামের নিকট প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর লোকজনের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন প্রশাসনের নিকট এনিয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। কোথাও পোস্টার ছিড়ে ফেলা ও হুমকি দেয়া এসব মৌখিকভাবে শুনে নিরাপত্তাবাহিনীর উপস্থিতিতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। তিনি আরও বলেন কোন কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেয়া না দেয়া তা প্রার্থীর নিজস্ব ব্যাপার। সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটারগণ উৎসাহ উদ্দীপনায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছিল বলে তিনি জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাঙ্গামাটির জনৈক আদিবাসী ব্যক্তি বলেন, মহাজোট সরকারের সময়ে রাঙ্গামাটি জেলায় ২বার সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিরসনের ক্ষেত্রে দীপংকর তালুকদারের বলিষ্ঠ ভ’মিকা না থাকায় এতে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়েছিল। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে মৌলিক বিষয় নিয়ে তিনি জোরালো ভূমিকা রাখেন নি। আর পার্বত্য চট্রগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে সাংবিধানিকভাবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আখ্যায়িত করায় এ নিয়েও পাহাড়ি জনগণ দীপংকর তালুকদারের প্রতি ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট বলে তিনি জানিয়েছেন। ফিবছর পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত খাদ্য শস্যের বিশেষ প্রকল্পে দলীয় প্রাধান্য দেয়ায় এবং রহস্যজনক ভূমিকা থাকায় এনিয়েও সাধারণ জনগণের নিকট নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়। অপরদিকে ৩ পার্বত্য জেলা পরিষদে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যসহ সকল কর্মকান্ড দলীয়ভাবে পরিচালিত হওয়ায় আর এসব দীপংকর তালুকদার কর্তৃক রোধ করতে না পারায় এবারের নির্বাচনে পরাজয়ের আরেকটি কারণ বলে ওয়াকিবহাল মহল মত প্রকাশ করেন। ইতোপূর্বে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত দীপংকরের সম্পদের পাহাড় গড়া সংবাদটি নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
সূত্র জানায়, সমঝোতাভিত্তিক রাঙ্গামাটি আসন জেএসএসকে দিবে এমন কথা দিয়েও আওয়ামীলীগের হাই কমান্ড কথা না রাখায় তা এবারের নির্বাচনে প্রতিভাত হয়েছে। ঊষাতন তালুকদার নির্বাচনী প্রচারণায় গরীব-দুঃখী মানুষের প্রার্থী দাবি করে পাহাড়ি-বাঙ্গালীর মধ্যে সুসম্পর্কসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উন্নতি ও পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সুষম উন্নয়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিল। ওয়াকিবহাল মহল আরও জানায়, নির্বাচনী প্রচারণায় ঊষাতন তালুকদার ও তাঁর সমর্থকরা ভোটারদের মন জয় করেছিল, অপরদিকে দীপংকর তালুকদার ও তাঁর সমর্থকরা তেমনটি করতে না পারায় এবারে রাঙ্গামাটি আসনে আওয়ামীলীগের ভরাডুবি হয়েছে।