রবিবার , ৮ ডিসেম্বর ২০১৩ | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

রক্তাক্ত জনপদ আত্রাই-রাণীনগরে জন নিরাপত্তার সু-বাতাস

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
ডিসেম্বর ৮, ২০১৩ ৮:০৮ অপরাহ্ণ
রক্তাক্ত জনপদ আত্রাই-রাণীনগরে জন নিরাপত্তার সু-বাতাস

রাণীনগর,(নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর সন্ত্রাস ও রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে খ্যাত আত্রাই-রাণীনগর উপজেলায় শান্তি, উন্নয়ন, ও নিরাপত্তার সু-বাতাস বইতে শুরু করেছে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এলাকার কৃষকসহ সর্বস্তরের মানুষের মুখে হাসি ফুটছে। ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নওগাঁ-৬ আত্রাই-রাণীনগরে সংসদ সদস্য মোঃ ইসরাফিল আলম এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার নির্বাচনী অঙ্গীকার মোতাবেক আইন শৃংখলা রক্ষায় অব্যাহত প্রচেষ্টা, পুলিশ ও র‌্যাবের জোরালো তৎপরতা, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী ও তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসীরা পর্যায়ক্রমে গ্রেফতার হলেও পুলিশ এবং র‌্যাবের সাঁড়াশী অভিযানে চরমপন্থী জেএমবিসহ সর্বপ্রকার বে-আইনে সন্ত্রাসী বাহিনীরা এই জনপদ থেকে বিতারিত হয়ে গা ঢাকা দেওয়ায় জেলার এই দু’টি উপজেলায় আইন শৃংখলা চিত্র পাল্টাতে শুরু করে।
বিগত তিন যুগ ধরে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, নরহত্যা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, হানাহানি, মিথ্যা, মামলা, দখলবাজী, রক্তপাত, খুন জখম, ও আতংকিত পরিবেশের পরিবর্তনের মাধ্যমে আত্রাই-রাণীনগর উপজেলায় আইনশৃংখলা অভুত উন্নয়নের এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত ৫ বছরে সর্বস্তরের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, ব্যক্তি স্বাধীনতা সু-নিশ্চিত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে একটিও মায়ের কোল খালি হয়নি, কোন বোন বিধবা হয়নি, সন্তান এতিম হয়নি, হয়নি কোন পিতা পুত্রহারা। যার ফলে এলাকাবাসিরা নিরাপদে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে আনন্দ বোধ করছে। পুলিশ ও র‌্যাবের সাথে তথা কথিত বন্দুক যুদ্ধে অন্তত ১৫ চরমপন্থি নিহত হয়েছে। যুগ যুগ ধরে এই জনপদে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনীর দাপটে জনগণ অতিষ্ট হলেও তারা আরো বেপরোয়া হয়ে তাদের অস্ত্র ভান্ডারের শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে মানুষের কাছে চাঁদাবাজিসহ নানা দাবিতে প্রকাশ্যে দিবালোকে, জনসম্মুখে মানুষকে জবাই করে হত্যা করতো। দীর্ঘ সময় চিহৃত সন্ত্রাসীরা গোপনে তাদের তৎপরতা চালালেও অভ্যান্তরীন গ্র“পিংয়ের কারণে পক্ষে-বিপক্ষে অস্ত্রের শক্তির বৃদ্ধির লক্ষে মহড়া থাকলেও তারা প্রকাশ্যে ১৯৯৮ সালের ৩ মার্চ আত্রাই উপজেলার যুবলীগ নেতা লাল মোহাম্মদ লালুকে নৃশংস ভাবে জবাই করে হত্যার মধ্য দিয়ে নওগাঁর আত্রাই-রাণীনগর উপজেলায় জবাই করে হত্যার রাজনীতি শুরু হলে এই দুই উপজেলার রাজনৈতিক নেতারা তাদের উপর ভর করে রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালাতে শুরু করে। তবে তারা বেশি দিন এই সন্ত্রাসী নির্ভরশীল রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারেনি। কেননা এক সময় গিয়ে রাজনৈতিকবীদরাই তাদের মুল টার্গেটে পরিণত হয়। শুরু হয় অস্ত্রের ঝঞ্ঝনী আর অজানা আতংক। একই বছর ২১ মে আত্রাইয়ে কৃষকলীগ নেতা গোলাম নবী, ১০ ডিসেম্বর আওয়ামীলীগ নেতা ও মুনিয়ারী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুল লতিফ মেম্বার, ১৯৯৯ সালে ৩০ মার্চ চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের শিকার হন আত্রাই উপজেলার আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডঃ সিদ্দিকুর রহমান রাজা ও শ্রমিকলীগের আহবায়ক অরুন সরকারকে চরমপন্থীরা গুলি ও জবাই করে হত্যা করে। ২০০০ সালে ১৯ জুন রাণীনগর উপজেলার ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম নজু, ২০০১ সালের ১৫ মার্চ রাণীনগর উপজেলার আওয়ামীলীগ নেতা মজিবর রহমান ওরফে কানা মজিবর, ২০০২ সালের ১০ জানুয়ারি আত্রাই উপজেলার সিংসাড়া গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা মজিবর রহমান , ২২ মে আত্রাই উপজেলার