শ্যামলবাংলা স্পোর্টস : ক্রিকেট সাধারণত সব সময়ই রাজনীতির বাইরে থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু তারপরও কখনও কখনও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়তে হয়েছে ক্রিকেটকেও। যেমনটা হয়েছে ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে, তেমনটাই হতে যাচ্ছে পাকিস্তান-বাংলাদেশের সঙ্গেও।
পাকিস্তান সফরে না যাওয়া নিয়ে বিসিবি-পিসিবি (পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড) সম্পর্ক গত এক বছর ধরেই বেশ শীতল। বিপিএলে ক্রিকেটার না পাঠিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড বারবার তাদের অসন্তোষই প্রকাশ করেছে বিসিবির ওপর। ঢাকা লীগেও কোন পাকিস্তানি ক্রিকেটারকে না নিয়ে বিসিবিও তার জবাব দিয়েছে।
কিন্তু এবার নতুন করে দু’দেশের কূটনৈতিক টানাপড়েনকে কাজে লাগিয়ে ফের ক্রিকেট নিয়েই খেলতে যাচ্ছে পিসিবি। আইসিসি আর এসিসির ওপর চাপ প্রয়োগ করে পিসিবি চেষ্টা করছে আগামী এশিয়া কাপ এবং টি-২০ বিশ্বকাপ বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নিতে। এজন্য শ্রীলংকাকেও বাংলাদেশের বিকল্প ভেন্যু হিসেবে তুলে ধরতে চাচ্ছে তারা।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে পিসিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী এশিয়া কাপ এবং টি-২০ বিশ্বকাপ খেলতে বাংলাদেশে পাকিস্তান দলের আসা নির্ভর করছে পাকিস্তান সরকারের কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর। বাংলাদেশ পরিস্থিতির ওপর আমরা প্রতিনিয়তই নজর রাখছি। আমরা অপেক্ষা করছি আইসিসি এবং এসিসির সিদ্ধান্তের ওপর। কেননা তারা জানিয়েছে, জানুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশের ব্যাপারে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তখনই বোঝা যাবে টি-২০ বিশ্বকাপ বাংলাদেশে হবে, নাকি অন্য কোথাও তা সরে যাবে। পাকিস্তান যে বাংলাদেশ থেকে এই দুটি মেগা আসর ছিটকে দিতে চায় সেটা ওই কর্মকর্তা তার কথাতেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। আইসিসি কিংবা এসিসি কোনো সিদ্ধান্ত নিলেও পাকিস্তান ক্রিকেটাদের বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে আমাদেরও একটা মতামত থাকে। যদি আমরা মনে করি, পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে বাংলাদেশ পাঠানো নিরাপদ নয়, কিংবা আমাদের সরকার যদি বাংলাদেশে না যাওয়ার পরামর্শ নেয় তাহলে সেটা পিসিবিকে মানতেই হবে।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের এই কর্মকর্তার ইঙ্গিতটা বেশ পরিষ্কার। আর তাহলো ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া এশিয়া কাপ কিংবা ১৬ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া টি২০ বিশ্বকাপ নিয়ে একটা জলঘোলা করতে চায় পিসিবি। ‘আইসিসি যদি টি২০ বিশ্বকাপ বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়, তাহলে এশিয়া কাপও অবধারিতভাবে সেখান থেকে সরে আসবে। হয়তো কয়েক মাসের জন্য এশিয়া কাপ স্থগিত থাকবে। তারপর নতুন কোনো দেশে সেটা আয়োজন হবে।’ অর্থাৎ এরই মধ্যে যে বাংলাদেশ থেকে এই দুটি আসর সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। বিসিবি সূত্রের খবর, এই ব্যাপারে শ্রীলংকাকে পাশে চাইছে পাকিস্তান। তারা শ্রীলংকা বোর্ডকে এশিয়া কাপ আয়োজনের প্রস্তাবও দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে শ্রীলংকা বোর্ডের সম্পর্ক বেশ ভালো। তবে এশিয়া কাপ আয়োজনে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়ে থাকে ভারতীয় বোর্ডের মতামত। সেদিক থেকে ভারতের পূর্ণ সমর্থন থাকছে বাংলাদেশে দিকে। এর আগে ভারতই এবারের এশিয়া কাপ বাংলাদেশে আয়োজন করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিল। সেই কারণে ভারতে না হয়ে এবার এশিয়া কাপ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। ভারতীয় বোর্ড যদি বাংলাদেশে এশিয়া কাপ আয়োজনে অনড় থাকে, তাহলে হয়তো পাকিস্তানের কোন অপচেষ্টা কাজে লাগবে না এবং তাদের বাংলাদেশেই এশিয়া কাপ খেলতে আসতে হবে। কেননা এই আসর থেকে বেশ মোটা অঙ্কের একটা অর্থ পাবে পিসিবি। পাকিস্তান যে রাজনৈতিক ব্যাপারটি খেলার মাঠে নিয়ে আসতে পারে সেটা আন্দাজ করেছে বিসিবিও, সে কারণেই বিসিবি তার বন্ধুপ্রতিম বোর্ডগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।