শ্যামলবাংলা ডেস্ক : দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণে অর্থ দিতে ৩ বিদেশি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু বকর সিদ্দিক জানান, যুক্তরাষ্ট্রের এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক, ফ্রান্স ও জাপানের অপর দুটি প্রতিষ্ঠান স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠান ৩ টির বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। যে প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব সুবিধাজনক ও লাভজনক মনে হবে তাদের বিষয়ে সুপারিশ করা হবে। তবে ফ্রান্স ও জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম জানাননি তিনি।
ইতোমধ্যে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রফর্মা (ডিপিপি) বা উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাব চূড়ান্ত করে তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাঠানো হয়।
সচিব জানান, অর্থায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত না হলেও অর্থায়ন সাপেক্ষে একনেকে প্রকল্পটি পাশ হতে পারে। তবে সর্বদলীয় সরকারের এ সময়ে নয়, আগামীতে নতুন সরকার আসার পরই তা একনেকে পাশ হবে।
প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ওই প্রকল্প সরকারের পক্ষে ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়, তাই এ বিষয়ে অর্থায়নের জন্য প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে আসে। বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নের সুপারিশ করে ডিপিপি তৈরি করে জানুয়ারি মাসে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
উপগ্রহ উৎক্ষেপণে ৪ টি পৃথক আন্তজার্তিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। উৎক্ষেপণের জন্য উপগ্রহের মূল অংশ তৈরির (ম্যানুফ্যাচারিং) জন্য আন্তজার্তিক টেন্ডার প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত করতে প্রয়োজনীয় দলিল (ডকুমেন্ট) তৈরি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে বিটিআরসি। স্যাটেলাইটের মূল অংশ তৈরি, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন এবং বীমা- এ ৪টি বিষয়ে পৃথক দরপত্র আহ্বান করা হবে। একনেকে ওই প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ার পর টেন্ডার আহ্বান করার কথা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের প্রক্রিয়ায় অংশ হিসেবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনালের (এসপিআই) কাজ করে যাচ্ছে, ইতোমধ্যে এই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের বেশিরভাগ কাজই প্রায় শেষ করেছে বলে জানান টেলিযোগাযোগ সচিব। ২৯ মার্চ বিটিআরসি কার্যালয়ে এসপিআই এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
বাজার মূল্যায়ন, বাজারজাতকরণ, বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ, গ্রাউন্ড স্টেশন ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এজন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসপিআইকে প্রায় ৮৭ কোটি টাকা দিতে হচ্ছে।
চুক্তি স্বাক্ষরের সময় তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু জানিয়েছিলেন, ৩ বছরের মধ্যে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হবে। বর্তমানে দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট এবং রেডিওগুলো বিদেশি উপগ্রহের মাধ্যমে কাজ চালাচ্ছে।
বিটিআরসি’র হিসাবমতে, প্রতিটি টিভি চ্যানেল স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ প্রতি বছর প্রায় ২ লক্ষ ডলার দিয়ে থাকে। বর্তমানে ১৯টি টিভি চ্যানেল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে প্রায় ৪০ লাখ ডলার ভাড়া দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের নিজস্ব উপগ্রহ চালু করতে পারলে ভাড়া বাবদ অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করার পর বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার আয় করতে পারবে বলে মনে করছে বিটিআরসি।