শাহ আলম বাবুল : নির্বাচন এলেই দেশের প্রতি জনগণের প্রতি দরদের শেষ থাকে না এদেশের নেতা নেতৃদের । একটিদল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করছে আরেকটি দল দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করতে মরিয়া। সকল দলই জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধ পরিকর। গণতন্ত্রে ভোটের মূল্য সর্বাধিক হয়তো তাই। আর এসব এ সময়েই হবে এটাই হযতো স্বাভাবিক। কিন্তু গণতন্ত্র কি ? কেউ হয়তো বলবেন গণতন্ত্র বুঝে না এমন লোক এদেশে নেই। ঠিক তাই, এখন যারা গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিচ্ছেন অথবা যারা গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন তাদের শেখানো তন্ত্রই যদি গণতন্ত্র হয় তাহলে তো কথাই নেই। কারণ নেতা-নেত্রীর মূখের কথাই তার কর্মীদের পালনীয় একমাত্র কর্তব্য। এটা কি গণতন্ত্র নাকি অন্য কিছু। প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন গ্রীসে নগর রাষ্ট্রের উদ্ভব। আর তখন থেকেই এর শাসনকর্তা নিয়ে শুরু হয় নানা মতভেদ। সময়ের আর্বতে রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতন্ত্র একটি সমাদৃত পদ্ধতি। জনগণের ক্ষমতাদ্বারা পরিচালিত শাসন ব্যবস্থা যার মধ্যে সামাজিক, রাজনৈতিক, ও অর্থনৈতিক সাম্যের আদর্শের ভিত্তি বর্তমান।
গণতন্ত্রের মূলভিত্তি জনগণ আর জনগণের স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে এ ব্যবস্থায় এটাই মূল কথা। কিন্তু হাল আমলে আমরা কি দেখছি ? যে শাসন ব্যবস্থার মূল জনগণ আজ সেই জনগনই পদে পদে লাঞ্চিত, বঞ্চিত, অবহেলিত , অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন আর হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। জনগনের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে বলেই গণতন্ত্র একটি শক্তিশালী শাসন ব্যবস্থার জন্মদিতে সক্ষম। জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয় বলেই জনপ্রতিনিধিরা স্বেচ্চাচারী হতে পারেন না। এই উত্তম একটি শাসন ব্যবস্থার মধ্যে বাস করেও আজ আমরা কোথায় ? এ বিষয়টি একটি বারের জন্য হলেও আমাদের রাজনীতিবিদরা ভাববেন আশা করি।
স¤প্রতি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দোষ কার ? এমন একটি প্রশ্নের উত্তর খুজতেই আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে মতক্যৈর শেষ নেই। আসলে দোষ কারোরই না। দোষ এদেশের হতভাগা জনগণের। দোষ আমাদের তকদীরের।
১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এদেশের তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিল নির্দিষ্ট কিছুর ইস্যুর উপর। আর ৭৫ পরবর্তী ৯১ পর্যন্ত এদেশের শাসক শ্রেনী জনগণের রায়ের প্রতি তেমন কোন সম্মান প্রদর্শন করেননি বলেই মূখ থুবড়ে পড়ে ছিল গণতন্ত্র।
অবশেষে স্বৈরতন্ত্রের অবসানের মাধ্যমে ৯১ এর নির্বাচনে গণমানুষের জয় সুনিশ্চিত হয় পূনরোদ্ধার হয় গণতন্ত্র। আপসোস দীর্ঘ দুই যুগ পার হয়ে গেলেও এদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রুপ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থই হয়েছেন। রাজনীতিবিদদের দলীয় সংকীর্ণ মনোবৃত্তি, দৃষ্টিভঙ্গি ও দুরদর্শীতার অভাবে তা আজ ব্যর্থতায় পর্যবসিত।
সকল দলের সকল নেতা-কর্মীরাই জনগণ নিয়ে ভাবছেন,আবার সেই জনগণকেই নৃসংশভাবে হত্যা-খুন করছেন, পুড়িয়ে মারছেন। আশচর্য সেলুকাস কি বিচিত্র এ দেশ।
একোন গণতন্ত্রের শিক্ষা ?
ভবিষ্যৎ নাগরিকদের যোগ্য করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নেতা-নেতৃদের দরদের সীমা নেই। যদিও বাংলাদেশের নেতা-নেতৃদের ছেলে মেয়েরা এদেশের প্রচলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কতজন পড়ে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। দিনের পর দিন পরীক্ষা পেছানো হচ্ছে।অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এখন যখন বছরের পরীক্ষা বছরেই শেষ হচ্ছিল ঠিক সেই সময আবার সেই অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার পথে। এটাই কি ৯১ এর সফলতার ফল নাকি অন্য কিছু। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দিনের পর দিন বন্দ থাকছে। ক্লাশ বিরতি হচ্ছে অহরহ। যাদের রক্ত দিয়ে কেনা এ গণতন্ত্র তাদের সন্তানদের কথা একটি বারের জন্যও ভাবেন কি আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা ?
যাদের আমরা ভোট দিয়ে ক্ষমতায় পাঠাই তারা আসলে আমাদের নিকট কতটা দায়বদ্ধ ? তাহলে যে গণতন্ত্রের পিঠ থেকে রক্তের দাগ এখনো মুছে যায়নি তা কি রক্তাক্তই থেকে যাবে ?
কেউ কেউ এদেশের পরিস্থিতির আলোকে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কাও প্রকাশ করেন। একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে লেবানন, শ্রীলঙ্কা, ইসরাইল প্রভৃতি দেশ সমূহে ওই আশঙ্কিত গৃহ যুদ্ধের কারণেই গণতন্ত্র হুমকীর সম্মুখীন।
আর যাই বলা হোক না কেন জনগণকে তাদের অধিকার সম্পর্কে জানাতে হবে, গণতন্ত্র কি তাও তাদের ভালোভাবে বুঝাতে হবে, সুকৌশলে তাদের অধিকার বঞ্চিত করার মতো কাজটি থেকে সর্বোপরি বিরত থাকতে হবে রাজনীতিবিদদেরই । নচেৎ এ অবস্থা চলতে থাকলে গণতন্ত্র অচিরেই মূখ লুকাবে।