দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি : রাজশাহীর দুর্গাপুরে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন জননী ক্লিনিকে আবারো ডাক্তারের ভূল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার ভোর ৬ টার দিকে এ ঘটনার পরপরই গা ঢাকা দিয়েছে পারেশনে সহযোগীতাকারী ভূয়া ডাক্তার ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ক্লিনিকের সামনে বিক্ষোভ করেছে রোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে থানা পুলিশ।
জানা যায়, গত রোববার রাজশাহী মহানগরের কেদুর মোড় এলাকার বাসিন্দা রেহেনা বেগম (৩৫) তার স্বামী সন্তান নিয়ে নিজ পিতার বাড়ী দুর্গাপুরের তিওরকুড়ি লক্ষিপুর গ্রামে বেড়াতে আসে।
আসার পর থেকে রেহেনা বেগম জ্বর ও পেটের ব্যাথা অনূভব করতে থাকে। পিতার বাড়ীর লোকজনের সহযোগীতায় গত মঙ্গলবার দুর্গাপুরে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে আসে কিন্তু রাস্তা থেকেই রোগী ধরা দালালরা জননী ক্লিনিকে বড় ডাক্তার আছে বলে রোগ দেখানোর জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানকার কর্তব্যরত অপারেশনকারী ডাক্তার বেলাল হোসেন ও ভূয়া ডাক্তার সান্টু মিয়া রোগীর এপেনডিক্স হয়েছে এই মূহুর্তেই অপারেশন করতে হবে নইলে বাঁচানো যাবেনা বলে তাদের ভয়ভীতি দেখায় এবং তাৎক্ষনিক অপারেশন করতে হবে বলে জানান।
নিহত রেহেনার সাথে ক্লিনিকে থাকা স্বজন সাবিনা ইয়াসমিন জানান, মঙ্গলবার বিকেলেই অপারেশন হয়। অপারেশনের পর থেকেই রোগীর প্রচন্ড রক্তক্ষরন ও কাঁপুনি হতে থাকে। অপারেশনের পর দুইদিন অতিবাহিত হলেও রোগীর অচেতন অবস্থায় রক্তক্ষরন ও কাপুনি বন্ধ না হওয়ায় রোগীর স্বজনরা চিন্তিত হয়ে পড়ে। পরে রোগীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ নিষেধ করে বলে বড় ধরনের সমস্যা হলে আমরাই রাজশাহীতে পাঠাবো। রোগীর অভিভাবকরা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কথায় সম্মতি দিয়ে ক্লিনিকে রোগী রেখে সবাই বাড়ী চলে যায়। তারপর শুক্রবার ভোররাতে রোগীর মৃত্যু হয়। রোগী মৃত্যুর পর পরই ভূয়া ডাক্তার সান্টু মিয়া ও ক্লিনিক পরিচালক গা ঢাকা দেয়। গতকাল সকালে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিকের সামনে বিক্ষোভ করে রোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী।
খবর পেয়ে থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
একটি সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকালে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীর অভিভাবকদের চাপ প্রয়োগ করে মাত্র ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে সমঝোতা করে নেয় এবং এই অভিযোগ যেন কোথাও না করতে পারে সেজন্য রোগীর স্বামীর কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষরও নেয় ক্লিনিক পরিচালক জিলহাজ্ব।
নিহত রোগী রেহেনার স্বামী রবিউল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রীর তেমন কিছু হয়েছিলোনা। ক্লিনিকের ডাক্তার এপেনডিক্স হয়েছে বলে তড়িঘড়ি করে ত্র“টিপূর্ন ভুল অপারেশন করে আমার স্ত্রীকে তারা মেরে ফেলেছে। আমার সন্তানদের এখন কে দেখবে বলে হাও মাও করে কেঁদে উঠেন। তিনি আরো বলেন, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ শুধূ সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েই ক্ষান্ত হন নি। এমনকি তারা থানা পুলিশ না করার জন্যও আমাকে হুমকি ধামকি দিয়েছে।
এ বিষয়ে ক্লিনিকের পরিচালক জিলহাজ্বের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রোগী মৃত্যুর কথা স্বীকার করে বলেন, রোগীর এপনডিক্সের অপারেশন করা হয়েছিলো কিন্তু অপারেশনের সময় রোগীর নাড়ি বাস্ট হয়ে গিয়েছিলো। অপারেশনকারী ডাক্তারের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি জানান, বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর,এম,ও) ডাক্তার বেলাল হোসেন অপারেশন করেছেন। এ বিষয়ে ডাক্তার বেলালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রোগীকে প্রায় মৃত অবস্থায় তার অভিভাবকরা ক্লিনিকে নিয়ে এসেছিলো। রোগীর নাড়ি বাস্ট হয়ে গিয়েছিলো। তবে অপারেশনের পরে রোগী ভালো ছিলো বলেও জানান তিনি। ক্লিনিকের রেজিষ্ট্রেশন আছে কিনা জানতে চাইলে ডাক্তার বেলাল বলেন, রেজিষ্ট্রেশন ছিলোনা তবে এখন হয়েছে বলে শুনেছি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তারুন্নাহার বলেন, মৃত রোগীর অভিভাবকরা লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতি শিঘ্রই ক্লিনিক গুলিতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে।