সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : দেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় সিরাজগঞ্জে পুলিশের সাথে ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১১ জন।
জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেলার কয়েকটি এলাকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এর মধ্যে সদর উপজেলার চন্ডিদাসগাঁতী, বহুলী, সিরাজগঞ্জ-কাজিপুর সড়কের খোকশাবাড়ী, কাঠেরপুল, সমাজ কল্যান মোড়, বেলকুচি উপজেলার কল্যাণপুর, মবুপুর ও সর্বতুলশী, উল্লাপাড়া উপজেলার শ্রীকোলা মোড়, পূর্ণিমাগাতী এলাকা অন্যতম।
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর হরতালের সমর্থনে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর থানার কেজির মোড় এলাকায় জামায়াত-শিবির কর্মিরা মিছিল বের করে। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীদের সঙ্গে পুলিশের উপস্থিেিত সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় বয়োবৃদ্ধ জামায়াত নেতা ওয়ারেছ আলী (৬২) নিহত হন।
২৮ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাইদীর রায় ঘোষণার পর হরতাল চলাকালে সদর উপজেলার চন্ডিদাসগাঁতীতে পুলিশ-জামায়াত সংঘর্ষ হয়। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শিবির কর্মী (সাথী) রাজাখার চর গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে মোক্তার হোসেন মুক্তার হোসেন (১৭) ও চন্ডিদাস গ্রামের আব্দুল জলিলের পুত্র রুহুল আমিন (১২) নিহত হন। মুক্তা পিকেটিং করার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। রুহুল আমিন বাড়ী থেকে মাঠে ঘাস কাটতে যায়। পড়ে বাড়িতে ফিরে এসে ঘাসের বস্তা রেখে সে পিকেটিংদের সঙ্গে মিলিত হয়। এক পর্যায়ে গুলি খেয়ে সে মারা যায়।
৪ মার্চ জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘন্টা হরতাল চলাকালিন দ্বিতীয় দিনে উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্বদেলুয়া ব্রীজের কাছে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবির কর্মিদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে উপজেলার ফলিয়া গ্রামের আজিজার রহমানের স্কুল পড়–য়া ছেলে শিবির কর্মি মাহফুজুর রহমান (১৭) নিহত হয়।
২৯ মার্চ বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় সহ বেশ কিছু দোকান পাট বাড়ী ঘর ভাংচুর ঘটনায় থানা পুলিশ বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের কল্যাণপুর ও মবুপুর গ্রাম এলাকায় আসামি ধরতে যায়। এ সময় একজন আসামীকে আটক করা হলে জামায়াত-শিবির-বিএনপি কর্মীর পুলিশের উপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ-আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সর্বতুলসী গ্রামের আব্দুল মজিদের পুত্র ছাত্রদলের নেতা ফরিদুল ইসলাম (২০) ও আব্দুল হাই এর পুত্র শিবির কর্মি ইউনুস আলী (১৬) নিহত হন। সে তেয়াসিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলো।
১৯ সেপ্টেম্বর জামায়াতের ডাকা হরতাল চলাকালে সিরাজগঞ্জ-নলকা আঞ্চলিক সড়কের সদর উপজেলার চন্ডিদাসগাতী বেইলী সেতুর উপর পিকেটাররা একটি অটোরিক্সা সিএনজির গতিরোধ করে ভাংচুর করে। এ সময় সিএনজিতে থাকা যাত্রী মাসদু আলী (২৭) নামের একজন যুবলীগ কর্মি হামলার স্বীকার হন। গুরুতর আহত অবস্থায় সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসাপাতালে ভর্তিকরার পর বিকালের দিকে মারা যায়।
২৬ নভেম্বর জেলা শহরের জগাই মোড় এলাকায় অবরোধ চলাকালিন সময় সকালে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারী বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের ছোড়া টিয়ারসেলের আঘাতে সাকমান (৩৫) আহত হয়ে পার্শ্বের একটি পুকুরের মধ্যে পড়ে যায়। হাসপাতালে নেয়ার পর সে মারা যায়। সে পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি ছিলো, ঘটনার সময় বাড়ি থেকে শহরে কাজে আসছিলো।
২৭ নভেম্বর অবরোধ চলাকালে বেলকুচি উপজেলার মুকুন্দগাঁতী বাজারে পুলিশ-আওয়ামী লীগ ও ১৮ দলীয় জোটের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রদলের নেতা মাসুম বিল্লাহ (১৮) ও জামায়াতকর্মী গ্রাম চিকিৎসক আব্দুল জলিল (৫৫) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। দু জনের বাড়ি কর্যাণপুর গ্রামে।
৯ ডিসেম্বর অবরোধ চলাকালে সদর উপজেলার বহুলী বাজারে পুলিশ ও জামায়াতকর্মীদের সংঘর্ষে বহুলী মধ্যপাড়া গ্রামের দৈনন্দিন শ্রমিক আনোয়ার হোসেনের শিশু ছেলে সুমন সরকার (১২) গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনা স্থলেই নিহত হয়। সে বাজার থেকে চুল কাটায়ে বাড়ি ফেরার পথে অবরোধ কারী ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে। সে পেশায় একটি পটেটো চিপ কারখানার শ্রমিক ছিলো। স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র থাকা অবস্থায় সাংসারিক কারনে কাজে যোগদান করে।