স্টাফ রিপোর্টার : লাগাতার অবরোধ-হরতালের মাধ্যমে প্রতিরোধের ডাক দেওয়ার পরও শেরপুরে তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি বিরোধী দলবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। বরং শেষ মুহূর্তে জেলার ৩টি আসনেই অনেকটা নির্বাচনী উৎসব তৈরি হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতার বাইরেও সেনাবাহিনী, র্যাব ও বিজিবি মাঠে থাকায় এবং নির্বাচনের পক্ষের লোকজনের সজাগ ও সতর্ক ভুমিকার কারণে ২/১ টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া জ্বালাও-পোড়াও এর মত বড় ধরনের কোনো নাশকতার ঘটনাও ঘটেনি। শেরপুর-১ (সদর) আসনে ১টি পৌরসভা ও ১৪ টি ইউনিয়নে ১শ ৪০টি কেন্দ্র, শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনে ১৩৪ টি কেন্দ্র ও শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনে ১১৯ টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে জোরদার করা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়া শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত প্রতিরোধের হুমকি-ধামকি নেই বললেই চলে। মূলকথা প্রতিরোধের পক্ষে কাজ করার মত বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত নেতা-কর্মীরা নেই মাঠে। এদের মধ্যে নেতৃস্থানীয়দের অনেকেই এলাকাছাড়া। আবার এলাকায় অবস্থানকারীরা রয়েছেন নীরব। কেউবা অবস্থান করছেন নির্বাচনের পক্ষের লোকজনদের সাহচর্যে।
এদিকে শেরপুরের ৩টি আসরে মধ্যে সবচেয়ে উৎসবমুখর ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনে। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের কৃষি, মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী, বাংলার অগ্নিকন্যা খ্যাত বেগম মতিয়া চৌধুরীর সাথে সরাসরি লড়াই হচ্ছে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী কৃষক লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ফোরামের মহাসচিব ও নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদের পদত্যাগী চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশার। একজনের প্রতীক নৌকা, আর অন্যজনের প্রতীক আনারস। ইতিহাস-ঐতিহ্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক নৌকার বিপরীতে এলাকা শ্লোগানমুখর ছিল ‘দেশী আনারস’ এর। অন্যদিকে নৌকার পক্ষে মুখরিত শ্লোগান ছিল ‘আনারসে ফরমালিন, নৌকায় ভোট দিন’। উদ্বেগ-আতঙ্কমুক্ত উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ভোটারদের একটি বিশাল অংশও এ আসনে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হবেন- এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। যে কারণে প্রতিদ্বন্দ্বি ২ প্রার্থীর ভোটের সমীকরণে হেরফের ঘটে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এরপরও অনেকের দাবি শেষ পর্যন্ত মতিয়াই বেরিয়ে আসবেন। সচেতন মহল ও পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি এখন এ আসনের নির্বাচনের দিকে। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন চলে এসেছেন এ এলাকায়।
শেরপুর-১ (সদর) ঃ এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ৩ বারের এমপি আতিউর রহমান আতিকের সাথে একমাত্র প্রার্থী জাসদ মনোনীত প্রার্থী মনিরুল ইসলাম লিটনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও এখানেও শেষ মুহূর্তে ভোটের উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। একজনের প্রতীক নৌকা, আর অন্যজনের প্রতীক মশাল হলেও তৃণমূলের ভোটাররা চেনে না মশাল। এরপরও ভোটের রাজনীতিতে হিরোখ্যাত সাংসদ আতিকের কারিশমায় এ আসনে ৫৫-৬০ ভাগ ভোটারের উপস্থিতি ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অবশ্য শনিবার সকালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আতিউর রহমান আতিক বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্বাচন প্রতিরোধের ডাকে কোন প্রভাব নেই এ আসনে। তিনি দাবি করেন, ভোটকেন্দ্রে ৬০-৭০ ভাগ ভোটারের উপস্থিতি ঘটবে।
শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) ঃ এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী একেএম প্রকৌশলী ফজলুল হক চাঁনের সাথে জাপাপ্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ফর্সা, জাসদ প্রার্থী এস.এম আব্দুর রাজ্জাক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হেদায়েতুল ইসলাম হেদা নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে থাকলেও শেষ পর্যন্ত হাওয়া লাগছে নৌকার পালেই। নিকাহ রেজিস্টার থেকে অনেক প্রার্থীর ভীড়ে আঞ্চলিকতার জিকির তুলে খোরশেদ আলম ফর্সা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও এ নির্বাচনে আ’লীগ প্রার্থীর বিকল্প হিসেবে কাছে টানতে পারেননি ভোটারদের। জাসদ প্রার্থী এসএম আব্দুর রাজ্জাক ঝিনাইগাতী এলাকার একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় আঞ্চলিকতার জিকির তুললেও সেই জিকিরে শরিক হননি ভোটাররা। তবে একবার ধানের শীষ আর একবার লাঙল নিয়ে নির্বাচন করার পর মাঠ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখার পর এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী দৌড়ে তুলনামূলকভাবে অনেকটাই এগিয়েছেন হেদায়েতুল ইসলাম হেদা।