ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৬ (চারঘাট ও বাঘা) আসনে ৯৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে চারঘাটে ৫০টি এবং বাঘায় ৪৯টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে চারঘাটে ৩৭টি এবং বাঘায় ৪২টি ভোটকেন্দ্রে ১৮দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে আ’লীগের ও সেনাবাহীনী, বিজিপি, পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, বোমা বিষ্ফোরণ, কেন্দ্রে অগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে নির্বিঘেœ ভোটদান নিশ্চিত করতে ভোটকেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী খুব গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার পরও এসব ঘটনা ঘটে। সকালের দিকে বিভিন্ন কেন্দ্রে কোন ভোটার না থকলেও দুপুর পর কিছু কেন্দ্রে মহিলা ভোটার বেশ কিছু চখে পরে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চারঘাট মডেল থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ভোট গ্রহণ চলাকালে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে বিপুলসংখ্যক আনসার, পুলিশ ও আর্মড পুলিশ মোতায়েন ছিল। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি ও সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন স্পর্শকাতর ও জনগুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয় চেকপোস্ট। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পেট্রোল টিম, মোবাইল টিম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে ছিল। এছাড়া নির্বাচনী কাজে ছাড়া সকল প্রকারের যানবাহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ দেয়ায় সংবাদপত্রের যানবহন ছাড়া কোন যানবহন চলাচল করেনি।
জানা যায়, চারঘাটের চরশ্যামপুর কেন্দ্রে সকাল ১১টার দিকে ১৮দলের নেতাকর্মীরা আগুন লাগায়। ঝিকড়া উচ্চ বিদ্যালয় ৩ট ককটেল, শলুয়া ডিগ্রী কলেজ-শলুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫ট ককটেল, তাতারপুর প্রাঃ বিদ্যাঃ ৩টা, শিবপুর ভোকেশনাল ৩টা ককটেল, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, পাটিয়াকান্দী উচ্চ বিদ্যালয়, ৪টা ককটেল, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, হলিদাগাছী প্রাঃ বিদ্যাঃ ৪টা ককটেল, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ককটেল, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ও আর্মড পুলিশ স্ট্রাইকিং ফোর্স বিজিবি ও সেনাবাহিনী কাদানী গ্যাস, রবারবুলেট নিক্ষেপ করেন। আ’লীগের সঙ্গে ১৮দলের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া প্রশাসনের কাদানী গ্যাস, রবারবুলেটে উভয়গ্রæপে প্রায় আধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। আহতদের চারঘাট, পুঠিয়া ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপালে ভর্তি করা হয়। গুরুত্বর আহতরা হলেন, বামনধিঘির ভাদু (৩৫), শলুয়া ইউপি যুবদলের সাংগনিক সম্পাদক সেলিম (২৮), পাটিয়াকান্দির আকাশ(৩০), তাতারপরের আবুল(৩৫), দেীলতপুরের ইব্রহীম (৪৫)সহ আধাশতাধিক আহত হয়ে বেসরকারী ক্লিনিক, চারঘাট, পুঠিয়া ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপালে ভর্তি হয়েছেন।
পুলিশের পুঠিয়া সার্কেলের এসপি সায়েম জানান, চারঘাট-বাঘার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিল। পুলিশের সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি যৌথবাহিনীর বিশাল টিম মাঠে কাজ করেছে।
এবারের নির্বাচনে রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম । ওই আসনে তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আরেক আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য রায়হানুল হক। (প্রজাপতি) প্রতিক নির্বাচন করেন । তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রহসনের দাবি করে তা বয়কট করেছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল। তার মধ্যে রেকট করেছে চারঘাটের ৪৮নং কেন্দ্রের মাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ২৭৯৭ ভোটের মধ্যে একজন ভোটারাও একটি ভোট দেননি । এমনকি দুই প্রার্থী একজন এজেন্ট সেখানে আংশ নেয়নি। প্রেজিটিং অফিসার ইসাহাক আলী জানান, সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত স্থানীয় জনগণের একজন ভোটারও আমাদের সামনে ভোট দিতে আসেননি। এমনকি দুই প্রার্থীর একজন এজেন্টও পাইনি।
স্থানীয় ভোটারেরা জানান, এই অবৈধ সরকারের আধীনে কোন নির্বাচন আমরা চায়না। তাই আমরা সকলেই এই ভোট বয়কট করেছি। তবে এই ৪৮ নং সেন্টারটি উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু সাইদ চাদের নিজস্ব কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে কোউ কোন ভোট প্রদান না করায় গ্রামবাসীরা মিষ্টি বিতারণসহ উল্লাস করেছেন।
এ নিউজ লেখাকালে চারঘাট মেডিকেল মোড় এলাকাতে ও তাতারপুর গ্রামে ১৮দলের সঙ্গে আ’লীগের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া সংর্ঘষো চলছিল।