গাইবান্ধা সংবাদদাতা : রাজনৈতিক অস্থিরতায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে রংপুর চিনিকলে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও আখ মাড়াই শুরু হয়নি। টানা অবরোধের কারণে পরিবহন সংকটে চিনিকলে প্রয়োজনীয় আখের সরবরাহ হচ্ছে না। এছাড়া নানা সংকটে কবে নাগাদ মিল চালু হবে তা এখনও অনিশ্চত। এদিকে মিলজোন এলাকার আখ চাষিরা চিনিকলে আখ সরবরাহ করতে না পেরে চরম বিপাকে পড়েছে। একদিকে যেমন জমিতে আখগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে তেমনি আখ সরবরাহ করতে না পেরে আর্থিক সংকটে তারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
জানা গেছে, মহিমাগঞ্জ, কোচারশহর, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ি, ঘোড়াঘাট বাগদা এলাকাসহ বিভিন্ন মিলজোন এলাকার আখের জমিগুলোতে এখনও আখ রয়ে গেছে। বেশির ভাগ জমির আখের ডগা ইতোমধ্যে শুকিয়ে যেতে শুরু করছে।। এছাড়া জমি থেকে ব্যাপক হারে রাতে আখ চুরি হয়ে যাচ্ছে। ফলে এবার আখ চাষ করে প্রতিটি আখ চাষিকে চরম লোকসানের সম্মুখিন হতে হবে এই আশংকায় তারা আখ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এ অবস্থায় আগামী আখ মাড়াই মৌসুমে মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকল এলাকায় আখের উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। দরিদ্র আখ চাষী সোলায়মান জানায়, তার ১ বিঘা ক্ষেতের আখ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আখের রস শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এখনও বিক্রি করলে যা ওজনে প্রায় নির্ধারিত মাপের চেয়ে অর্ধেক কমে যাবে। ফলে তিনি আখ বিক্রি করে লাভ তো দুরের কথা উৎপাদন ব্যয় ফেরত পাবেন কিনা সেটা নিয়ে তিনি চিন্তিত।
কৃষক আফাজ উদ্দিন জানান, এবছর ১০ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছে। যথাসময়ে আখ মাড়াই শুরু না হওয়ায় তার জমির আখের ওজন কমে যাচ্ছে। ক্ষেতের আখ গরু ছাগল নষ্ট করছে এবং রাতে চুরি হয়ে যাচ্ছে। ফলে তিনি উৎপাদন ব্যয়ে অর্ধেক আখ বিক্রি করে ফেরত পাবেন কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
কৃষক আবু তাহের আকন্দ জানান, দেরিতে মাড়াইয়ের ফলে তার তিন বিঘা জমিতে আখে উইপোকা ধরে নষ্ট করে ফেলছে। প্রতি বছর বিঘায় ২শ মণ ফলন হলেও এবার তার অর্ধেক ফলন হবে বলে জানান। তিনি আরো বলেন, আমরাতো রাজনীতি করিনা। দেরিতে মিল চালু হলে আমাদের ফসলের ফলন কম হয়ে লোকসানের দায়দায়িত্ব কে নেবে।
রংপুর চিনিকলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুল খালেক জানান, এবছর সাত হাজার একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। ৭০ হাজার মে.টন আখ মাড়াই লক্ষমাত্রা অর্জনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ৪ হাজার ৫শ মে.টন চিনি উৎপাদন হবে। মিলটি ৫৩ দিন চলবে। কবে নাগাদ মিল চালু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন আখ মাড়াইয়ের সকল প্রস্তুতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সম্পূর্ণ হলেও হরতাল অবরোধে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় আখ সরবরাহ বিঘিœত হওয়ায় চিনিকলে যথাসময়ে উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেই উৎপাদন শুরু হবে বলে তিনি উলেখ করেন।