নজরুল ইসলাম তালা, সাতক্ষীরা : নৌকা প্রতীক থেকে খোদ আওয়ামী লীগ নেতারাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। গোপনে এমনকি প্রকাশ্যেও তারা প্রচার চালাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে । আর এই সুযোগটি নিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত । তারাও কৌশলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও নৌকাকে কলা দেখাচ্ছে । এর ফলে কাল যে দুটি আসন সাতক্ষীরা ১ ( তালা কলারোয়া ) ও সাতক্ষীরা ২ ( সাতক্ষীরা সদর ) এ ভোট হচ্ছে তার ফলাফল কি হবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্ব›েদ্ব পড়েছেন ভোটাররা । তারা বলছেন এমনিতেই এই ভোটে মানুষের আগ্রহ নেই। তার ওপর আওয়ামী লীগ নেতারা যদি নৌকার বিপরীতে দাঁড়িয়ে মজা দেখান তাহলে তো ফলাফল ভালো আশা করার কোনো কারণ নেই । নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগের এসব নেতাদের কেউ কেউ মনোনয়ন না পেয়ে নতুন করে তাদেরকে মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েও বিফল হন ।
সাতক্ষীরা ১ আসনে ১৪ দলের প্রার্থী হিসাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন ওয়ার্কার্স পার্টির এড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহ । তার বিপরীতে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সৈনিক লীগ নেতা সরদার মুজিব । তালা ও কলারোয়ার এই আসনে সদ্য বিদায়ী সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান । এবার তিনি মনোনয়ন না পেয়ে ভীষন ক্ষুব্ধ । এমন কি এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রার্থী তালা উপজেলা দলের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন পেয়েও ১৪ দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন । ফলে তিনিও দারুন ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন । এমন অবস্থায় তারা নৌকা প্রতীকের পক্ষে কোনো কাজ করেন নি । বরং সমর্থন দিয়েছেন হরিন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী সৈনিক লীগের সরদার মুজিবকে যাকে তারা এতোদিনে কোনো রকম সমর্থন দেন নি । তালা ও কলারোয়ার এমনকি জেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা ১৪ দলের প্রার্থী এড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহএর পক্ষে মাঠে নামেন নি । বরং গোপনে এমন কি প্রত্যক্ষভাবেও তারা নৌকার বিপক্ষে কাজ করে দলীয় প্রতীককে হারিয়ে দেওয়ার সব আয়োজন করেছেন বলে জানিয়েছেন ভোটার সাধারন । এই আসনে মোট ভোটার তিন লাখ আশি হাজার দুইশ’ আট জন । ১৪৬ টি কেন্দ্রে তারা ভোট দেবেন ।
এদিকে সাতক্ষীরা ২ আসনেও অবস্থা তথৈবচ । এখানকার স্বতন্ত্র প্রার্থী শ্রমিক লীগ নেতা সাইফুল করিম সাবু বলেছেন তিনি জেলা উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের মত ও সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে নেমেছেন । তিনি বলেন ‘নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারীরা বলছেন আওয়ামী দলীয় প্রার্থীকে যে কোনোভাবে জেতানো হবে ’ । এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন এমনটি হলে ভোট কেন্দ্রে কারচুপি করা হবে বলে তিনি জানতে পেরেছেন । তিনি দাবি করেছেন তার পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতারা পরিশ্রম করছেন । অপরদিকে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি অভিযোগ করে বলেন তার পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতারা কাজ করছেন না । তারা বরং স্বতন্ত্র প্রার্থী হরিন প্রতীককে জেতাতে ব্যাপক গন সংযোগ করছেন । আওয়ামী লীগের এসব নেতা ও কর্মীরা তাদের সমর্থকদের বলে দিচ্ছেন নৌকাকে না দিয়ে ভোট হরিন প্রতীকে দিতে । জেলা আওয়ামী লীগের এই ধন্দে জড়িয়ে পড়েছেন দলে র জেলা সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবর রহমান , সেক্রেটারি মো. নজরুল ইসলাম , যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আবু আহমেদ , উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এসএম শওকত হোসেন প্রমুখ । তারা সরাসরি নৌকার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী মীর মোস্তাক আহমেদ রবি । এই আসনে তিন লাখ চৌদ্দ হাজার দুই শ’ সাতাত্তর জন ভোটার ১৩১ টি কেন্দ্রে তাদের ভোট দেবেন ।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দল মনোনীত প্রার্থীর নৌকা প্রতীকের হয়ে কাজ করার আহবান জানাতে গত ২৮ ডিসেম্বর সাতক্ষীরায় এসেছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক , মির্জা আজম , এসএম কামাল ও সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. আফম রুহুল হক । তাদের অনুরোধে সামনা সামনি সাড়া দিয়েও সাতক্ষীরার আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন নৌকা প্রতীক থেকে । আর এতে শেষ মুহুর্তে এসে হতাশ হয়ে পড়েছেন দুটি আসনের নৌকা প্রতীকের দুই প্রার্থী এড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহ ও মীর মোস্তাক আহমেদ রবি।