যুবলীগ নেতা ভুট্টু প্রাং, ২০০৩ সালের ১২ ফেব্র“য়ারি ঈদের রাতে আত্রাই উপজেলার মদনডাঙ্গা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন, ৩ এপ্রিল আত্রাই উপজেলার ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সালামত হোসেন ওরফে সুবাস চৌধুরী, ২৪ এপ্রিল ভোর রাতে আত্রাই উপজেলার নৈদীঘি গ্রাম ঘিরে চারটি পরিবারের মধ্যে মুনিয়ারি ইউপির নব-নির্বাচিত মেম্বার ও বিএনপি নেতা শুকবর আলীসহ তার ভাই বিএনপি নেতা আব্দুল জব্বার, বিএনপি নেতা মোজাম্মেল হোসেন, ও তার ছোট ভাই বিএনপি নেতা ইকবাল হোসেন বিদ্যুৎ, বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর ও শাজাহানসহ ছয় জনকে, গুলি ও জবাই করে হত্যা করা হয়। ২১ জুন রাণীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাণীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন মাষ্টার, ২২ সেপ্টেম্বর আত্রাই উপজেলার যুবদল নেতা ও ঠিকাদার আইনুল হক ভুট্টু ২০০৪ সালের ১২ জানুয়ারি রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা আফজাল হোসেনকে গুলি ও জবাই করে হত্যা করা হয়। একই বছরের ২৬ এপ্রিল ভৌঁপাড়া গ্রামের ফরিদুল ইসলাম কালুকে জেএমবি ক্যাডাররা পিটিয়ে, ২৭ এপ্রিল আত্রাইয়ে কাশিয়া বাড়ি গ্রামের স্বপনকে জেএমবি ক্যাডাররা পিটিয়ে, ৬ মে আত্রাইয়ের জামগ্রাম গ্রামের জেএমবির ক্যাডার জিল­ুর রহমান ও আব্দুল মজিদকে জবাই করে, ১৭ মে রাণীনগর উপজেলার সরিয়া গ্রামের জেএমবি ক্যাডার নজরুল ইসলাম ও আঃ রশিদকে, জবাই করে, ২০ মে রাণীনগর উপজেলার সিম্বা গ্রামের খেজুর আলী ও আব্দুল কাইউম বাদশাকে অপহরণের পর জেএমবি ক্যাডাররা খেজুরের লাশ টুকরো টুকরো করে মাটিতে পুঁতে রাখাসহ বাদশাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনে মৃত্যু হলে লাশ উল্টো করে গাছে লটকিয়ে রাখা হয়। ২৭ মে আত্রাই উপজেলার কাশিয়াবাড়ি গ্রামের দ্বিপঙ্করকে পিটিয়ে, ১৪ নভেম্বর রাণীনগরে জেএমবি ক্যডাররা কালিগ্রাম ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি জিয়াউল হক জিয়াকে মধ্যযুগীয় কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ ২০০৬ সালের ২১ মে রাণীনগর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের জেএমবি ক্যাডার আরিফ শেখকে গুলি ও জবাই করে হত্যা করে চরমপন্থীরা ।
দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর চরমপন্থী ও জেএমবি অধ্যুষিত এই অঞ্চলের কৃষকরা গত ৫ বছর ধরে তাদের জমিতে রোপিত ফসলের কোন প্রকার চাঁদা না দিয়ে বিনা বাধায় তাদের  প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমির ধান কেটে গোলায় তুলছে । চরমপন্থী ও জেএমবি ক্যাডারদের হুমকীর মুখে গ্রাম ছাড়া অনেক পরিবার আবারো  ফিরছে নিজ নিজ বাড়িঘরে। এই দু’টি উপজেলার কৃষকসহ সর্বস্তরের মানুষকে তাদের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে নিজ জমিতে ধান চাষ করতে আন্ডারওয়াল্ডের স্বশস্ত্র ক্যাডারদের মোটাা অংকের চাঁদা দিতে হতো। চরমপন্থীদের হুমকীর মুখে অনেকে নিজের জমির দখল ছেড়ে দিয়ে আত্মগোপন করতে হয়েছে এমনও ঘটনা ঘটেছে এই জনপদে। রাণীনগর-আত্রাই দু’টি উপজেলায় ১ টি পুলিশ ক্যাম্প ও আত্রাই উপজেলায় র‌্যাব ক্যাম্প স্থাপন, প্রতি সপ্তাহে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের থানায় হাজিরাা দেওয়ার মাধ্যমে রাণীনগর-আত্রাই উপজেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি উন্নতির কারণে এই এলাকায় সর্ব স্তরের মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর। এছাড়া র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব আত্রাই রাণীনগরে বিশেষ টহল ব্যবস্থা জোরদার করার কারণে এই দু’টি উপজেলার মানুষ এখন অনেক রাত পর্যন্ত সাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারছে বলে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে।
আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ খান জানান, পুলিশ পারেনা এমন কাজ নেই। তবে থাকতে হবে মানুষের সদিচ্ছা ও সার্বিক সহযোগীতা। স্থানীয় সংসদ সদস্য মো ইসরাফিল আলম এমপির সন্ত্রাস বিরোধী কঠোর নির্দেশনা ও জনগণের যথাযথ সমন্বয় থাকার কারণে খুব অল্প সময়ে এই জনপদকে জেএমবি- চরমপন্থী সন্ত্রাসীদেরকে দমন করতে সহজ হয়েছে।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

error: কপি হবে না!