নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি : বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আজ ৯ ডিসেম্বর, শেরপুরের নকলা মুক্ত দিবস । ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধা ১১নং সাব-সেক্টর কোম্পানী কমান্ডার আব্দুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে টু আই সি আব্দুর রসিদ এবং সিকিউরিটি অফিসার একলিম শাহ্সহ প্রায় ২শ ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা নকলাকে পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত ঘোষনা করে স্থানীয় নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হাজার হাজার মুক্তি কামী জনতা সহ স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
জানা যায়, ১৯৭১ সনের ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ১১ নং সাব-সেক্টর কোম্পানী কমান্ডার আব্দুল হক চোধুরীর নেতৃত্বে প্রায় ২ শ’ ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শেরপুরের নকলাকে পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত করার উদ্দেশ্যে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঢালু থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। ৮ ডিসেম্বর তারা নকলার রুনীগাঁও -গৌড়দ্বার এলাকায় অবস্থান করে নকলা সদরে রাজাকা-আলবদর ক্যাম্প আক্রমনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এর আগে ৬ ডিসেম্বর অন্য একদল মুক্তিযোদ্ধা নকলা রাজাকার আলবদর ক্যাম্প আক্রমন করলে পার্শ্ববতী গ্রামগুলো থেকে বদর বাহিনীরা এসে পেছন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর আক্রমন চালালে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
এরই প্রেক্ষিতে কমান্ডার আব্দুল হক চৌধুরী সঙ্গীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নকলার চারদিকের গ্রামগুলো থেকে একযোগে নকলার কেন্দ্রস্থলে রাজাকার-আলবদর ক্যাম্প আক্রমনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ৮ ডিসেম্বর বিকেলে কমান্ডার আব্দুল হক চৌধুরী জানতে পারেন লেফটেন্যান্ট তাহের তার নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে নকলা থানার পলাশকান্দি গ্রামে অবস্থান করতেছেন। সেদিন রাত ৮ টায় কমান্ডার আব্দুল হক চৌধুরীর যোগাযোগ হয় লেফটেন্যান্ট তাহেরের সাথে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাত ১০ টায় একজন মুক্তিযোদ্ধার মাধ্যমে নকলা রাজাকার-আলবদর ক্যাম্পে পত্র পাঠানো হয় তাদেরকে আত্মসমর্পন করার জন্য।
নকলা রাজাকার-আলবদর ক্যাম্পের প্রতিনিধি ও পাক হানাদার বাহিনীর দোসর নকলা থানার তৎকালীন রাজাকার ওসি মজিবর রহমান, দালাল সামসুজ্জামান, নূর মোহাম্মদ, আমজাদ হোসেন, আব্দুছ সাত্তার, বজু মিয়া, রাজাকার মান্নান, সুরুজ্জামান টলা, টগা পত্রের কোন উত্তর না দিয়ে আক্রমনের হুমকিস্বরূপ বাহকের নিকট একটি বুলেট পাঠায়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার, আলবদর এবং দালালদের উপর ভয়াবহ আক্রমন চালাতে পারে এই ভয়ে ৯ ডিসেম্বর ভোর রাতে নকলা রাজাকার-আলবদর ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়ার পথে ভোর ৬ টায় পলাশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে ওৎপেতে থাকা কমান্ডার আব্দুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ১শ’ ১৭ জন রাজাকার আলবদর আলসাম্স ও দালাল ধরা পড়ে এবং আত্মসমর্পন করে। ওই দিন সকাল ৮ টায় কমান্ডার আব্দুল হক চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট তাহের, ইপিআর ফরহাদ, আব্দুল আলীম ভূত সঙ্গীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নকলা থানা সদরে নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সমবেত হয়ে হাজার হাজার মুক্তিকামী জনতাসহ নকলাকে পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত ঘোষনা করে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।