সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা জেলায় চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমান সরিষা চাষ হয়েছে। ফলে উৎপাদানও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সাতক্ষীরা খামারবাড়ি সূত্রে জানা গেছে, ২০১২/১৩ অর্থবছরে জেলায় সাত হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল তিন হাজার ৫৩০ টন সরিষা। এবার সাত হাজার ১৯৬ হেক্টর জমিতে আট হাজার ৬৫৩ টন সরিষা উৎপাদনের চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। সেখানে গত ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাষ হয়েছে সাত হাজার ২৩০ হেক্টর জমি। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাশেমপুর গ্রামের শহীদুল ইসলাম জানান, এবার তিনি তিন বিঘা জমিতে টরি-৭ জাতের সরিষা চাষ করেছেন। এক বিঘা জমিতে বীজ লেগেছে এক কেজি। নভেম্বর মাসের শেষের দিকে বীজ বপনের আগে দু’বার চাষ দিয়েছেন। এ পর্যন্ত সেচ দিয়েছেন একবার। সরিষা পাকার পর ঘরে তোলা পর্যন্ত তিন বিঘায় খরচ হবে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। তবে বেশি গরমে পড়লে বেড়ে পোকা লাগলে খরচ এক থেকে দু’শ টাকা বাড়তে পারে। এরপরও তার বিঘা প্রতি চার হাজার টাকা লাভ হবে। কলারোয়া উপজেলার ক্ষেত্রপাড়া গ্রামের মোশারফ হোসেন জানান, নভেম্বর মাসের শেষের দিকে দেড় বিঘা জমিতে রাই সরিষা চাষ করেছেন। এ সরিষা আকারে একটু মোটা হওয়ায় বিঘা প্রতি বীজ লেগেছে দেড় কেজি। সেক্ষেত্রে সরিষা পাকা পর্যন্ত খরচ হবে বিঘা প্রতি দু’ হাজার টাকা। ঝড়, বৃষ্টি বা অন্য কোন বিপর্যয় না হলে খরচ বাদে তার বিঘাপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় মন সরিষা পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে বর্তমান বাজার দর ঠিক থাকলে লাভ হবে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। সরিষা তুলে বোরো চাষ করা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বল্প পরিশ্রম ও ঝুঁকি কম থাকায় তার এলাকার কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
একই কথা বলেন কালীগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের সূর্যপদ সাধু খাঁ। তিনি দু’ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন উল্লেখ করে বলেন, এ চাষে সেচ কম লাগে। সার ও কীটনাশক দরকার হয় না বললেই চলে। তাই এ এলাকার বেলে দোঁয়াশ মাটিতে সরিষার ফলন বেশ ভাল হয়। সরিষা ভাঙানোর পর পাওয়া খৈল ও শুকনা গাছ অতিরিক্ত লাভ হিসেবে যোগ হয়।
পরপর তিন বার সরিষা চাষ করে লাভবান হয়েছেন দেবহাটা উপিজেলার সখীপুর গ্রামের আবু তালেব, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালি গ্রামের মাসুম, মার্শেদ আলীসহ কয়েকজন। তারা জানান, দেশে সোয়াবিন তেলের চাহিদা বেশি হলেও সরিষার তেলের চাহিদা একেবারে কম নয়। সরিষার তেল দিয়ে মাছ ও মাংশ রান্না করা হলে তা অনেক বেশি সুস্বাদু হয়। তাই ধান ও গম চাষের পাশাপাশি সরিষা চাষের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। সাতক্ষীরা খামারবাড়ির উপপরিচালক গণেশ চন্দ্র মÐল জানান, জেলায় বারি-১৪ ও বারি ১৫ জাতের সরিষা বেশি চাষ হয়েছে। এ ছাড়া অনেকেই টরি-৭ ও রাই সরিষা চাষ করেছে । লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক সরিষা চাষ হওয়ায় উৎপাদনও বেশি হবে। গরম বেশি পড়লে জাপ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিটনাশক ব্যবহার না করে গুল মিশ্রিত পানি স্প্রে করার জন্য কৃষকদের পরামর্ম দেওয়া হয়েছে।