বৃহস্পতিবার , ২ জানুয়ারি ২০১৪ | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

ধর্মমাণিক্য বাহাদুরের অমরকীর্তি গাঁথা কুমিল­া ঐতিহাসিক ধর্মসাগর : তাপস চন্দ্র সরকার

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
জানুয়ারি ২, ২০১৪ ৪:৩৬ অপরাহ্ণ

SAMSUNG DIGITAL CAMERAধর্মসাগরের ইতিহাস: সবুজ শ্যামলা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য প্রাচীন নিদর্শন যা সরকারি প্রচারণার অভাবে মানুষের নিকট ঠিকমত পৌছায় না। এমনই একটি ইতিহাসের নাম কুমিল­া ধর্মসাগর। কুমিল­ার ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে রয়েছে ধর্ম সাগরের প্রায় পৌনে ছয়শত বছরের ইতিহাস। প্রকৃতি আর মানুষের সমন্বয়ে গড়া এই সুদর্শন স্থানটি বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই সৌন্দর্যপূর্ণ স্থানকে আরো সৌন্দর্য করে তুলতে তাঁর উত্তর পাশে যোগ করা হয়েছে নগর উদ্যান। কুমিল­া মহানগরীতেই রাজা মাণিক্য বাহাদুরের অপূর্ব কীর্তি গাঁথা এই ধর্ম সাগর। ভ্রমণ বিলাসী আর প্রকৃতি পিপাসুদের নজর কেড়ে নেয়া এক অপূর্ব নিদর্শন। তিনদিকে সবুজ প্রান্তর ঘেরা মাঝখানে ধূসর বর্ণের অন্যদিকে কুমিল­া ষ্টেডিয়াম। উত্তরদিকে রাণীর কুঠির, মেহগনি, দেবদারু, শাল আর নানা রঙ্গের পাতা বাহারের গাছের ফাঁকে ফাঁকে বর্ণালী পাখির কুঞ্জন ধর্মসাগরের সৌন্দর্যকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। যার মাঝখানে রয়েছে বিরাট জলরাশি এই দীঘিটি ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, ত্রিপুরা রাজ্যের অধিপতি মহারাজা ধর্মমাণিক্য ১৪৫৮সালে এই দীঘিটি খনন করেন। “রাজমালা” গ্রন্থ অনুযায়ি ধর্মমাণিক্য সুদীর্ঘ ৩২বৎসর রাজত্ব করেন (১৪৩১-৬২ খ্রি:) কুমিল­া শহর তাঁর আশে-পাশের অঞ্চল তাঁর রাজত্বের অধীন ছিলো। জনগনের পানীয় জলের সুবিধার জন্য খননকৃত এই দীঘিটি উৎসর্গ করেন রাজা মাণিক্য বাহাদুর। মহারাজা ধর্মমাণিক্য বাহাদুরের নামানুসারে দীঘিটির নাম রাখা হয় ধর্মসাগর। তৎকালীন সময়ে ধর্মসাগর নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে বহু উপাখ্যান ও উপকথা।
এই দীঘিটি উৎসর্গের সময় যে তাম্রলিপি প্রদত্ত হয় তা নিন্মরূপ:-

Shamol Bangla Ads

“ চন্দ্র বংশেতে মহামাণিক্য নৃপবর, তানপুত্র শ্রী ধর্মমাণিক্য শশধর।
তেরশ আশিশতকে সোমবার দিনে, শুক্লপক্ষ এয়োদশী মেষ সংক্রমনে।।
তাম্রপত্রে লিখি দিলাম এসব বচন, আমা বংশ মারি যে বা হয় রাজন।
তাহার দাসের দাস হইবেক আমি, আমা কীর্তি ব্রক্ষাবৃত্তি না লঙ্ঘিত তুমি।।”
…(রাজমালা দ্বিতীয় লহর ৩য় পৃষ্ঠা)।

