শনিবার , ২১ ডিসেম্বর ২০১৩ | ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

বেতাগীতে খালের তীরে খুশীর জোয়ার ‘হেগো আল্লায় ভাল হরুক’

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
ডিসেম্বর ২১, ২০১৩ ৩:২৫ অপরাহ্ণ

IMG_1298 মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বেতাগী (বরগুনা) : ‘মোরা অ্যাহন চাষাবাদ করতে পারতেছি হেইতেই খুশী।হেগো আল্লায় ভাল হরুক’ এ উক্তি শুধু জয়নাল হাওলাদারেই নয়,বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের গাবুয়া, কাটাখালী, বিবিচিনি, ফুলতলা, শ্যানের খাল,দাসের খাল,গাইনের খাল,জমিরের খাল,বামনের খাল,পল্লী মঙ্গল ও পাড়ের খাল তীরবর্তী  সুলতান শরীফ,মুনছে আলী,গনি মুন্সি,কাজল রেখা,মাহমুদা বেগম সহ অসংখ্য কৃষকের।

Shamol Bangla Ads

উপকূলীয় বরগুনার বেতাগী উপজেলার কৃষি IMG_1302সমৃদ্ধ এলাকা বিবিচিনি ইউনিয়ন। দেশের দক্ষিনা প্রান্তের পিছিয়ে থাকা একটি জনপদ। যেখানে অযত্ন-অবহেলার ছাপ।বহুমূখী সংকটের গন্ডি পেরিয়ে এখানকার ৯৫ ভাগ লোক কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।দুঃখের বিষয় সেখানকার বিভিন্ন খাল-বিল ও নালা গুলো নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় চাষাাদ ব্যহত হচ্ছিল।বিশেষ করে খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় গাবুয়া, পুটিয়াখালী, বিবিচিনি, পুর্ববিবিচিনি,পশ্চিম বিবিচিনি, ফুলতলা,পূর্ব ফুলতলা, দক্ষিন ফুলতলা, দেশান্তরকাঠী,গড়িয়াবুনিয়া ও তালগাছিয়া ১১ টি গ্রামের মানুষ পানির অভাবে চাষাবাদ,মৎস চাষসহ বছরের পর বছর ধরে  বিভিন্ন কৃষি কাজ করতে গিয়ে সীমাহীন কষ্ট করে আসছিল।

Shamol Bangla Ads

অকৃপন প্রকৃতি কত যে যত্নে খাল গুলোকে সাজিয়েছিলো-সহস্র প্রজাতির তরুলতায় শোভিত দু’তীর তার খানিকটা আজও বয়ে বেড়ায়। বিবিচিনি ইউনিয়নের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া খালগুলো এক সময় ছিলো রুপালী প্রচুর্য্যে ভরা। কালের বিবর্তনে বিরুপ পরিবেশে ছোট্র, ছোট্র এ খাল গুলো আজ প্রায় পতিত বিরান ভ’মিতে পরিনত।পল্লী বধুর নাইওর নিয়ে এসব খালে আজ কোন নাও ভাসেনা,আসেনা কোন ভিনদেশী সওদাগরের নাও।জমাটবাঁধা কচুরিপনা ও কোথাও আগাছায় ছেঁয়েগেছে খালের সবটুকু জল।অভাব অনটন আর হতাশায় আচ্ছন্ন  খালের দু’পাড়ের মানুষের জীবন।গোলা ভরা ধান,গোয়াল ভরা গরু আর ক্ষাড়ুইভরা মাছ আজ যেন রুপ কথার গল্প।তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক ঝুঁকি, লবনাক্ততা,নদী ভাঙনসহ বহুমুখি দুর্যোগের কবলে নাও-জাল আর লাঙ্গল-জোয়াল বিহীন এখানকার অধিকাংশ মানুষ আজ পেটের দায়ে ঋনের ভারে জর্জরিত।এসব খালের  দু’ তীরের পল্লী মানুষের এমনই এক ক্রান্তিলগ্নে  তৃনমুল মানুষের সংগঠন দু’টি সমবায়  সমিতি এগিয়ে এসেছে ভিন্ন ও এক নতুন আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে।

