জাকির হোসেন, ছাতক (সুনামগঞ্জ) : ভূমি অধিগ্রহনের দু’যুগ পর আকিজ গ্রুপের ফুড এন্ড বেভারেজ কারখানা স্থাপনের মধ্যদিয়ে ছাতক শিল্পাঞ্চল আরো সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। শিল্পসমৃদ্ধির পাশাপাশি এখানের অর্থনীতিতেও নতুনমাত্রা সংযোজনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। কারখানায় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও স্থানীয়রা কোঠা ও যোগ্যতা ভিত্তিক সুযোগ পাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। সব মিলিয়ে ছাতকবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা কিছুটা হলেও পুরন হতে যাচ্ছে।
পৌর শহরের ভাজনামহল-শ্যামপাড়া এলাকার প্রায় দু’শ একর জমিতে আকিজ গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজ কারখানা স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। প্রায় দু’যুগেরও বেশি সময় ধরে পতিত পড়ে থাকা এসব জমিতে ফুড এন্ড বেভারেজ কারখানা প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হওয়ায় স্থানীয় ভূমি ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। কারখানার কাজ শুরু হওয়ার সাথে-সাথে কুমনা এলাকার একটি ভাঙ্গা ব্রিজ সংস্কার কাজও হাতে নিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানা প্রতিষ্ঠায় এখানের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মান উন্নীত হবে বলে স্থানীয়রা ধারনা পোষন করছেন। ১৯৮৮ সনে ছাতক পৌরসভার কুমনা ও বিভিন্ন মৌজার প্রায় দেড় শতাধিক একর ফসলী জমি আকিজ গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা আকিজ উদ্দিনের পুত্র বশির উদ্দিন আকিজ কোম্পানী প্রতিষ্ঠার নামে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করেন। অধিগ্রহনকৃত ভূমির মধ্যে সরকারি ৭একর ভূমি লিজ নিতে বশির উদ্দিন নিজেকে পৌরসভার কুমনা গ্রামের বাসিন্দা সাজিয়ে ৯৮’ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েলের ২৭৪নং অনুচ্ছেদের শর্তসাপেক্ষে ‘একসনা’ বন্দোবস্ত নেন। লিজকৃত সরকারি ভূমি মাটি ভরাট করে শ্রেনী পরিবর্তন করায় স্থানীয় ভূমি অফিস একই সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এবং ৫ নভেম্বর লিজের শর্তভঙ্গের কারনে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবেনা এ র্মমে বশির উদ্দিনকে পর-পর দুটি নোটিশ প্রদান করা হয়। নোটিশের জবাব না দেয়ায় তৎকালীন তহসিলদার প্রশান্ত কুমার চৌধুরী সরকারি শর্তভঙ্গ ও আইন অমান্য করায় সহকারী কমিশনার ভূমি বরাবরে ৯৯’ সালের ৭ জানুয়ারী একটি প্রতিবেদন জমা দেন। এর প্রেক্ষিতে একই সালের ১০ আগষ্ট বশির উদ্দিনের লিজ বাতিল করে লাল পতাকা টানিয়ে জমি সরকারি দখলে নেয়া হয়। পাশাপাশি নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করায় বশির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ৩১ লাখ ২৭ হাজার ৫শ’ টাকা রয়েলিটি ফাকির অভিযোগে ২৩ আগষ্ট একটি সার্টিফিকেট মামলাও রুজু করা হয়। এদিকে অধিগ্রহনকৃত ভূমি দু’যুগ ধরে পতিত থাকায় প্রতিবছর ৩হাজার মন খাদ্য শস্য উৎপাদন থেকে কৃষকরা বঞ্চিত হলেও সম্প্রতি কারখানা নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় বুকে আশার আলো সঞ্চার করেছে তারা। স্থানীয় একাধিক কৃষকের সাথে আলোপকালে তারা জানান, আকিজ সিমেন্ট কারখানা স্থাপনের নামে ভূমি অধিগ্রহন করা হয়। কিন্তু সাদা সিমেন্ট কারখানা স্থাপন না করে কর্তৃপক্ষ ভূমি মালিকদের সাথে প্রতারনা করেছেন। এরপরও এ জমিতে কারখানা প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হওয়ায় তারা আনন্দিত হয়েছেন।
আকিজ গ্রুপ অব কোম্পানী ছাতকের ম্যানেজার মুশফিকুর রহমান মুন্না জানান, কোম্পানীর বিভিন্ন সমস্যার কারনে দীর্ঘদিন ভূমিটি পতিত রাখা হয়েছে। বর্তমানে ফুড এন্ড বেভারেজ কারখানা প্রতিষ্ঠার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আগামী জানুয়ারি মাসেই কারখানা উৎপাদনে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।