SAMSUNG DIGITAL CAMERAতাম্রলিপির মর্ম: “চন্দ্র বংশোদ্ভব মহা মাণিক্যের সুধীপুত্র শশধর সদৃশ শ্রী শ্রী ধর্ম মাণিক্য ১৩৮০ মেষ সংক্রমনে (চৈত্র মাসের শেষ তারিখে) সোমবার শুক্ল এয়োদশী তিথিতে কৌতুকাদি তাষ্ট বিপ্রকে শষ্য-সমন্বিত ফল ও বৃক্ষাদি পূর্ণ উনত্রিশ দ্রোণ ভূমি দান করিলেন। আমার বংশ বিলুপ্ত হইলে যদি এই রাজ্য অন্যকোন ভূপতির হস্তগত হয়। তিনি এই বৃহ্মবৃত্তি লোপ না করিলে আমি তাহার দাসানুদাস হইব। ” ধর্মসাগরের আয়তন ২৩:১৮ একর ১৯৬৪সালে দীঘিটির পশ্চিম ও উত্তর পাড়টি তদানিন্তন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দ হাসান আহমেদ এর উদ্যোগে পাঁকা করা হয়। দীঘিটি বর্তমানে মৎস বিভাগের অধীনে। তবে দীঘির পশ্চিম উত্তর পাড় সংলগ্ন ৫একরের উদ্যানটি কুমিল­া সিটি কর্পোরেশনের। শুধু কুমিল­া নয় বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রাচীন কয়েকটি দীঘির মধ্যে কুমিল­া ধর্মসাগর ঐতিহাসিক দীঘি। স্ফটিকতুল্য স্বচ্ছ ও নির্মল পানির জন্যে দীঘিটি অতুলনীয়। ধর্মসাগর শুধু ঐতিহাসিক দীঘি নয়, এটি প্রকৃতির শোভা ও সৌন্দের্যের লীলাভূমি। দীঘির উত্তরপাড়ে টিলার উপর রয়েছে রাণীর কুঠির ও ধর্মসাগরকে আরো সাজিয়ে তুলতে এর উত্তর পাশে তৈরী করা হয়েছে নগর উদ্যান (পার্ক)। ধর্মসাগরে দু’টি নৌকা রয়েছে যাতে করে ভ্রমণ বিলাসী মানুষরা নৌকা চড়ে আনন্দ উপভোগ করতে পারে।  যেখানে শুধু কর্মময় জীবনে হাঁপিয়ে উঠা মানুষেরা প্রকৃতির খুব কাছা-কাছি থেকে একটু স্বস্থি পাওয়ার জন্য রোজই এখানে ছুটে আসেন। শরীর সচেতন ও স্বাস্থ্য সচেতন লোকজন সকালে ও সন্ধ্যায় ধর্মসাগরের পশ্চিমপাড় সংলগ্ন সড়কটিতে হেঁটে বেড়ান নির্মল বায়ূ সেবনের প্রত্যাশায়। এখানে এলে নাগরিক জীবনের যাবতীয় ক্লান্তি ও যন্ত্রণা মুর্হুতেই মুছে যায়। ঐতিহাসিক কুমিল­া ধর্মসাগর দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসেন স্কুল-কলেজে পড়–য়া শিক্ষার্থীরা। এখানে চাকুরি ও কাজের ফাঁকে অবসর সময় কাটাতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ছুটে আসেন সকল বয়সের মানুষ। এখানে বনভোজনের জন্য রয়েছে স্পট। যেমন, দেশী-বিদেশী পর্যটকদের নিকট প্রতিনিয়ত স্বর্ণালী আকর্ষণ তেমনি প্রমোদ বিহার আর নিভৃত অবকাশ যাপনের নিকেতন। এছাড়াও রয়েছে এখানে শিশুদের জন্য নগর উদ্যান (পার্ক)। প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বভালবাসা দিবস, বাংলা নববর্ষ, ঈদের দিনে মানুষের ঢল নামে সাগরের দু’পাড়ে। ঐদিন গুলোতে মানুষের উপস্থিতি মিলন মেলায় পরিণত হয় কুমিল­া ধর্মসাগর এর দু’পাড়। তাছাড়াও শীত এলেই অতিথি পাখিরা কুমিল­া ধর্মসাগরে বেড়াতে আসেন।

Shamol Bangla Ads

ধর্মসাগরের আশেপাশে পর্যটকদের জন্য একাধিক হোটেল-মোটেল আর রেষ্টুরেন্ট তৈরী করলে ঐতিহাসিক স্থানটি আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। যেখানে থাকবে প্রচুর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। উন্নত করতে হবে যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাহলে ঐতিহাসিক স্থানটির উত্তরোত্তর উন্নয়ন সাধন হবে এবং বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। উপার্জন হবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। এমনকি লাভজনক ব্যবসায়ও পরিণত হতে পারে। স্বপরিবারে স্বপ্নের জগতে একটি দিন বেড়িয়ে যান ..।
লেখক পরিচিতি: একজন সংগঠক ও সংবাদকর্মী

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

error: কপি হবে না!