কৃষক সমাজ ও কৃষি কাজের কথা চিন্তা করে  গাবুয়া ফুলতলা এবং দেশান্তরকাঠী গড়িয়াবুনিয়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি: খাল পুনঃখননের দু’টি প্রকল্প গ্রহন করে।সরকারের স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রলয়ের অধীনে অংশগ্রহন মুলক ক্ষুদ্রকার পানি সম্পদ সেক্টর প্রকল্পের আওতায় ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে ১২.৭২৫ ও  ১০ কিলো সব মিলিয়ে প্রায় ২৩ হাজার কিলোমিটার ১২ টি খাল খনন করে।প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারেনে হেরে যাওয়া মানুষগুলো সাহস করে এগোয়।ফলে ওই এলাকায় সুবাতাস বইতে শুরু করে। এ ছাড়াও গাবুয়া ফুলতলা সমিতির ৫২১ জন সদস্য নিয়মিত মাসিক শেয়ার, সঞ্চয় প্রদান করে সাড়ে ৫ লাখ টাকা ও দেশান্তরকাঠী গড়িয়াবুনিয়া সমিতির ৫১৪ জন সদস্য একইভাবে সাড়ে ৪লাখ টাকা জমিয়ে উপজেলায় মডেল সমিতিতে পরিনত হয়ে ছেনবলে সমবায় অধিপ্তর জানায়।স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আনিচুর রহমান জানান, খাল খননের ফলে প্রায় ২৪ হাজার মানুষ নানা ভাবে সুবিধা ভোগ করছে।

এ ছাড়াও আশেপাশের আরো অনেক মানুষ উপকৃত হচ্ছে। গাবুয়া ফুলতলা পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি রিয়াজ সিকদার বলেন,দীর্ঘদিন পানির অভাবে এখানকার মাঠ-ঘাট হাহাকার করতো,কোন ফসল ফলানো যেতোনা।এতে কৃষকের ভোগান্তির শেষ ছিলোনা। এলজিইডি‘র বেতাগী উপজেলা প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান,এসব বিবেচনা করেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়।সরেজমিনে গিয়ে দেখা মেলে গ্রাম গুলোতে  কৃষকরা কেউ আমন ফসল তোলা ও কেউ সবজি আবাদে ব্যস্ত।এমনই একজন ফুলতলা গ্রামের মোস্তফা হাওলাদার বলেন,এবারে ধানের  গাছের চারার বীজ বপনের জন্য পানির অভাবে তেমন কষ্ট হয়নি বরং আগে ভাগেই বীজ বুনতে পেরেছেন।সীম চাষী আবদুর রহমান জানান,খালের তীরে সীম ফলিয়ে বেশ ফলন পেয়েছেন ও লাভবান হয়েছেন। ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম জানান,দু’টি সমিতির মাধ্যমে খাল গুলো খনন হওয়ায় ৭‘শ ৩২ হেক্টর ও ৮’শ মোট ১৫৩২ হেক্টর জমিতে ধান আবাদের সুবিধা পাওয়াগেছে।স্থানীয় প্রবীন ব্যক্তিত্ব দলিল উদ্দিন সিকদার বলেন,ক’দিন আগেও খালগুলো পতিত ছিলো।এখন খাল খননের ফলে এখানকার মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে।ক্ষুদ্রকার পানি সম্পদ সেক্টর প্রকল্পের পরিচালক মোঃ শহীদুল হক পতিত ও ভরাট হয়ে যাওয়া এ সব খালগুলো ঘিরে মানুষের সম্ভাবনার যে আকাঙ্খা তা বাস্তবে প্রতিফলিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সোসিও ইকোনোমিস্ট আব্দুর রহিম বলেন, খালগুলো খননে ফলে এখানকার জনগেষ্ঠি অনেক বছর পর বিভিন্ন মালামাল পরিবহনের পাশাপাশি ইরি বোরো,আমন, লাল শাক,পালন শাক,বাধাঁকপি,ফুল কপি,সীম,গোল আলু,বরবটি,পেপে এ ধরনের সবজি, বিভিন্ন রবি ফসল,কলা বাগান ও মৎস চাষ করে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ পেয়েছেন। গ্রামগুলো এখন সবজির গ্রাম  হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।দেশান্তরকাঠী গড়িয়াবুনিয়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আঃ ছওার মল্লিক বলেন,আগামীতে একইভাবে বাড়ৈইর খাল,গাবুয়া ব্রাঞ্চ, পুর্ব মদন, শ্যানের ও দাসের খালের ব্রাঞ্চ,ফরাজীর খাল,জমির খাল,ফকিরের জোরখাল,সেরজনের ঘাটের খাল, খনন ও বিবিচিনি খালের গোড়ার দিকে ইজ  নির্মান করা হলে আরও অনেক  মানুষ নানা ভাবে উপকৃত হবে এবং ১৫০০ হেক্টর জমি চাষের আওতায় আসবে।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

error: কপি হবে না!