হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ রাজনৈতিক অস্থিরতা,খাদ্য,ওষুধ,বাচ্ছা ও পোলট্রি উপকরণসহ আনুসঙ্গিক সবকিছুর মূল্য বেড়ে যাওয়ায় কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে পোলট্রি শিল্পে ধস নেমেছে।ফলে বন্ধ হয়ে গেছে উপজেলার বেশির ভাগ পোলট্রি খামার। বেকার হয়ে পড়েছে এ শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত কয়েকশ শ্রমিক-কর্মচারি। অভিযোগ রয়েছে,সরকারী নজরদারি ও স্থায়ী কোন নীতিমালা না থাকায় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ডিম,বাচ্ছা ও ওষুধ এ দেশের বাজার দখল করে রেখেছে।ফলে প্রতিযোগিতায় ঠিকতে না পেরে লোকসান দিতে দিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোলট্টি শিল্পগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিপুল সম্ভাবনাময় এ শিল্প রক্ষায় ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সূদৃষ্টি কামনা করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নব্বই দশকের শুরুতে হোসেনপুর উপজেলার শত-শত শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণী স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় পোলট্রি শিল্পের প্রতি ঝুঁকে পড়েন।ফলে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় গড়ে উঠে প্রায় তিন শতাধিক ছোট-বড় ও মাঝারী পোলট্রি খামার। এর মধ্যে ব্রয়লার মুরগীর খামারের সংখ্যাই বেশি।চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় পরিবহন সংকট,রোগ-বালাই,খাদ্য ও ওষুধের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারনে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৬০-৭০ভাগ খামার। যে কয়টি টিকে আছে সেগুলোও লোকসান দিতে দিতে বন্ধ হওয়ার পথে।ফলে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়ছেন। কেউ কেউ ঋণগ্রস্থ হয়ে সহায় সম্ভল বিক্রি করে শহরে পাড়ি জমিয়েছেন।
সরেজমিনে উপজেলার দ্বীপেশ্বর গ্রামের পোলট্রি খামারি মোঃ আব্দুল কাদির স্বপন,গড়বিশুদিয়া গ্রামের ফরিদ উদিন,ধনকুড়া গ্রামের সুমন মিয়া ও সিদলার এমরান মিয়াসহ অনেকেই জানান,বিপুল সম্ভাবনাময় এ শিল্পটি বর্তমানে লোকসানি প্রতিষ্টানে পরিণত হওয়ার মূল কারন রোগ-বালাই,বাচ্ছা খাদ্য,ওষুধ ও উপকরনের মূল্য বৃদ্ধি সহ রাজনৈতিক অস্থিরতা।এসব কারনে এ বছর তাদের প্রত্যেকের গড়ে প্রায় ১ লাখ টাকা করে লোকসান হয়েছে।তারা আরও জানান, দুই-তিন বছর আগেও একদিনের একটি লেয়ার বাচ্ছার দাম ছিল ১৪-১৫ টাকা।বর্তমানে সেই বাচ্ছার দাম ২৫-২৮ টাকা হয়েছে। একই ভাবে ১৫-১৬ টাকার ব্রয়লার বাচ্ছা ২৮-৩০ টাকা ও সোনালী জাতের বাচ্ছা ১২-১৪ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ২০-২৫ টাকা হয়েছে।১৫ টাকা কেজির রেডিফ্রিড ৪৫-৫০ টাকা হয়েছে। পোলট্রি খাদ্য তৈরীর উপকরণ ভ‚ট্টা ১২-১৩ টাকা থেকে বেড়ে ২৫-২৮ টাকা,সয়াবিন প্রতি কেজি ২৫-২৬ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫-৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ধনকুড়া গ্রামের খামারী বাচ্ছু মিয়া জানান, একটি এক কেজির ব্রয়লার মুরগীর উৎপাদন খরচ পড়ে গড়ে ১২০-১৩০ টাকা কিন্তু বর্তমানে ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।ফলে লোকসানের কারনে তারা খামার বন্ধ করে দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ জেড এম বদরুল হাসান জানান, অবরোধে পরিবহন সংকট, খাদ্য ও ওষুধের মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষুদ্র খামারীরা এ পেশায় কিছুটা আগ্রহ হারালেও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা মাঠ পর্যায়ে যথাযথ তদারকি ও পরার্মশ দিয়ে খামারীদের লাভবান করতে সচেষ্ট রয়েছেন।