ইমরান হোসোইন, তানোর : মঙ্গলবার হতে অবরোধ শেষ বুধবার পাওয়া যাবে সার। এমন খবরে রাজশাহীর তানোর উপজেলার হাজারো কৃষক নিকটস্থ সার ডিলারের নিকট গিয়ে তার দোকান বন্ধ দেখে বিভিন্ন ভাবে ডিলার ও কৃষি কর্মকর্তার খোঁজ নেন। পরে মোবাইল ফোনে জানতে পারেন অবরোধের কারণে সার আসেনি। একারণে আগামী রবিবার ছাড়া মিলবে না কৃষকের কাঙ্খিত সার। সার পেতে এমন সময় বেঁধে দেয়ার কারণে হতভাগ কৃষক রবি মৌসুমের আবাদ নিয়ে বেকায়কায় পড়েছেন। এমনই আবেগাপ্লুত হয়ে কথাগুলো বললেন জিওল গ্রামের কৃষক ইনসার আলী ও আবদুল গনি মিয়া। শুধু তারা নন তাদের মত হাজারো কৃষক সারের জন্য সংসারের বিভিন্ন কাজ কাম ফেলে ছুটেছেন সারের সন্ধানে। এরপরও মিলছে না ন্যায্য মূল্যের কাঙ্খিত সার। ফলে কৃষকরা তাদের রবি আবাদ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থানীয় কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের সঙ্গে যোগসাজস করে এখানকার ডিলাররা সার নিয়ে কালোবাজারি ব্যবসা শুরু করেছেন। কৃষকের কাঙ্খিত সার বিসিআইসি ও বিএডিসি ডিলারের কাছে না মিললেও বেশি দামে অবৈধ সার ব্যবসায়ীর কাছে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা নিরুপাই হয়ে ওইসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের কাছে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। সার নিয়ে কালোবাজারির হাত হতে রক্ষা পেতে স্থানীয় কৃষক কালচার একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন আজ সোমবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষনা দিয়েছেন।
এনিয়ে কৃষক কালচার একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন জানান, তিনি ৭ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। তার আলু বর্তমানে টপ ডেসিং করার উপযুক্ত সময়। একারণে ৫ বস্তা করে (প্রতি বস্তা ৪০ কেজি) ইউরিয়া ও পটাশ (এমওপি) সার প্রয়োজন। তিনি সারের কারণে গত সোমবার হতে ডিলারের দোকানে ঘুরছেন। এরপরও সার ভাগ্যে জুটেনি এতটুকু সার। এনিয়ে তার নিকটস্থ সার ডিলার নাসির ও প্রণবসাহা সাফ জানিয়েছেন আগামী রোববারের আগে কোন প্রকার সার তানোরে ঢুকানো সম্ভব নয়। একারণে ধর্য্য ধরে রোববারের পরে সার নেয়ার আহবান জানান তারা। সার নিয়ে এমন কেলেংকারির কারণে আজ রোববার দুপুরে কৃষক মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষনা দিয়েছেন। এই কর্মসূচিতে কোন প্রতিকার না পেলে বড় ধরনণের আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলার গোলাপাড়া গ্রামের আদর্শ কৃষক নূর মোহাম্মদ জানান, তানোরের বিসিআইসি ও বিএডিসি ডিলাররা তাদের বরাদ্দের সার উত্তোলন করে অবৈধ খুচরা সার ব্যবসায়ীদের কাছে রাতের আঁধারে কালোবাজারে বিক্রি করছেন। এসব সার কাশিম বাজার এলাকার জাকির ট্রের্ডাসের পোপাইটার আবদুল জলিল, তানোর হলমোড়ের কৃষি ভান্ডারের পোপাইটার মোহাম্মদ আলী, উপজেলার কৃষ্ণপুর বাজারে ক্ষুদ্র সার ব্যবসায়ী আলম হোসেন, শাফিউল ইসলাম শফি ও চিমনা মোড়ের সার ব্যবসায়ী পলাশ হোসেন বিসিআইসি ও বিএডিসি ডিলারদের কাছ হতে গোপনে সার ক্রয় করে ৮০০ টাকার ইউরিয়া সার ১ হাজার টাকায় এবং ৭৫০ টাকা মূল্যের পটাশ সার ৯০০ টাকায় কৃষকের মাঝে বিক্রি করছেন। একারণে প্রকৃত ডিলারদের কাছে কৃষকের ভাগ্যে মিলছে না ন্যায্য মূল্যের কাঙ্খিত সার। শুধু নূর মোহাম্মদ নয় একই কথা জানান চাঁদপুর গ্রামের আকতার হোসেন মড়–, জিওল গ্রামের স্বপন ও চিমনা গ্রামের রতনসহ আরো অনেকে।
শুধু তানোর পৌর সদরে সারের এমন হাহাকার নয় উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সারের জন্য এমন হাহাকার। সরকারি নিয়মনীতিকে অপেক্ষা করে কিছূ অবৈধ সার ব্যবসায়ীরা সাধারণ কৃষকদের নিকট হতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বস্তা প্রতি এমওপি সার ২০০ টাকা এবং ইউরিয়া সার ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দাম বেশি নিচ্ছেন। এসব নিয়ে উপজেলা সারবীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবকে কৃষকরা অবহিত করলেও অজ্ঞাত কারণে তারা ব্যবস্থায় নির্বিকার। একারণে রবি মৌসুমের আবাদ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন এখানকার কৃষক।
এনিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা সারবীজ মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব ডক্টর হাসানুল কবীর কামালী বলেছেন, অবরোধ হরতাল সারের সংকট সৃষ্টি করেছে। এসব কর্মসূচি সবেমাত্র শেষ হয়েছে। ডিলাররা তাদের বরাদ্দের সার উত্তোলন করতে কাজ করে যাচ্ছে। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে সারের সংকট থাকবে না বলে জানান তিনি।