সোমবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : ছাতকে অবরোধ ও হরতাল চলাকালে রিক্সার বাতাস ছাড়াকে কেন্দ্র করে আ’লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ৪জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে শতাধিক ফাঁকা গুলি, ১৫রাউন্ড টিআরসেল নিক্ষেপ করে। বিক্ষোব্ধ আ’লীগ কর্মীরা বাস ষ্ট্যান্ডস্থ বিএনপির কার্যালয় ভাংচুরসহ আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনের একাধিক বিল বোর্ড ভাংচুর করে আ’লীগ নেতাকর্মীরা। এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে অবরোধকারীরা ১০-১২টি ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়েছে। রবিবারের এ ঘটনায় সোমবার ছাতক-দোয়ারায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। শহরে বিজিবি ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে বাস ষ্ট্যান্ডস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কোর্ট রোড এলাকা দিয়ে যুবলীগ নেতা শাহীন চৌধুরী রিক্সাযোগে যাওয়ার সময় অবরোধকারীরা তার রিক্সার গতিরোধ করে চাকার বাতাস ছেড়ে দিলে অবরোধকারীদের সাথে যুবলীগ কর্মীর বাক-বিতন্ডা হয়। এ ঘটনার জের ধরে সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন সমর্থিত বিএনপি ও পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী সমর্থিত আ’লীগের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে ও আ’লীগ এসএ চৌধুরী শপিং কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান নেয়। দুপুর ২টার দিকে আ’লীগের নেতাকর্মীরা সশস্ত্র মিছিল বের করে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে গেলে উভয়পক্ষ তুমুল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয়পক্ষ ইটপাটকেল, পেপসির বোতল ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। উভয়পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় মুহুর্তের মধ্যে গোটা এলাকা রনক্ষেত্রে পরিনত হয়। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, পৌর শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতংক। এক পর্যায়ে ধাওয়া খেয়ে বিএনপি বাগবাড়ি গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়লে বিক্ষোব্ধ আ’লীগ কর্মীরা বিএনপির কার্যালয়, বিলবোর্ড ভাংচুর করে। এ সময় কার্যালয়ের আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয় আ’লীগকর্মীরা। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রন করে। সংঘর্ষে গুরুতর আহত মাসুদুল ইসলাম (১৯), মামুনুর রশিদ (৪০), রবি (২০), রিয়াদ চৌধুরী (২২) কে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঞ্জু মিয়া (২৭), মাহির চৌধুরী (২০), ফজলে রাব্বি জনি (২৫), কামরুল আহমদ (২০), কার্জন আহমদ (১৭), বাবলা দাস (২৪), ওবায়দুর (১৯), মাছুম মিয়া (২৪), সেবুল (১৮), অমিত (১৬), ফয়জুল আহমদ পাবেল (২৫), আব্দুল মুনিম মামনুন (২৬), সালাহ উদ্দিন সুমেল (২২), সায়েম আলম (৩০), আব্দুলাহ সনি (২০), সানি (১৮), ঝুমন (২২), খোকন (২৩), মোস্তাক আহমদ (৪০), আরিফ বিলাহ (২৫), রাহেল (২২)সহ অন্যান্য আহতদের ছাতক হাসপাতালে ও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ভাংচুরকৃত দলীয় কার্যালয় পরিদর্শনে এসে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন সোমবার ছাতক-দোয়ারায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঘোষনা করেন। তিনি জানান, পরিকল্পিতভাবে আ’লীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা ও অফিস ভাংচুর করে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে শতাধিক রাউন্ড গুলি ও টিআরসেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে অন্তত ৪০জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এক পর্যায়ে পুলিশের রাইফেল নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে বলে তিনি দাবী করেন। এদিকে পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী জানান, পূর্ব নির্ধারিত হরতাল বিরোধী শান্তিপূর্ন মিছিলে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিনা উস্কানিতে হামলা চালিয়ে দলীয় ১০জন নেতাকর্মীকে আহত করে। প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করেছে বিএনপি নামধারী সন্ত্রাসীরা। এক পর্যায়ে আওয়ামী নেতাকর্মীদের ধাওয়ার মুখে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এ ব্যাপারে ছাতক থানার ওসি শাহজালাল মুন্সি ফাঁকা গুলি ও টিআরসেল নিক্ষেপের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কত রাউন্ড গুলি ও টিআরসেল নিক্ষেপ করা হয়েছে তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছেনা।