তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি : অবরোধের দোহায় দিয়ে রাজশাহীর তানোরে ফের সার ও ডিজেল সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এখানকার কৃষকরা। চাষিরা আলু রোপণের সময় সার সংকটে দিশেহারা হলেও টপ ডেসিংয়ে আবারো সেই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকরা বলছেন সপ্তা’র ব্যবধানে সার না মিললে তাদের আলু ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এতে তাদের পুজি হারিয়ে পথে বসতে হবে। সরকার সার ও ডিজেল তেলের দাম বৃদ্ধি না করলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আবারো বেশি দামে তা বিক্রি করছেন। এতে করে কৃষকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও স্থানীয় প্রশাসন রয়েছেন উদাসিন।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌর এলাকার ডিজেল ও সারের দোকান ঘুরে দেখা যায়, সরকারি নিয়ম নীতিকে অপেক্ষা করে কিছূ অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সাধারণ কৃষকদের নিকট হতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বস্তা প্রতি ডিএপি সার ১০০, এমওপি সার ৮০ টাকা এবং ইউরিয়া সার ১০০ টাকা দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ভুটভুটি চালকদের কাছ থেকে প্রতি লিটার ডিজেল তেলের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে বলে ভুক্তভোগিরা অভিযোগ করেছেন। এনিয়ে উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির লোকজন জ্ঞাত হলেও অজ্ঞাত কারণে তারা ব্যবস্থায় নির্বিকার। একারণে এখানকার কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা এনিয়ে অতিসত্ত¡র প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জুরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এনিয়ে উপজেলার পাঁচন্দর ইউপি’র পাঁঠাকাটা ও চিমনা গ্রামের আলু চাষি কামরুল, কাশিম, হাবিবুর ও লুৎফর রহমান, চাঁদপুর গ্রামের আবদুল গনি ও দুবইল গ্রামের কৃষক জাইদুর রহমানসহ আরো একাধিক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, সপ্তা’র ব্যবধানে আলুতে না দেয়া হলে তাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এতে তাদের পুজি হারিয়ে পথে বসতে হবে। সরকার সার ও ডিজেল তেলের দাম বৃদ্ধি না করলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আবারো বেশি দামে তা বিক্রি করছেন। এতে করে কৃষকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও স্থানীয় প্রশাসন রয়েছেন উদাসিন।
তারা আরো জানান, শুধু আলুর মৌসুম নয় আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমে যখন সার প্রয়োগের উপযুক্ত সময় তখন ডিলাররা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অধিক মুনাফার আশায় পটাশ ও ডিএপিসহ ইউরিয়া সার ক্ষুদ্র সার ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রি করে প্রকৃত কৃষকদেরকে সার নেই বলে জানান দেন। বিসিআইসি ও বিএডিসি ডিলাররা গোপন আস্তানায় সার মজুদ করে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দাম পেলে সার বিক্রি করেন। ডিলারদের এধরণের সিন্ডিকেট তৈরির ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের হাত রয়েছে অভিযোগ ভুক্তভোগি মহলের। একারণে প্রান্তিক কৃষকদেরকে ডিলারের কাছে কাঙ্খিত সার পেতে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারা অবিলম্বে সার নিয়ে সিন্ডিকেট বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের জুরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এনিয়ে তানোর পৌরসভার তালন্দ গ্রামের কৃষক বাসারতুলা, মানিককন্যা গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান ও ভুটভুটি চালক সামাদ ও বাবু জানান, ডিজেল তেলের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা হরতাল অবরোধের দোহায় দিয়ে তাদের মত নিরীহ কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি লিটার ডিজেল তেলের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি আদায় করছে ব্যবসায়ীরা। অতিরিক্ত টাকা দিতে না চাইলে ডিজেল নাই বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। আবার কোন কোন সময় ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে তারা বাড়িতে থাকছেন। তাদের দোকান ঘরে ডিজেল থাকলেও অতিরিক্ত টাকা ছাড়া তা দিতে রাজি হচ্ছেন না। একারণে বাধ্য হয়ে তারা বেশি দামে ডিজেল কিনছেন।
এবিষয়ে তানোর পৌরসভার কালিগঞ্জ বাজারের ডিজেল তেল ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন, তালন্দ বাজারের মাইনুদ্দিন ও আবুল হোসেন বলেন, হরতাল অবরোধের কারণে তারা পেট্রোল পাম্প থেকে বেশি দামে তেল ক্রয় করছেন। একারণে তারা ডিজেলের দাম কিছুটা বেশি নিচ্ছেন। এছাড়া পরিবহণ ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিলেজের দাম বেশি নেয়া ছাড়া উপায় থাকছে না বলে তারা দাবি করেন।
এনিয়ে তানোর সদরের বিসিআইসি’র সার ডিলার প্রণব সাহা ও তালন্দ বাজারের সার ডিলার বাবুসহ কাশিম বাজার এলাকার বিএডিসির সার ডিলার আকতার আলী জানান, কৃষকের চাহিদার তুলনায় প্রত্যেক সারের বরাদ্দ কম। একারণে কৃষকদের চাহিদা মোতাবেক সার সরবরাহ করা সম্ভব ছিল না বলে বাইরে থেকে সার কিনে একটু বেশি দামে বিক্রি করেছেন তারা। তবে, ডিএপি, এমওপি (পটাশ) ইউরিয়া সার এখনও সংকট রয়েছে বলে কৃষকদের মাঝে তা সরবরাহ করতে পারছেন না। এছাড়াও হরতাল অবরোধে তারা সময় মত কৃষকদের মাঝে বরাদ্দকৃত সার সরবরাহ করতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন। একারণে কৃষকদের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে জানান তারা। এনিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসানুল কবীর কামালী বলেছেন, অবরোধ হরতাল সারের সংকট সৃষ্টি করেছে। এসব কর্মসূচি শিথিল না হলে সারের সংকট নিরশন করা সম্ভব নয়। তবে, এত সমস্যার মধ্যেও ডিলাররা কৃষকদের চাহিদা পূরণে আন্তরিক থেকে সার সরবরাহ করে বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে খতিয়ে দেখবেন। যারা অতিরিক্ত দামে সার ও ডিজেল বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।