মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি ঃ নওগাঁর মহাদেবপুরে আমন ধানের বাম্পার ফলনেও আকাশ ছুঁয়েছে চালের মূল্য। এখন আমনের ভরা মৌসুম কিন্তু কমছেনা চালের দাম। মোটা অথবা চিকন বলে কথা নেই, সব ধরনের চালের দামই বাড়ছে হু-হু করে। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাষ্য অনুযায়ী এখানে এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের ফলন যেখানে বাম্পার সেখানে চালের দাম না কমায় হতাশ হয়ে পড়েছেন নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষজন চালবাজারে গেলেই তাদের বিপি (ব্লাড প্রেসার) বেড়ে যাচ্ছে। দিশেহারা এসব মানুষ পড়েছেন মহাবিপাকে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মৌসুমে এবার কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে ৫৬৫ হেক্টর বেশী জমিতে আমন রোপন করেছিলেন। ফলনেও অতিক্রম করেছে লক্ষ্যমাত্রা।
১৩ হাজার ২৮৫ মেঃটন বেশী ধান ফলন হয়েছে উপজেলায়। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা যেখানে ধরা হয়েছিল ৯৮ হাজার ৯৮১ মেঃটন সেখানে ফলন এসেছে ১ লক্ষ ১২ হাজার ২৬৬ মেঃটন ধান। মৌসুমের শুরুতে আমন রোপন লক্ষ্যমাত্রা ২৭ হাজার ৫৫ হেক্টর জমি ধরা হলেও কৃষক ২৭ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে আমন রোপন করেন যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৬৫ হেক্টর বেশী। আমনে উল্লেখিত লক্ষ্যমাত্রা এবং ফলন প্রাপ্তি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী বলেও জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ওই ধান এখন হাটবাজারে পূর্ণমাত্রায় উঠলেও চালের দাম একটুও কমেনি।
বাজারে নতুন ধান ওঠার পূর্বে যে মোটাচাল ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছিল সেই চাল নতুন ধান ওঠার পর ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা কেজিতে উঠেছে। চিকন চালের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। প্রতিকেজি চিকন চাল পূর্বে প্রতিকেজি ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেলেও এখন সে চাল ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য বছরগুলোতে নতুন ধান ওঠার সাথে সাথেই চালের বাজারে মূল্য পতন হতে দেখা গেলেও এবারের বাম্পার ফলনও বাজার দরে কোন প্রভাবই ফেলতে পারেনি। এর কারণ অনুসন্ধানে হিসেবে জানা যায়, ধানচাল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাটবাজারে আমদানী হওয়া ধান ক্রয়ের পর চাল তৈরী করে বাজারে না ছেড়ে মজুদ করে রাখছেন।
এ কারণে বাজারে চালের আমদানী হ্রাস পেয়ে মূল্য না কমে হু-হু করে বাড়ছে। খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা জানান, বিগত বছরগুলোতে নতুন ধান ওঠার সময় বাজারে চালের প্রচুর আমদানী হতো। কিন্তুু ধানচালের বাজার সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় দাম না কমে বিরাজ করছে উল্টো চিত্র। অবশ্য অনেক ব্যবসায়ী বাজারের অস্থির চিত্রকে লাগাতার অবরোধ-হরতালের ফসল বলে উল্লেখ করে জানান, রাজনীতির মাঠ চরম উত্তপ্ত হয়ে পড়ায় তারা স্বাধীনমত বয়লার-চাতাল ও কল-কারখানা চালাতে পারছেন না।