তানোর প্রতিনিধি : রাজশাহীর তানোরে স্বামী দ্বারা নির্যাতনের শ্বিকার গৃহবধূ আলেনূর বিবি বিচার পাবার আসায় দু’মাস ধরে ঘুরছেন থানায়। এরপরও মিলছে না তার কাঙ্খিত আইনি সেবা। ফলে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তানোর পৌর এলাকার তানোর ঠাকুর পুকুর গ্রামে খাস জায়গার উপর মাটির ঘর নির্মাণ করে মায়ের সঙ্গে সংসার চলে আলেনূরের। পিতা সৈয়ব আলী মারা যাবার পর মায়ের কুড়ে ঘরে নুন আন্তে পান্তা ফুরায় আলেনূরের। এভাবে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে তার। এঅবস্থায় রাজশাহীর তানোর উপজেলার বেলপুকুরিয়া গ্রামের মৃত আবদুর রহিমের পুত্র লালচাঁন মৃধার সঙ্গে ৭ বছর আগে শ্বতীনের ঘরে দ্বিতীয় বিয়ে হয় আলেনূরের। বিয়ের পর থেকে আলেনূর বিবি তার মায়ের বাড়িতে অন্যের কাজ করে সংসার চালান। এতটুকু খরচ তাকে দেন না স্বামী লালচাঁন । এরপরও তার মায়ের বাড়িতে এসে স্বামী লালচাঁন যৌতুকের দাবিতে প্রায় সময় আলেনূরকে অমানুষিক নির্যাতন করে আসছিলেন।
এঅবস্থায় গত অক্টোবর মাসের ২১ তারিখ সোমবার সকালে স্বামী লালচাঁন ভুটভুটি গাড়ি ক্রয়ের জন্য ৬০ হাজার টাকা তার মায়ের কাছে দাবি করেন। এত টাকা আলেনুর ও তার মা আশেনূর বেওয়া কিভাবে দেবেন তাদের সামর্থ্য নেই। এনিয়ে লালচাঁন তার শ্বাশুড়ী মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে লালচাঁন আলেনূর বিবিকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে হাতের তর্জনী ভেঙ্গে দেন। আহত আলেনূর বিবি হাসপাতালে ভর্তি হবার জন্য ভ্যানে উঠলেও তাকে টেনে হেচড়ে নামনোর জন্য চেষ্টা করা হয়। পরে গ্রামের লোকজনের সহায়তায় আলেনূর বিবি তার ক্ষত স্থান দেখানোর জন্য থানায় যান। থানা পুলিশ আলেনূরকে দেখে চিকিৎসা নেয়ার কথা বলে তাড়িয়ে দেন। পরে স্থানীয় নারী কাউন্সিলর গোলেহার নাজনীন থানা থেকে আলেনূরকে নিয়ে আশাপাশের লোকজনের সহায়তায় তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করেন।
এনিয়ে আলেনূর বিবি জানান, হাসপাতালে পাঁচ দিন ধরে চিকিৎসা নিয়ে গত অক্টোবর মাসের ২৯ তারিখ শুক্রবার সকালে থানায় অভিযোগ করতে গিয়ে অপারেটর ময়েন আলীর দ্বারা লাঞ্ছনার শ্বিকার হন তিনি। অভিযোগ লেখার জন্য তাকে খরচ না দেওয়ায় অশ্লীল ভাষায় তাকে গালিগালাজ করে দূর দূর করে থানা থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে নিরুপাই হয়ে থানার অপারেটর ময়েনের কাছে গিয়ে হাতে পায়ে ধরে পঞ্চাশ টাকা দেয়া হলে তার অভিযোগ শোনে একটি সাদামাটা অভিযোগ লিখে দেয়া হয়। ওই অভিযোগের কপি নিয়ে থানার তদন্ত ওসির নিকট গিয়ে দেখানো হলে ওসি গর্জে উঠে তাকে ব্যবসার মেয়ে বলে আখ্যা দিয়ে মিথ্যা অভিযোগকারী হিসাবে শাসানো হয়। ওসির এমন ব্যবহারে তিনি থানা থেকে বেরিয়ে নিজ বাড়িতে গিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা চেষ্টাও করেন আলেনূর। এসময় তার মা দেখতে পেয়ে আলেনূরকে রক্ষা করেন। এঘটনা নিয়ে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে থানার ওসি বিষয়টি তদন্ত করতে রাজ্জাক নামের উপপরিদর্শককে (এসআই) পাঠান। তিনি সেখানে গিয়ে মটরসাইকেলের তেল খরচ বাবদ ৫০০ টাকা নিয়ে মামলা রেকর্ডের নামে আরো ৫ হাজার টাকা ওসির নামে দাবি করেন। আলেনূর ওসির চাহিদা মত টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তার মামলা নিতে গড়িমশি করে প্রায় দু’মাস ধরে তাকে হয়রানি করে চলেছেন। ফলে আলেনূর নিরুপাই হয়ে বিচার পাবার আসায় প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
এবিষয়ে তানোর থানার তদন্ত ওসি আনোয়ার হোসেন তুহিন জানান, আগের অভিযোগটি পরিবর্তন করে ওই মেয়েকে থানায় আবার আরেকটি অভিযোগ নিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হলে দেখা যাবে। তবে, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর দেখভাল করার কারণে গৃহবধূকে আইনি সেবা দেয়া দিতে একটু অসম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।